ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রবক্তা কে?
A
প্লেটো
B
এরিস্টটল
C
মন্টেস্কু
D
রুশো
উত্তরের বিবরণ
মন্টেস্কু ছিলেন একজন ফরাসি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ, যিনি আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রে ক্ষমতা এক হাতে কেন্দ্রীভূত হলে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে স্বৈরাচারে পরিণত হয়।
তাই তিনি ক্ষমতার বিভাজন বা স্বতন্ত্রীকরণের ধারণা দেন, যা আজকের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত।
তার এই ধারণাকে ব্যাখ্যা করা যায় নিম্নলিখিতভাবে—
ক্ষমতা বিভাজনের মূল ধারণা: মন্টেস্কু যুক্তি দেন যে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে তিনটি শাখায় ভাগ করতে হবে— আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ ও বিচার। এই তিনটি শাখা স্বাধীনভাবে কাজ করলে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব।
তিনটি শাখার ব্যাখ্যা:
-
বিধানিক ক্ষমতা (Legislative): আইন তৈরি করার ক্ষমতা।
-
কার্যনির্বাহী ক্ষমতা (Executive): আইন কার্যকর করার ক্ষমতা।
-
বিচারিক ক্ষমতা (Judiciary): আইন ভঙ্গের বিচার করার ক্ষমতা।
ভারসাম্য ও পরস্পর নিয়ন্ত্রণ: মন্টেস্কু বলেছিলেন, প্রতিটি শাখা যেন অন্য শাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখে। এই নীতিকে বলা হয় Check and Balance।
‘The Spirit of the Laws’ গ্রন্থ: ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Spirit of the Laws”–এ তিনি প্রথম এই নীতিটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। এটি পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সংবিধান রচনায় গভীর প্রভাব ফেলে।
গণতন্ত্রে প্রভাব: মন্টেস্কুর এই তত্ত্বের ফলে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। যেমন—
-
সংসদ আইন প্রণয়ন করে,
-
সরকার আইন বাস্তবায়ন করে,
-
আদালত বিচারকার্য সম্পন্ন করে।
নীতির প্রয়োজনীয়তা: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান এককভাবে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারে না।
আজকের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা: বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে এই নীতির অনুসরণ করা হয়। যেমন—বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তিনটি শাখা স্বাধীনভাবে কাজ করে, তবে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, মন্টেস্কুর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি আধুনিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এটি শুধু শাসনব্যবস্থাকে ভারসাম্যপূর্ণ করে না, বরং নাগরিকের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।

0
Updated: 2 days ago