পল অ্যান্থনি স্যামুয়েলসন ছিলেন এমন একজন অর্থনীতিবিদ যিনি আধুনিক অর্থনীতিকে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করেন। তার গবেষণা অর্থনীতিকে শুধু তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং বাস্তব জীবনের প্রয়োগযোগ্যতায় রূপ দিয়েছে।
-
জন্ম ও শিক্ষা: পল স্যামুয়েলসন ১৯১৫ সালের ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
-
কর্মজীবন: তিনি দীর্ঘদিন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT)-তে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি অর্থনীতিকে গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার নতুন ধারা সূচনা করেন।
-
প্রধান অবদান:
১. তিনি “Foundations of Economic Analysis” নামে একটি বই লেখেন, যা অর্থনীতির গাণিতিক ভিত্তি স্থাপনে পথপ্রদর্শক ছিল।
২. তার “Economics: An Introductory Analysis” বইটি বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. তিনি অর্থনীতিতে গাণিতিক মডেল ও সমীকরণের ব্যবহার জনপ্রিয় করেন, যা আধুনিক অর্থনীতির গবেষণায় আজও অপরিহার্য।
৪. তার কাজের মাধ্যমে মাইক্রোইকোনমিক্স ও ম্যাক্রোইকোনমিক্সের সমন্বয় সম্ভব হয়েছিল। -
নোবেল পুরস্কার: ১৯৭০ সালে পল স্যামুয়েলসন ছিলেন অর্থনীতিতে প্রথম মার্কিন নোবেল বিজয়ী। তার অবদানকে “অর্থনৈতিক তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্থাপন” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
-
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: তিনি কেইনসীয় অর্থনীতি ও নিও-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে “নিও-ক্লাসিক্যাল সিনথেসিস” নামে একটি ধারণা প্রবর্তন করেন। এই ধারণা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণে নতুন পথ দেখায়।
-
প্রভাব ও উত্তরাধিকার: তার চিন্তাধারা আধুনিক অর্থনীতি, নীতি নির্ধারণ, বাজেট পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। স্যামুয়েলসনের কাজের ফলে অর্থনীতি আজ একটি পরিমাণগত ও বিশ্লেষণভিত্তিক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
-
মৃত্যু: তিনি ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, পল স্যামুয়েলসনই আধুনিক অর্থনীতির জনক, কারণ তিনি অর্থনৈতিক তত্ত্বকে বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ, গণিত ও বাস্তব প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত করে আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছেন।