"মানুষ হও এবং মরে বাঁচ।" - এটি কার উক্তি?
A
প্লেটো
B
হেগেল
C
জি.ই. ম্যূর
D
রাসেল
উত্তরের বিবরণ
হেগেল ছিলেন এক যুগান্তকারী জার্মান দার্শনিক যার দর্শন মানুষের আত্ম-দর্শন ও সামগ্রিক বাস্তবতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক খুঁজে বের করে। তাঁর মতে জগৎ কোনো বিচ্ছিন্ন বস্তু নয়, বরং এক পরম সত্তার ধারাবাহিক প্রকাশ — আর এই প্রকাশের চূড়ান্ত ও সবচেয়ে জ্ঞানসম্পন্ন রূপ হলো মানুষের আত্ম-সচেতনতা।
হেগেলের চিন্তায় ব্যক্তি শুধুই আলাদা অস্তিত্ব নয়; সে সেই সামগ্রিক whole-এর অংশ, যা ধীরেধীরে নিজেকে উপলব্ধি করে, বদলে এবং পরিপক্ক হয়ে ওঠে। নিচে মূল ভাবনাগুলো সংক্ষেপে দেওয়া হলো:
-
জগত এক অভিন্ন প্রকাশ: সব বস্তু ও ঘটনা এক পরম সত্যের (absolute) বহিঃপ্রকাশ; সময়ের সঙ্গে তা বিবর্তিত হয় এবং ক্রমে নিজেকে ধাপে ধাপে প্রকাশিত করে।
-
আত্ম-সচেতনতার লক্ষ্য: পরম সত্তার সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটলে আত্ম-সচেতনতা জন্ম নেয়—এটাই মানুষের মৌলিক লক্ষ্য। মানুষের মধ্যে পরম সত্তার গুণ যত বেশি প্রকাশ পায়, সে তত বেশি বাস্তবায়িত ও পরিপূর্ণ ব্যক্তি হয়।
-
মনের গঠন: ত্রিফল ধারাবাহিকতা: চিন্তা একটি ধারাবাহিক সংঘর্ষ — কোনো মত (thesis) গড়ে ওঠে, তা বাতিল হয়ে বিপরীত মত (antithesis) আসে এবং তাদের সমন্বয়ে নতুন একটি সংকটমুক্ত মত (synthesis) তৈরি হয়। এই দ্বান্দ্বিক পর্যায়ে মন ধীরে ধীরে পরিপক্বতা অর্জন করে।
-
সম্পূর্ণতার ধারণা: কোনো বস্তু বা ব্যক্তি আলাদা-স্বনির্ভর নয়; সবকিছুই পরস্পর সংযুক্ত। পৃথকত্ব সত্ত্বেও অংশগুলো সমগ্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
-
ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতা: মানুষের ব্যক্তিত্ব শুধুমাত্র স্বতন্ত্রত্ব নয়—এটি নৈতিক ও বৌদ্ধিক সচেতনতার ফল। মানুষ নিজ অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে, অন্যকে কেবল প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং প্রয়োজন হলে আত্মত্যাগও করতে পারে।
-
“বাঁচার জন্য মরো” ধারা: প্রবৃত্ত, কামনা ও সংজ্ঞাবদ্ধ জীববৃত্তি দমন না করলে উচ্চতর আত্মচেতনাত্মক জীবন আসে না। নিজের নিম্ন প্রবৃত্তিকে 'মরিয়ে' বৌদ্ধিক ও নৈতিক জীবন অর্জন করাই প্রকৃত স্বাধীনতা ও পরিপূর্ণ জীবনের পথ।
উপরের ভাবনা হেগেলের কাজ, বিশেষত The Phenomenology of Spirit—এ স্বতন্ত্রভাবে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত। এখানে ব্যক্তিত্ব, আত্মবোধ ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে একটি সার্বিক দার্শনিক তত্ত্ব গড়া আছে, যা মানুষের আত্মউন্নয়নকে জীবনের সংজ্ঞা হিসেবে দেখায়।

0
Updated: 20 hours ago
“দর্শন হচ্ছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী এক অনধিকৃত প্রদেশ।" - উক্তিটি কে করেছেন?
Created: 20 hours ago
A
আর. বি. পেরি
B
প্লেটো
C
সি. ডি. ব্রড
D
বার্ট্রান্ড রাসেল
দর্শনকে বোঝার ক্ষেত্রে বার্ট্রান্ড রাসেল এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। তার মতে, দর্শন এমন এক জ্ঞানভূমি যা ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে, যেখানে মানুষের চিরন্তন প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়।
এই প্রশ্নগুলোর অনেকগুলোরই উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না, আবার ধর্মতত্ত্বও সেগুলিকে যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়। তাই দর্শনই সেই ক্ষেত্র যেখানে মানুষ চিন্তা ও যুক্তির মাধ্যমে সত্যের সন্ধান করে।
রাসেল ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ ও সমাজ সমালোচক। তিনি শান্তি, মানবতা ও স্বাধীন চিন্তার এক উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে তার লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য। রাসেলের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
তার মতে, মানুষের মনে এমন কিছু প্রশ্ন জাগে, যেমন—জীবনের অর্থ কী, সত্য কী, নৈতিকতার ভিত্তি কোথায়—যেগুলোর কোনো সরল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই এবং ধর্মতত্ত্বও সেগুলিকে নির্ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। তাই তিনি মনে করেন, দর্শন হলো সেই ‘No Man’s Land’—যেখানে ধর্ম ও বিজ্ঞান কেউই সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, কিন্তু যেখানে চিন্তার মুক্ততা সর্বাধিক।
রাসেলের চিন্তাধারায় দর্শন কেবল তত্ত্ব নয়, বরং মানবজীবনের বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রও। তিনি মনে করতেন, দর্শনের কাজ হলো মানুষকে চিন্তাশীল, মুক্তমন ও যুক্তিনিষ্ঠ করে তোলা।
তার রচিত উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হলো—
-
The Elements of Ethics
-
Human Society in Ethics and Politics
-
Power: A New Social Analysis
-
Political Ideals
-
Introduction to Mathematical Philosophy
এইসব গ্রন্থে রাসেল মানবজীবনের নৈতিকতা, সমাজব্যবস্থা ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। তার দর্শন আজও যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তা ও মানবতার প্রতি আস্থার এক চিরন্তন দিশা হয়ে আছে।

0
Updated: 20 hours ago