শ্রীমদ্ভগবতগীতার কোন অধ্যায়কে গীতার সার অধ্যায় বলে কর্ণনা করা হয়েছে?
A
সাংখ্যযোগকে
B
পুরুষোত্তমযোগকে
C
ভক্তি যোগকে
D
বিজ্ঞানযোগকে
উত্তরের বিবরণ
শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায় “সাংখ্যযোগ” গীতার মূল দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। এটি ৭২টি শ্লোক নিয়ে গঠিত এবং গীতার সারাংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এখানেই কৃষ্ণ প্রথমবার অর্জুনকে জীবনের, কর্মের ও জ্ঞানের প্রকৃত অর্থ শিক্ষা দেন। প্রথম অধ্যায় “অর্জুন বিষাদযোগ” কেবল প্রেক্ষাপট তৈরি করলেও দ্বিতীয় অধ্যায় থেকেই শুরু হয় গীতার উপদেশধারা।
১. আত্মার অমরত্ব ও তত্ত্বজ্ঞান
-
কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন — “ন জায়তে মৃয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা वा ন ভূয়ঃ।” (গীতা ২.২০)
-
এর অর্থ, আত্মা চিরন্তন ও অবিনশ্বর, সে জন্ম নেয় না, মরে না।
-
এই ধারণা গীতার মূল তত্ত্ব— আত্মার অমরত্ব ও চেতনার অখণ্ডতা।
২. কর্মের প্রয়োজন ও কর্তব্যবোধ
-
কৃষ্ণ বলেন — “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (গীতা ২.৪৭)
-
এখানে বলা হয়েছে, মানুষের কর্তব্য হলো কর্ম করা, কিন্তু ফলের প্রতি আসক্তি ত্যাগ করা উচিত।
-
এই শ্লোক কর্মযোগের ভিত্তি, যেখানে নিঃস্বার্থ কর্মের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
৩. স্থিতপ্রজ্ঞ যোগের শিক্ষা
-
এই অধ্যায়ে “স্থিতপ্রজ্ঞ” মানুষের আদর্শ উপস্থাপন করা হয়েছে।
-
যিনি আনন্দ–দুঃখে সমবৃত্ত, আকাঙ্ক্ষামুক্ত ও স্থিরচিত্ত, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী।
-
এটি আধ্যাত্মিক জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য— সমত্ব ও সংযমের অবস্থান।
৪. পরবর্তী অধ্যায়গুলোর ভিত্তি
-
গীতার পরবর্তী অধ্যায়গুলো যেমন জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ—সবই দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিক্ষার বিস্তার।
-
আচার্যদের মতে, “দ্বিতীয় অধ্যায় গীতার মূলসূত্র, বাকিগুলো তার বিশ্লেষণ।”
৫. আচার্য ও পণ্ডিতদের মতামত
-
আদি শঙ্করাচার্য: “দ্বিতীয় অধ্যায়েই সমগ্র গীতার তত্ত্ব নিহিত।”
-
বাল গঙ্গাধর তিলক: “সাংখ্যযোগ অধ্যায় গীতার মর্মকথা প্রকাশ করেছে।”
-
স্বামী বিবেকানন্দ: “দ্বিতীয় অধ্যায় গীতার সারাংশ—এখানে আত্মা, কর্ম ও সমত্বের শিক্ষা একত্রে মেলে।”
সব মিলিয়ে, শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায় ‘সাংখ্যযোগ’-কেই গীতার সার অধ্যায় বলা হয়, কারণ এতে আত্মা, কর্ম, জ্ঞান ও সমত্ব—এই চারটি মৌলিক তত্ত্ব সংক্ষেপে প্রকাশ পেয়েছে, যা গীতার সমগ্র দর্শনের ভিত্তি।
সঠিক উত্তর: ক) সাংখ্যযোগকে — গীতার সার অধ্যায় বলে কর্ণনা করা হয়েছে।

0
Updated: 1 day ago
অশ্বঘোষ কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন?
Created: 1 day ago
A
হিন্দুধর্ম
B
জৈনধর্ম
C
বৌদ্ধধর্ম
D
মানবধর্ম
অশ্বঘোষ ছিলেন প্রাচীন ভারতের এক বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও দার্শনিক, যিনি সাহিত্য ও দর্শনের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখার আদর্শ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচনাগুলো বৌদ্ধ চিন্তা, নীতি ও আধ্যাত্মিক আদর্শের কাব্যময় প্রকাশ।
মূল তথ্যসমূহ:
-
পরিচয়: প্রাচীন ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা বৌদ্ধ কবি ও চিন্তাবিদ।
-
ধর্মীয় পরিচয়: বৌদ্ধধর্মের অনুসারী এবং মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রধান প্রচারক।
-
প্রধান রচনা:
-
“বুদ্ধচরিত” — বুদ্ধের জীবনীমূলক মহাকাব্য, যেখানে তাঁর জীবন, ত্যাগ ও জ্ঞানপ্রাপ্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
-
“সৌন্দরানন্দ” — নন্দ ও সুন্দরীর কাহিনির মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্মিক শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে।
-
“সারিপুত্রপ্রকরন” — বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম শিষ্য সারিপুত্রকে কেন্দ্র করে রচিত দার্শনিক গ্রন্থ।
-
-
সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য: তাঁর রচনায় কাব্যরস, দর্শন ও নীতিবোধের সংমিশ্রণ দেখা যায়, যা ধর্মীয় আদর্শকে সহজ ও হৃদয়গ্রাহীভাবে প্রকাশ করেছে।
-
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: অশ্বঘোষের সাহিত্যকর্ম বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ও দার্শনিক ভাবনার বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

0
Updated: 1 day ago
"ব্রহ্মসত্য জগৎ মিথ্যা" এই শিক্ষা কোন দর্শনে উল্লেখ আছে?
Created: 1 day ago
A
জৈন দর্শনে
B
ভারতীয় দর্শনে
C
বৌদ্ধদর্শনে
D
চার্বাক দর্শনে
এই উক্তিটি আদি শংকরাচার্যের অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের কেন্দ্রীয় তত্ত্ব, যা উপনিষদসমূহের মূল ভাবকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মই একমাত্র চিরন্তন সত্য, জগৎ পরিবর্তনশীল ও মায়াময়, আর জীবাত্মা ও পরমাত্মা মূলত অভিন্ন।
-
ব্রহ্ম সত্য: ব্রহ্ম মানে সর্বব্যাপী, চিরন্তন ও অপরিবর্তনশীল চৈতন্য। এটি কখনও পরিবর্তিত হয় না এবং সর্বত্র বিরাজমান।
-
জগৎ মিথ্যা: “মিথ্যা” অর্থ এখানে অস্তিত্বহীন নয়, বরং অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল। জগৎ মায়ার দ্বারা আচ্ছাদিত, তাই এটি পরম সত্য নয়।
-
জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ: ব্যক্তি আত্মা ও পরমাত্মা একই — তাদের মধ্যে কোনো প্রকৃত ভেদ নেই। এটাই অদ্বৈত (দ্বৈত নয়) ভাবের মূল।
-
উপনিষদীয় সূত্র: বৃহদারণ্যক উপনিষদে “অহম্ ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম), ছান্দোগ্যে “তত্ত্বমসি” (তুই সেই ব্রহ্ম), ও মাণ্ডূক্যে জগৎকে মায়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
-
শংকরভাষ্য ব্যাখ্যা: “যা পরিবর্তনশীল, তা মিথ্যা; যা অপরিবর্তনশীল, তা সত্য — সেই সত্য ব্রহ্ম।”
-
অন্যান্য দর্শনের পার্থক্য:
-
চার্বাক: শুধু ইহজগৎ সত্য, ব্রহ্ম বা পরলোক অস্বীকার।
-
বৌদ্ধ: অনিত্যতা ও অনাত্মবাদে বিশ্বাস, ব্রহ্মধারণা অনুপস্থিত।
-
জৈন: বহু বাস্তবতার স্বীকৃতি, আংশিকভাবে ভিন্ন।
-
অদ্বৈত বেদান্ত: ব্রহ্ম একমাত্র সত্য — এখানেই উক্তিটির উৎপত্তি।
-
-
উপসংহার: এই তত্ত্ব মুক্তির ধারণা ব্যাখ্যা করে — যখন মানুষ আত্মা ও ব্রহ্মের ঐক্য উপলব্ধি করে, তখনই সে পরম জ্ঞান ও মুক্তি লাভ করে।

0
Updated: 1 day ago
ভাসের লেখা নাটকের সংখ্যা কয়টি?
Created: 1 day ago
A
৫ টি
B
১৫ টি
C
১৩ টি
D
১০ টি
ভাস ছিলেন ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ সংস্কৃত নাট্যকার, যিনি কালিদাসেরও পূর্ববর্তী যুগে সাহিত্যসাধনা করেছিলেন। তাঁর রচনাগুলি প্রাচীন ভারতীয় নাট্যসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
-
ভাসের সময়কাল প্রায় খ্রিস্টীয় ২য়–৩য় শতক।
-
কালিদাস নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি ভাসসহ প্রাচীন কবিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন— “ভাস, সৌমিল, কৌটিল্যাদি পুরাতন কবিদের পদাঙ্কে আমি চলেছি” (মালবিকাগ্নিমিত্রম, ভূমিকা অংশে)।
-
বহুদিন ভাসের নাটকগুলো হারিয়ে গিয়েছিল, তবে কেরালার পণ্ডিত টি. গণপতিশাস্ত্রী ১৯১২–১৯১৫ সালের মধ্যে ত্রিবাঙ্কুরের এক পান্ডুলিপি থেকে ভাসের ১৩টি নাটক উদ্ধার করেন।
-
এর মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, ভাসের রচিত নাটকের সংখ্যা ১৩টি।
ভাসের ১৩টি নাটক ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
-
প্রতিজ্ঞা যৗগন্ধরায়ণম্ — যৌগন্ধরায়ণের প্রতিজ্ঞা ও উদার নীতির কাহিনি
-
স্বপ্নবাসবদত্তম্ — উদয়ন ও বাসবদত্তার প্রেমগাথা
-
পাঞ্চরাত্রম্ — উদয়ন–বাসবদত্তা–সুশ্রুভার কাহিনি
-
দূতঘটোত্কচম্ — মহাভারতের ঘটোত্কচ ও কৃষ্ণসংক্রান্ত নাটক
-
দূতবাক্যম্ — কৃষ্ণের কৌরব সভায় দূতরূপে যাত্রা
-
উরুভঙ্গম্ — দুরু্যোধনের উরু ভাঙার কাহিনি
-
কর্ণভারম্ — কর্ণের দানশীলতার চিত্রণ
-
অবিমারক (অভিমারক) — রোমান্টিক প্রেমকাহিনি
-
বালচরিতম্ — কৃষ্ণের শৈশবজীবনের কাহিনি
-
দারিদ্রচরিতম্ — মানবজীবনের দারিদ্র্যচিত্র
-
মাধ্যম্যবয়নম্ — মধ্যমবীর নায়কের কাহিনি
-
অভিমারক (Abhimāraka) — রাজকুমার–রাজকন্যার প্রেমগাথা
-
প্রতিমা নাটকম্ — রামায়ণ অবলম্বনে রচিত নাটক
কিছু গবেষকের মতে, দারিদ্রচরিতম্ ও মাধ্যম্যবয়নম্ সম্ভবত ভাসের রচনা নয়, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এগুলোকেও তাঁর নামে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে।
ভাসের নাটকের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
-
সংক্ষিপ্ত অথচ নাটকীয় উপস্থাপনা— ঘটনা বিন্যাস দ্রুত ও সংলাপ শক্তিশালী।
-
মানবিক আবেগের গভীর প্রকাশ— করুণা, প্রেম, ত্যাগ ও বীরত্বের মিশ্রণ।
-
সাহিত্যিক উদ্ভাবনশক্তি— রামায়ণ ও মহাভারতের পরিচিত কাহিনিতে নতুন ব্যাখ্যা।
-
নাট্যরূপের পূর্বসূরী ভূমিকা— পরবর্তী নাট্যকার যেমন কালিদাস ও ভট্টনারায়ণ ভাসের নাটক থেকে প্রভাবিত হন।
এইভাবে ভাস সংস্কৃত নাট্যধারার ভিত্তি স্থাপন করেন, যা ভারতীয় নাট্যকলার বিকাশে এক যুগান্তকারী অবদান হিসেবে চিহ্নিত।

0
Updated: 1 day ago