"ব্রহ্মসত্য জগৎ মিথ্যা" এই শিক্ষা কোন দর্শনে উল্লেখ আছে?
A
জৈন দর্শনে
B
ভারতীয় দর্শনে
C
বৌদ্ধদর্শনে
D
চার্বাক দর্শনে
উত্তরের বিবরণ
এই উক্তিটি আদি শংকরাচার্যের অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের কেন্দ্রীয় তত্ত্ব, যা উপনিষদসমূহের মূল ভাবকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মই একমাত্র চিরন্তন সত্য, জগৎ পরিবর্তনশীল ও মায়াময়, আর জীবাত্মা ও পরমাত্মা মূলত অভিন্ন।
-
ব্রহ্ম সত্য: ব্রহ্ম মানে সর্বব্যাপী, চিরন্তন ও অপরিবর্তনশীল চৈতন্য। এটি কখনও পরিবর্তিত হয় না এবং সর্বত্র বিরাজমান।
-
জগৎ মিথ্যা: “মিথ্যা” অর্থ এখানে অস্তিত্বহীন নয়, বরং অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল। জগৎ মায়ার দ্বারা আচ্ছাদিত, তাই এটি পরম সত্য নয়।
-
জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ: ব্যক্তি আত্মা ও পরমাত্মা একই — তাদের মধ্যে কোনো প্রকৃত ভেদ নেই। এটাই অদ্বৈত (দ্বৈত নয়) ভাবের মূল।
-
উপনিষদীয় সূত্র: বৃহদারণ্যক উপনিষদে “অহম্ ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম), ছান্দোগ্যে “তত্ত্বমসি” (তুই সেই ব্রহ্ম), ও মাণ্ডূক্যে জগৎকে মায়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
-
শংকরভাষ্য ব্যাখ্যা: “যা পরিবর্তনশীল, তা মিথ্যা; যা অপরিবর্তনশীল, তা সত্য — সেই সত্য ব্রহ্ম।”
-
অন্যান্য দর্শনের পার্থক্য:
-
চার্বাক: শুধু ইহজগৎ সত্য, ব্রহ্ম বা পরলোক অস্বীকার।
-
বৌদ্ধ: অনিত্যতা ও অনাত্মবাদে বিশ্বাস, ব্রহ্মধারণা অনুপস্থিত।
-
জৈন: বহু বাস্তবতার স্বীকৃতি, আংশিকভাবে ভিন্ন।
-
অদ্বৈত বেদান্ত: ব্রহ্ম একমাত্র সত্য — এখানেই উক্তিটির উৎপত্তি।
-
-
উপসংহার: এই তত্ত্ব মুক্তির ধারণা ব্যাখ্যা করে — যখন মানুষ আত্মা ও ব্রহ্মের ঐক্য উপলব্ধি করে, তখনই সে পরম জ্ঞান ও মুক্তি লাভ করে।

0
Updated: 1 day ago
বাল্মিকী কাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন?
Created: 1 day ago
A
ক্রৌঞ্চকে
B
ঋষিকে
C
ব্যাধকে
D
সীতাকে
বাল্মিকী রামায়ণে উল্লেখ আছে যে এক ব্যাধ বা হরিণশিকারী অন্যায়ভাবে বাল্মিকীর আশ্রমে প্রবেশ করে সৎ ও শান্ত বনবাসীদের বিরক্ত করেছিল। তার এই নিষ্ঠুর আচরণে মহর্ষি বাল্মিকী গভীরভাবে ব্যথিত হন এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তাকে অভিশাপ দেন।
১. ঘটনার প্রেক্ষাপট: ব্যাধটি শিকার করতে করতে বাল্মিকীর আশ্রমে আসে এবং নিরপরাধ প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে।
২. বাল্মিকীর প্রতিক্রিয়া: ধার্মিক ও ঋষিসুলভ চরিত্রের অধিকারী বাল্মিকী এই অমানবিক কাজ দেখে ক্রোধান্বিত হন এবং ধর্মরক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যাধকে অভিশাপ প্রদান করেন।
৩. অভিশাপের ফলাফল: বাল্মিকীর অভিশাপের প্রভাবে ব্যাধ পরবর্তীতে শিকার করার সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত বা কঠোর কষ্টভোগে নিপতিত হয়।
৪. ধর্মীয় তাৎপর্য: এই অভিশাপ অন্যায় ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং ধর্ম ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার প্রতীক।
৫. মূল ভাবার্থ: বাল্মিকীর অভিশাপ প্রতিশোধ নয়, বরং নৈতিকতার শিক্ষাদান—যে, অন্যায়ের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী এবং ধর্মের পথই সর্বোচ্চ।

0
Updated: 1 day ago
'অভিজ্ঞানশকুন্তলম্' নাটকটি কত অঙ্কে রচিত?
Created: 1 day ago
A
৭টি
B
৬টি
C
৫টি
D
৪টি
সংস্কৃত সাহিত্যজগতে “অভিজ্ঞানশকুন্তলম্” হলো মহাকবি কালিদাস রচিত এক অনন্য নাট্যকাব্য, যা ভারতীয় নাট্যসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। এই নাটকটি সপ্ত অঙ্কে (৭ অঙ্কে) বিভক্ত এবং প্রতিটি অঙ্কে কাহিনির ধাপে ধাপে বিকাশ ঘটেছে, যেখানে প্রেম, বেদনা ও পুনর্মিলনের মিশ্রণ এক গভীর আবেগ সৃষ্টি করেছে।
১. প্রথম অঙ্ক: শকুন্তলার শৈশব ও তপোবনে তার নির্জন জীবনচিত্র।
২. দ্বিতীয় অঙ্ক: রাজা দুষ্যন্ত ও শকুন্তলার প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রেমজাগরণ।
৩. তৃতীয় অঙ্ক: দুষ্যন্তের রাজ্যে প্রত্যাবর্তন ও বিচ্ছেদের সূচনা।
৪. চতুর্থ অঙ্ক: শকুন্তলার অভিশাপপ্রাপ্তি ও দুষ্যন্তের রাজমুদ্রা হারানো।
৫. পঞ্চম অঙ্ক: শকুন্তলার দুঃখ, অনুতাপ ও দিব্য আশীর্বাদের প্রতীক্ষা।
৬. ষষ্ঠ অঙ্ক: রাজপ্রাসাদে পুনর্মিলনের পূর্বাভাস এবং সত্য উন্মোচন।
৭. সপ্তম অঙ্ক: দুষ্যন্ত ও শকুন্তলার পুনর্মিলন এবং নাটকের সমাপ্তি।
নাটকটি তার রূপক, সংলাপ ও আবেগপ্রবণ বর্ণনা-এর জন্য বিশ্বসাহিত্যে অমর হয়ে আছে। এর অঙ্কবিন্যাস ও নাট্যগঠন ভারতীয় নাট্যরীতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
সঠিক উত্তর: ক) ৭টি

0
Updated: 1 day ago
অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকে প্রধান ঘটনা ধরা হয় কোনটাকে?
Created: 1 day ago
A
হস্তী বৃত্তান্ত
B
দুর্বাসা মুনির অভিশাপ
C
দুষ্যন্ত-শকুন্তলার মিলন
D
পতিগৃহে যাত্রা
‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ মহাকবি কালিদাসের এক অমর নাটক, যা দুষ্যন্ত ও শকুন্তলার প্রেমকাহিনিকে কেন্দ্র করে রচিত। নাটকের মূল রহস্য গড়ে উঠেছে দুর্বাসা মুনির অভিশাপকে ঘিরে, যা কাহিনির গতি ও আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে।
১. নাটকের পরিচয়: এটি কালিদাসের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রচনা, যার বিষয়বস্তু মহাভারতের আদিপর্ব থেকে গৃহীত। “অভিজ্ঞান” মানে পরিচয়ের চিহ্ন বা স্মারক, আর “শকুন্তলম” মানে শকুন্তলার কাহিনি। দুইয়ের মিলনে নামের অর্থ দাঁড়ায় “পরিচয়ের মাধ্যমে শকুন্তলার কাহিনি”।
২. মূল ঘটনার কেন্দ্র: শকুন্তলা আশ্রমে বসে রাজা দুষ্যন্তের স্মৃতিতে নিমগ্ন থাকায় দুর্বাসা মুনিকে অভ্যর্থনা জানাতে ভুলে যান। এতে ক্রোধান্ধ মুনি অভিশাপ দেন—“যাকে তুমি মনে করছ, সে তোমাকে চিনবে না।” পরে আশ্রমবাসীদের অনুরোধে তিনি বলেন, কোনো পরিচয়ের চিহ্ন দেখালে অভিশাপের প্রভাব কেটে যাবে। এই অভিশাপের কারণেই রাজা দুষ্যন্ত শকুন্তলাকে ভুলে যান, যা কাহিনির প্রধান সংকট সৃষ্টি করে।
৩. এই ঘটনাই কেন প্রধান:
-
অভিশাপের পূর্বে কাহিনি সুখময় ছিল—প্রেম, বিবাহ ও প্রতিশ্রুতি সবই স্বাভাবিক।
-
অভিশাপের পর থেকেই কাহিনিতে বেদনা, বিচ্ছেদ ও সংকটের সূচনা হয়।
-
রাজা দুষ্যন্তের ভুলে যাওয়া নাটকের মূল দ্বন্দ্ব বা ক্লাইম্যাক্স তৈরি করে।
-
শেষ অঙ্কে অঙ্গুরীয় ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে অভিশাপ মুক্তি ও পুনর্মিলন ঘটে।
-
অভিশাপ, অভিজ্ঞান ও স্মরণের ধারাবাহিকতাই নাটকের গঠনকাঠামোর ভিত্তি।
৪. পাঠ্যপ্রমাণ ও রেফারেন্স:
-
অভিজ্ঞান শকুন্তলম, তৃতীয় অঙ্কে উল্লেখ আছে—“দুর্বাসা ঋষির অভিশাপেন রাজা দুষ্যন্তঃ শকুন্তলাং ন প্রজ্ঞাতি।”
-
মহাভারত এর আদিপর্বেও একই ঘটনাবিন্যাস পাওয়া যায়, তবে কালিদাস কাব্যিকভাবে রূপান্তরিত করেছেন।
-
আচার্য কুনালাল দত্ত লিখেছেন—“The curse of sage Durvasa is the pivotal point of the drama; without it, the recognition motif (‘abhijñāna’) would lose its significance.”
৫. উপসংহার: দুর্বাসা মুনির অভিশাপের ফলেই ভুলে যাওয়া, বিভ্রান্তি ও শেষমেশ পুনর্মিলনের পরিণতি তৈরি হয়। তাই এই ঘটনাই নাটকের মূল ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ও turning point।

0
Updated: 1 day ago