'সামাজিক বৈষম্যের মূলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি'-কে বলেছেন?
A
স্পেন্সার
B
ওয়েভার
C
ম্যাক্র
D
রুশো
উত্তরের বিবরণ
“সামাজিক বৈষম্যের মূলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি”—এই উক্তিটি কার্ল মার্কস (Karl Marx, 1818–1883)-এর সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার মূল ভিত্তিকে প্রতিফলিত করে। মার্কস বিশ্বাস করতেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তির সৃষ্টি থেকেই সমাজে শোষণ, বৈষম্য ও শ্রেণী বিভাজন শুরু হয়েছে।
মূল ব্যাখ্যাগুলো হলো—
১। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও বৈষম্য: মার্কসের মতে, যখন উৎপাদনের উপকরণ—যেমন জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি—কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হলো, তখন সমাজে মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর বিভাজন সৃষ্টি হয়। এই মালিক শ্রেণি উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে উদ্বৃত্ত মূল্য (Surplus Value) আত্মসাৎ করে।
২। শোষণ ও শ্রেণী ব্যবস্থা: ব্যক্তিগত সম্পত্তির এই ব্যবস্থা শ্রমিক শ্রেণিকে (Proletariat) অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও নির্ভরশীল করে তোলে, আর মালিক শ্রেণি (Bourgeoisie) ধীরে ধীরে ক্ষমতা ও সম্পদের অধিকারী হয়। এর ফলে সমাজে আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
৩। শ্রেণীসংঘাত (Class Conflict): এই বৈষম্য থেকে উদ্ভূত হয় শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে শ্রেণীসংঘাত, যা মার্কসের মতে সমাজ পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রতিটি যুগই এক শ্রেণীর অন্য শ্রেণীর ওপর আধিপত্য ও সংগ্রামের ইতিহাস।
৪। সমাধান – শ্রেণীহীন সমাজ: মার্কস বিশ্বাস করতেন, সমাজে প্রকৃত ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপ করতে হবে এবং উৎপাদনের উপকরণের ওপর সামষ্টিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমেই গড়ে উঠবে শ্রেণীহীন ও শোষণহীন সমাজ।
সুতরাং, মার্কসের মতে, ব্যক্তিগত সম্পত্তিই সামাজিক বৈষম্যের মূল কারণ, এবং এই ব্যবস্থার অবসান ঘটানোই প্রকৃত সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়।

0
Updated: 1 day ago
'আদর্শবাদী,আদর্শ ভিত্তিক এবং ইন্ডীয়গ্রাহ্য' এই ৩টির চক্রাকার আবর্তনে সমাজ পরিবর্তন হয়'-কার উক্তি?
Created: 1 day ago
A
সরোকিন
B
টয়েনবি
C
চ্যাপিন
D
প্যারোটো
পিতিরিম এ. সোরোকিন সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা চক্রবৃত্তীয় সামাজিক পরিবর্তন তত্ত্ব (Cyclic Theory of Social Change) নামে পরিচিত। তাঁর মতে, সমাজে পরিবর্তন সরলরেখায় ঘটে না; বরং এটি একধরনের চক্রাকার প্রক্রিয়া, যেখানে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।
তত্ত্বের মূল বিষয়গুলো হলো—
১। চক্রবৃত্তীয় প্রকৃতি (Cyclic Nature): সমাজ ও সংস্কৃতি কখনও একদিকে অগ্রসর হয়ে স্থায়ী থাকে না। বরং তা এক ধরণের উত্থান-পতনের চক্রে ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ, সামাজিক পরিবর্তন সরলরেখায় (Linear) নয়, বরং চক্রাকারভাবে (Cyclical) ঘটে।
২। সংস্কৃতির তিনটি মানসিক রূপ (Three Types of Cultural Mentality):
-
Ideational (আদর্শবাদী): এই ধরণের সংস্কৃতিতে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রাধান্য পায়। বাস্তবতা এখানে ঈশ্বর, আত্মা ও নৈতিক আদর্শ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
-
Sensate (ইন্দ্রিয়নির্ভর): এই পর্যায়ে সমাজ বস্তুবাদী ও ভোগবাদী হয়ে ওঠে। ইন্দ্রিয়সুখ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুগত উন্নয়ন এখানে মূল মূল্যবোধ হিসেবে দেখা যায়।
-
Idealistic বা Mixed (মিশ্র): এই ধাপে আদর্শবাদী ও ইন্দ্রিয়নির্ভর মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটে। সমাজ একদিকে নৈতিক আদর্শকে ধরে রাখে, অন্যদিকে বাস্তব ও বস্তুগত উন্নয়নেও গুরুত্ব দেয়।
৩। চক্রাকার পরিবর্তনের ধারা (Cyclical Shift): সমাজ ও সংস্কৃতি এই তিন রূপে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়—
Ideational → Idealistic → Sensate → আবার Ideational। এইভাবে এক পর্যায় শেষ হলে অন্যটি শুরু হয়, এবং সমাজ তার মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্গঠন করে।
সুতরাং, সোরোকিনের মতে, সামাজিক পরিবর্তন কখনো স্থায়ী নয়; বরং এটি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারাবাহিক ওঠানামার এক অনন্ত চক্র, যা মানব সভ্যতার বিকাশকে নিরন্তর গতিশীল রাখে।

0
Updated: 1 day ago
'সম্পত্তি হচ্ছে চুরি'- উক্তিটি কার?
Created: 1 day ago
A
ম্যাক্র
B
ওয়েভার
C
মর্গান
D
রুশো
“Property is theft” উক্তিটি মূলত ফরাসি দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক পিয়ের-জোসেফ প্রুধোঁ (Pierre-Joseph Proudhon, 1809–1865)-এর। তিনি এই উক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবস্থার সমালোচনা করেন এবং বলেন, সম্পত্তি মূলত শ্রমজীবী মানুষের শোষণের ফল।
তবে যদি প্রদত্ত বিকল্পগুলোর মধ্যে কার্ল মার্কস (Karl Marx) থাকেন, তাহলে তাঁকেই বেছে নেওয়া যৌক্তিক। কারণ যদিও মার্কস সরাসরি এই উক্তিটি করেননি, তবুও তাঁর উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব (Theory of Surplus Value) অনুযায়ী, পুঁজিপতি বা মালিকরা শ্রমিকদের শ্রমের প্রকৃত মূল্য না দিয়ে উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করেন, অর্থাৎ শ্রমিকদের শ্রমের একটি অংশ “চুরি” করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রুধোঁর “Property is theft” ধারণাটি মার্কসের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
অতএব, সঠিক ঐতিহাসিক উক্তিটি প্রুধোঁর হলেও, মার্কসের তত্ত্বগত ব্যাখ্যা একই ধারণাকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

0
Updated: 1 day ago
ব্যক্তির মর্যাদা বর্তমানের তুলনায় উর্ধ্ব হলে তাকে কোন গতিশীলতা বলে?
Created: 1 day ago
A
ঊর্ধ্বগামী
B
উল্লম্বী
C
আনুভূমিক
D
সমান্তরাল
যখন কোনো ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান বা মর্যাদা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়, তখন সমাজবিজ্ঞানে একে বলা হয় ঊর্ধ্ব সামাজিক গতিশীলতা (Upward Social Mobility)। এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি ইতিবাচক রূপ, যেখানে ব্যক্তি শিক্ষা, পেশা বা অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে সমাজে উচ্চতর অবস্থানে পৌঁছায়।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। সামাজিক গতিশীলতা (Social Mobility):
-
সমাজে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে সামাজিক গতিশীলতা বলা হয়।
-
এটি সমাজের উন্মুক্ততা, পরিবর্তন ও অগ্রগতির সূচক।
২। প্রধান দুই প্রকার:
-
আনুভূমিক সামাজিক গতিশীলতা (Horizontal Mobility): কোনো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু অবস্থান বা পেশা পরিবর্তিত হয়। যেমন—একজন শিক্ষক অন্য স্কুলে বদলি হওয়া।
-
উল্লম্বী সামাজিক গতিশীলতা (Vertical Mobility): সামাজিক মর্যাদায় পরিবর্তন ঘটে। এটি দুইভাবে হতে পারে—
-
ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতা (Upward Mobility): সামাজিক অবস্থান উন্নত হয়, যেমন—একজন শ্রমিক কর্মকর্তা হওয়া।
-
নিম্নমুখী গতিশীলতা (Downward Mobility): সামাজিক মর্যাদা কমে যায়, যেমন—একজন ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে সাধারণ শ্রমিক হওয়া।
-
৩। সঠিক উত্তর:
-
প্রশ্নে বলা হয়েছে, ব্যক্তির মর্যাদা “বর্তমানের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে”, তাই এটি উল্লম্বী সামাজিক গতিশীলতার ঊর্ধ্বমুখী রূপ (Upward Vertical Mobility)।
অতএব, সমাজবিজ্ঞানে যখন কোনো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সেটিকে ঊর্ধ্ব সামাজিক গতিশীলতা বলা হয়, যা সমাজে অগ্রগতি ও সাফল্যের প্রতীক।

0
Updated: 1 day ago