ভারতে মুসলিম জাগরনের অগ্রদূত কে ছিলেন?
A
স্যার সৈয়দ আহমদ
B
স্যার সলিমুল্লাহ
C
মাওলানা আবদুল কালাম আজাদ
D
নওয়াব আবদুল গনি
উত্তরের বিবরণ
ভারতে মুসলিম সমাজের আধুনিক জাগরণের পথিকৃৎ ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান (Sir Syed Ahmad Khan, 1817–1898)। তিনি মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার বিস্তার ঘটিয়ে একটি নতুন সমাজচেতনার সূচনা করেন। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে শিক্ষাগত ও সামাজিক পুনর্জাগরণের সূচনা ঘটে।
মূল তথ্যগুলো হলো—
১। আলীগড় আন্দোলনের সূচনা: স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৭৫ সালে আলীগড় আন্দোলন (Aligarh Movement) শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করা এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা: তাঁর উদ্যোগে ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মোহাম্মদান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ (Mohammedan Anglo-Oriental College), যা পরবর্তীতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (Aligarh Muslim University) নামে বিকশিত হয়।
৩। আধুনিক শিক্ষা ও যুক্তিবাদ: তিনি মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যাতে মুসলিম সমাজ আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
৪। সামাজিক প্রভাব: আলীগড় আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কার ও আত্মচেতনার বিকাশ ঘটায় এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংগঠন গঠনে (যেমন মুসলিম লীগ) প্রভাব ফেলে।
৫। ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই আন্দোলনের ফলে মুসলমান সমাজে আধুনিকীকরণ, জাতীয় চেতনা ও আত্মনির্ভরতা-এর ধারণা শক্তিশালী হয়, যা পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করে।
সুতরাং, স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও তাঁর আলীগড় আন্দোলনই ছিল ভারতে মুসলিম জাগরণের মূল চালিকা শক্তি, যা মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষা ও চিন্তার ধারায় যুক্ত করে নতুন যুগের সূচনা করেছিল।

0
Updated: 1 day ago
'শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি'-কে বলেছেন?
Created: 2 days ago
A
মার্ক্স
B
ওয়েভার
C
মর্গান
D
মার্টন
“শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি” — এই উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে কার্ল মার্ক্স (Karl Marx)-এর শ্রেণী তত্ত্বের (Class Theory) মূল ভিত্তিকে প্রকাশ করে। মার্ক্স সমাজকে অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করেন এবং বলেন যে, মানুষের সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয় তার উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা দ্বারা।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। শ্রেণীভিত্তিক সমাজ:
-
মার্ক্স সমাজকে শ্রেণীভিত্তিক হিসেবে দেখেছেন, যেখানে শ্রেণী নির্ধারিত হয় অর্থনৈতিক সম্পদের মালিকানা ও উৎপাদনের উপকরণে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে।
২। বুর্জোয়া শ্রেণী (Bourgeoisie):
-
এরা হলো উৎপাদনের উপকরণের মালিক, যেমন—কারখানা, জমি, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি।
-
এই শ্রেণী শ্রমিকদের শ্রম কিনে মুনাফা অর্জন করে।
৩। প্রলেতারিয়েট শ্রেণী (Proletariat):
-
এরা হলো শ্রমজীবী শ্রেণী, যাদের নিজের কোনো সম্পদ বা উৎপাদনের উপকরণ নেই।
-
তারা জীবিকার জন্য তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করে এবং মজুরি পায়।
৪। শ্রেণী দ্বন্দ্ব (Class Conflict):
-
এই দুই শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্ব সমাজের পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
-
বুর্জোয়া শ্রেণী সম্পদ ও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, আর প্রলেতারিয়েট শ্রেণী মুক্তি ও সমতা চায়।
৫। চূড়ান্ত লক্ষ্য:
-
মার্ক্সের মতে, শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে পুঁজিবাদ ভেঙে শ্রেণীহীন সমাজ (Classless Society) প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে উৎপাদনের উপকরণ হবে সমষ্টিগত মালিকানায়।
অতএব, মার্ক্সের মতে সমাজে শ্রেণী বিভাজনের মূল কারণ হলো সম্পত্তি ও উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা, এবং সমাজের ইতিহাস আসলে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।

0
Updated: 2 days ago
ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব গঠনে বুদ্ধিবৃত্তির কয়টি উপাদানের কথা বলেছেন?
Created: 1 day ago
A
৩টি
B
৪টি
C
৫টি
D
২টি
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে মানুষের মনের ভেতরের গঠন বা কাঠামোকে তিনটি প্রধান উপাদানে বিভক্ত করেছেন। এই তত্ত্বটি Structure of Personality নামে পরিচিত, যা মানুষের আচরণ, চিন্তা ও আবেগের পিছনের মানসিক প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা করে।
মূল উপাদানগুলো হলো—
১। ইড (Id): এটি ব্যক্তিত্বের প্রাথমিক ও অবচেতন অংশ, যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদা, ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি বাস করে। জন্মের সময় থেকেই এটি উপস্থিত থাকে এবং এটি আনন্দ নীতি (Pleasure Principle) অনুসারে কাজ করে—অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টি চায়, বাস্তবতা বা নৈতিকতা বিবেচনা করে না।
২। ইগো (Ego): এটি ব্যক্তিত্বের যুক্তিবাদী ও বাস্তবতা-নির্ভর অংশ, যা ইড-এর প্রবৃত্তি ও বাইরের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি বাস্তব নীতি (Reality Principle) অনুসারে কাজ করে এবং ব্যক্তি যেন সমাজে গ্রহণযোগ্যভাবে নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারে, সেই সমন্বয় ঘটায়।
৩। সুপারইগ (Superego): এটি ব্যক্তিত্বের নৈতিক ও আদর্শিক দিক, যা সমাজ, সংস্কৃতি ও পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়। এটি ঠিক-ভুল, নৈতিকতা ও আদর্শের মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং ব্যক্তির বিবেক হিসেবে কাজ করে।
সারসংক্ষেপে, ইড চায় তাত্ক্ষণিক আনন্দ, ইগো কাজ করে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, আর সুপারইগ নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিকতার ভিত্তিতে। এই তিনটি উপাদানের ভারসাম্যই একজন ব্যক্তির আচরণ ও ব্যক্তিত্বের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।

0
Updated: 1 day ago
ভারতীয় সমাজে মানুষের মর্যাদার ভিত্তি কি ছিল?
Created: 3 days ago
A
জাতিবর্ণ প্রথা
B
সম্পত্তি
C
ধর্ম
D
প্রতিপত্তি
ভারতীয় সমাজে মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান নির্ধারিত হতো জাতিবর্ণ প্রথার (Caste System) মাধ্যমে, যা ছিল একটি কঠোরভাবে স্তরভিত্তিক সামাজিক কাঠামো। এই প্রথা জন্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো এবং সামাজিক চলাচল বা অবস্থান পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব ছিল।
-
ব্রাহ্মণ: সমাজে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী শ্রেণি। তারা ধর্মীয় আচার, শিক্ষা ও পুরোহিতবৃত্তিতে নিয়োজিত থাকতেন। জ্ঞান ও ধর্মচর্চার কারণে সমাজে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল।
-
ক্ষত্রিয়: এই শ্রেণি ছিল রাজা, সৈনিক ও শাসকবর্গের প্রতিনিধি। তাদের মূল দায়িত্ব ছিল সমাজ রক্ষা, শাসন ও যুদ্ধ পরিচালনা। মর্যাদায় তারা ব্রাহ্মণদের নিচে অবস্থান করতেন।
-
বৈশ্য: তারা ছিল ব্যবসায়ী, কৃষক ও কারিগর শ্রেণি। সমাজে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সামাজিক মর্যাদায় ক্ষত্রিয়দের চেয়ে নিচে ছিলেন।
-
শূদ্র: এই শ্রেণির মানুষ অন্য বর্ণের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। সমাজে তাদের মর্যাদা ছিল নিম্ন এবং বহু সামাজিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত ছিলেন।
-
অস্পৃশ্য বা অন্ত্যজ শ্রেণি: সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরে অবস্থান করত। তাদের “অস্পৃশ্য” বলে গণ্য করা হতো, এবং তারা সামাজিক মেলামেশা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও জনজীবনের বহু ক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত থাকত।
এইভাবে দেখা যায়, ভারতীয় সমাজে জাতিবর্ণ প্রথাই মানুষের মর্যাদা, অধিকার ও সামাজিক অবস্থানের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।

0
Updated: 3 days ago