ইংরেজ শাসনামলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৃষ্টিতে কোন বিষয়টি ভূমিকা রেখেছিল?
A
ফারসি ভাষা
B
উর্দু ভাষা
C
হিন্দি ভাষা
D
ইংরেজী ভাষা
উত্তরের বিবরণ
ইংরেজ শাসনামলে বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোয় একটি বড় পরিবর্তন আসে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব। এই শ্রেণির সৃষ্টি মূলত ইংরেজি ভাষার প্রবর্তন ও আধুনিক শিক্ষার বিস্তার-এর ফল। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজে এক নতুন বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী শ্রেণির জন্ম দেয়, যারা দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মূল বিষয়গুলো হলো—
১। আধুনিক শিক্ষার প্রবর্তন: ব্রিটিশরা প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে। এর ফলে স্থানীয় জনগণ ইউরোপীয় জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা পায় এবং সমাজে শিক্ষিত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
২। ইংরেজি ভাষার ভূমিকা: ইংরেজি ভাষা কেবল শিক্ষার মাধ্যমই নয়, বরং এটি ছিল সরকারি চাকরি ও আধুনিক পেশায় প্রবেশের চাবিকাঠি। ফলে যারা ইংরেজি শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছিল, তারা সমাজে বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা লাভ করে।
৩। নতুন পেশার বিকাশ: এই শিক্ষিত শ্রেণি ধীরে ধীরে প্রশাসন, আইন, শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো পেশায় যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে তারা একটি নতুন পেশাভিত্তিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি গঠন করে।
৪। সামাজিক পরিবর্তন: এই শ্রেণি ছিল আধুনিক চিন্তাধারার বাহক। তারা জাতীয়তাবাদ, সংস্কার আন্দোলন ও সামাজিক পুনর্জাগরণে নেতৃত্ব দেয়, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সারসংক্ষেপে, ইংরেজি ভাষা ও আধুনিক শিক্ষার বিস্তার ব্রিটিশ আমলে শুধু প্রশাসনিক প্রয়োজনে নয়, বরং একটি নতুন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজগোষ্ঠী গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, যা আধুনিক বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় তৈরি করে।

0
Updated: 1 day ago
সামাজিক স্তরবিন্যাস কত প্রকার?
Created: 1 day ago
A
৪
B
৩
C
২
D
৬
সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্পদের পার্থক্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিভাজনকে বোঝায়। এই বিভাজন সমাজের গঠন ও সামাজিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। ইতিহাসে ও বর্তমান সমাজে এই স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।
প্রধান চার প্রকার সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো—
১। দাস প্রথা: এটি মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম স্তরবিন্যাস ব্যবস্থা। এতে মানুষকে অন্যের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো এবং দাসদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না। তারা মালিকের জন্য বিনা মজুরিতে কাজ করত।
২। এস্টেট প্রথা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রচলিত এই ব্যবস্থায় সমাজকে রাজন্য, ধর্মযাজক ও সাধারণ মানুষ—এই তিন ভাগে ভাগ করা হতো। প্রতিটি শ্রেণির নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য ছিল, যা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতো।
৩। বর্ণ প্রথা: এটি মূলত ভারতীয় সমাজে প্রচলিত ছিল। জন্ম ও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণে ভাগ করা হতো। সামাজিক গতিশীলতা এখানে প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
৪। শ্রেণী বা মর্যাদা গ্রুপ: আধুনিক সমাজে এই ধরনের স্তরবিন্যাস দেখা যায়। এখানে জন্ম নয়, বরং আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, পেশা ও সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়।
এইভাবে সমাজের বিভিন্ন প্রকার স্তরবিন্যাস সমাজের গঠন, সামাজিক বৈষম্য ও ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 1 day ago
কোন সমাজ বিজ্ঞানী সামাজিক প্রপঞ্চ ও ঘটনাবলী বিশ্লেষণ আরোহ পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন?
Created: 3 days ago
A
স্পেন্সার
B
ডুর্খীম
C
ফ্রয়েড
D
জিন্সবার্গ
হার্বার্ট স্পেন্সার (Herbert Spencer) সমাজবিজ্ঞানের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, যিনি সমাজকে একটি জীবন্ত সংগঠনের (Social Organism) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মতে, সমাজও জীবের মতোই বিভিন্ন অঙ্গ বা অংশ নিয়ে গঠিত, যা পারস্পরিক নির্ভরশীলভাবে কাজ করে এবং সম্মিলিতভাবে সমাজের স্থিতি বজায় রাখে।
-
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজও জীবের মতো জন্ম, বিকাশ ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
-
স্পেন্সার সমাজ বিশ্লেষণে জৈব উপমা (Organic Analogy) ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন যে, যেমন জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—যেমন পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম—পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজকে টিকিয়ে রাখে।
-
তিনি অভিজ্ঞতাভিত্তিক তথ্য (empirical data) থেকে সমাজের বিকাশ ও গঠন বোঝার চেষ্টা করেন, অর্থাৎ তত্ত্বের পরিবর্তে পর্যবেক্ষণ ও বাস্তব তথ্যকে গুরুত্ব দেন।
-
তার গবেষণায় তিনি আরোহ পদ্ধতি (Inductive Method) ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সামাজিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সমাজের সাধারণ নিয়ম ও নীতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
-
স্পেন্সারের সমাজদৃষ্টিতে উন্নয়ন বা বিবর্তন (Evolution) ছিল একটি কেন্দ্রীয় ধারণা—তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজ সরল অবস্থা থেকে জটিলতার দিকে বিকশিত হয়, ঠিক জীবের বিবর্তনের মতো।
এইভাবে হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজকে একটি জৈবিক ও ক্রমবিকাশমান ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং সমাজবিজ্ঞানে বিবর্তনবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি স্থাপন করেন।

0
Updated: 3 days ago
'সমাজে মৌল কাঠামোর পরিবর্তন হলে উপরি কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে'-কে বলেছেন?
Created: 1 day ago
A
ওয়েভার
B
সরোকিন
C
মার্ক্র
D
স্পেন্সার
কার্ল মার্কস সমাজব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে সমাজের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর মতে, সমাজের সব প্রতিষ্ঠান, ধারণা ও মূল্যবোধ মূলত অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্যই তিনি সমাজকাঠামোকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করেছেন।
এই দুটি কাঠামো হলো—
১। মৌল কাঠামো (Base): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি, যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা, উৎপাদন সম্পর্ক, সম্পদের বণ্টন ও শ্রমের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত। এই কাঠামো নির্ধারণ করে কে উৎপাদন করবে, কারা উৎপাদনের উপকরণের মালিক, এবং শ্রম কীভাবে ব্যবহৃত হবে। মার্কসের মতে, সমাজের বাস্তব রূপ ও শক্তির সম্পর্ক এই অর্থনৈতিক কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
২। উপরি কাঠামো (Superstructure): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর নির্মিত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমষ্টি। যেমন—রাষ্ট্র, আইন, শিক্ষা, ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। এগুলো সমাজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রতিফলিত ও রক্ষা করে।
মার্কস বলেন, অর্থনীতিই সমাজের ভিত্তি, তাই যখন মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটে, তখন স্বাভাবিকভাবেই উপরি কাঠামোতেও পরিবর্তন আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সমাজের উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটলে তার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাতেও রূপান্তর ঘটে।
অতএব, মার্কসের এই তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানে এক মৌলিক ধারণা—যে অর্থনৈতিক কাঠামোই সমাজের সব পরিবর্তনের চালিকা শক্তি।

0
Updated: 1 day ago