বাংলাদেশে গ্রামীণ সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের মূলভিত্তি কী?
A
শিল্প শ্রম বিভাজন
B
ভূমির মালিকানা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক
C
শিক্ষাগত অর্জন
D
প্রযুক্তিগত জ্ঞান
উত্তরের বিবরণ
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস মূলত অর্থনৈতিক অবস্থা ও ভূমি-সম্পত্তির মালিকানা দ্বারা নির্ধারিত। গ্রামীণ জীবনে জমিই প্রধান উৎপাদন উপকরণ, তাই কার কাছে কতটুকু জমি আছে এবং তার ওপর নির্ভর করে সমাজে তার মর্যাদা নির্ধারিত হয়।
মূল বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিন্যাস নিচে তুলে ধরা হলো—
১। ভূমি ও সম্পত্তির মালিকানা: গ্রামীণ শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান ভিত্তি হলো জমির মালিকানা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা। জমি যার কাছে বেশি, তার সামাজিক অবস্থানও তত উচ্চ।
২। উচ্চ শ্রেণি – ভূমির মালিক বা জমিদার (Landowners / Zamindars): এরা গ্রামে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর শ্রেণি। তারা অন্য কৃষকদের জমি ভাড়া দিয়ে বা শ্রম শোষণ করে আয় করে।
৩। মধ্যম শ্রেণি – মধ্য কৃষক (Middle Peasants): এরা সীমিত পরিমাণ জমির মালিক। নিজেদের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, এবং মাঝে মাঝে অতিরিক্ত শ্রম বিক্রি করেও উপার্জন করে।
৪। নিম্ন শ্রেণি – ভাড়াভিত্তিক কৃষক ও কৃষি মজুর (Tenant Farmers / Laborers): এদের নিজেদের জমি নেই বা খুব অল্প আছে। তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে এরা সবচেয়ে দুর্বল এবং সামাজিকভাবে তুলনামূলকভাবে নিচু অবস্থানে থাকে।
৫। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক মর্যাদা: এই শ্রেণিবিন্যাসের কারণে গ্রামীণ সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক নির্ভরশীলতা ও শ্রেণি-সম্পর্ক তৈরি হয়, যা গ্রামীণ ক্ষমতার কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ভূমি ও সম্পত্তির মালিকানাই সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের মূল ভিত্তি, যা গ্রামীণ জীবনের সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব ও সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

0
Updated: 1 day ago
সমকালীন বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তনের কারণ কী?
Created: 1 day ago
A
কৃষি শ্রমিকের অভাব
B
নারী শ্রমের বিস্তার
C
প্রবাসী কর্মসংস্থান
D
উপরের সবগুলো
বাংলাদেশের বর্তমান গ্রামীণ সমাজে প্রবাসী কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স অর্থনীতির গতিপথ ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ শুধু পরিবার নয়, পুরো গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করেছে।
তথ্যগুলো হলো:
-
আর্থিক উন্নয়ন: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রামের পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধি করে, যার ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। এ অর্থ দিয়ে অনেকে নতুন ব্যবসা শুরু, জমি কেনা, ঘর নির্মাণ, এমনকি কৃষিতে আধুনিক সরঞ্জাম ক্রয় করে।
-
বিনিয়োগ ও ভোগ বৃদ্ধি: রেমিট্যান্সের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পণ্যের চাহিদা বাড়ে, বাজার সক্রিয় হয় এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হয়।
-
সামাজিক পরিবর্তন: প্রবাসীদের জীবনধারা, চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা গ্রামের মানুষদের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে নতুন সামাজিক মানসিকতা, উন্নত জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা, ও পরিবার পরিকল্পনার সচেতনতা বাড়ে।
-
শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব: প্রবাসী পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করে। এতে গ্রামীণ এলাকায় স্কুলে ভর্তি হার বৃদ্ধি, শিক্ষিত যুবসমাজের সংখ্যা বাড়া, এবং নারী শিক্ষার অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়।
-
নারীর ভূমিকার পরিবর্তন: পুরুষরা প্রবাসে থাকার ফলে নারীরা পরিবারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দৈনন্দিন পরিচালনায় বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, যা লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রবাসী কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক রূপান্তর ও সাংস্কৃতিক আধুনিকায়নের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

0
Updated: 1 day ago
২০২২ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত?
Created: 1 day ago
A
১.৪০%
B
১.৩৯%
C
১.২২%
D
১.৩৩%
২০২২ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারির ফলাফল অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, লিঙ্গ অনুপাত এবং শহর-গ্রামের জনসংখ্যাগত কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। এতে বোঝা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও নগরায়ণ ও নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি একটি নতুন জনসংখ্যাগত প্রবণতা তৈরি করছে।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার:
-
২০২২ সালে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১.২২%, যা ২০১১ সালের ১.৩৭% হারের তুলনায় কিছুটা কম।
-
এটি ইঙ্গিত করে যে বাংলাদেশে জন্মহার হ্রাস এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন ঘটছে।
২। মোট জনসংখ্যা (২০২২):
-
দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬৯,৮২৮,৯১১ জন বা প্রায় ১৭ কোটি।
-
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হিসেবে অবস্থান করছে।
৩। শহর ও গ্রামভিত্তিক জনসংখ্যা:
-
শহরাঞ্চলে ৪০% এবং গ্রামাঞ্চলে ৬০% মানুষ বসবাস করে।
-
এটি দেখায় যে নগরায়ণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও গ্রামীণ জনসংখ্যা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ।
৪। লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন:
-
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মহিলা জনসংখ্যা পুরুষের তুলনায় সামান্য বেশি।
-
এটি নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের উন্নতির একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।
অতএব, ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তবে নগরায়ণ ও নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি দেশের সামাজিক কাঠামোয় নতুন পরিবর্তনের সূচনা করছে।

0
Updated: 1 day ago
শাস্তি বা পুরষ্কারের মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রনের কথা কে বলেছেন?
Created: 3 days ago
A
হেইজ
B
লুমাল
C
বার্নাড
D
ক্রসবি
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো শাস্তি ও পুরস্কারের মাধ্যমে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। এই ধারণাটি সমাজবিজ্ঞানের ও মনোবিজ্ঞানের উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সমাজবিজ্ঞানে এটি বিশেষভাবে এমিল ডুর্খেইম এবং কার্যকরীবাদী (Functionalist) দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পর্কিত, আর মনোবিজ্ঞানে এটি আচরণবাদী (Behaviorist) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
-
ডুর্খেইম বিশ্বাস করতেন যে সমাজের স্থিতি বজায় রাখতে সামাজিক নিয়ম ও আইন অপরিহার্য। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে শাস্তি সামাজিক শৃঙ্খলা ও যৌথ বিবেককে (collective conscience) শক্তিশালী করে, কারণ এটি সমাজের সদস্যদের গ্রহণযোগ্য আচরণের সীমা বুঝতে সাহায্য করে।
-
কার্যকরীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, শাস্তি ও পুরস্কার সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সামাজিক প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে উৎসাহিত করে, ফলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা পায়।
-
আচরণবাদী মনোবিজ্ঞান, বিশেষত বি.এফ. স্কিনার-এর মতে, মানব আচরণ অপারেন্ট কন্ডিশনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়—অর্থাৎ, সঠিক আচরণে পুরস্কার দেওয়া হয় এবং ভুল আচরণে শাস্তি, যা ধীরে ধীরে আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
-
তবে যদি বিকল্পে ডুর্খেইমের নাম না থাকে, তাহলে ক্রসবিকে যুক্ত করা যায়, কারণ কিছু সূত্রে তিনি punishment-reward বা অনুশাসন ও প্রণোদনার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
-
তবুও সমাজবিজ্ঞানে সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই ধারণাটি Durkheim বা Functionalist চিন্তাবিদদের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত।
এইভাবে দেখা যায়, শাস্তি ও পুরস্কার কেবল ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক শৃঙ্খলা ও ঐক্য রক্ষারও একটি কার্যকর উপায়।

0
Updated: 3 days ago