'প্রতিকী মিথস্ক্রিয়ার' তত্ত্ব কে দিয়েছেন?
A
মিড
B
ব্লুমার
C
ডুর্খীম
D
স্পেনসার
উত্তরের বিবরণ
প্রতিকী মিথস্ক্রিয়া (Symbolic Interactionism) সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, যা মূলত জর্জ হারবার্ট মিড (George Herbert Mead, 1863–1931) প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে তাঁর ছাত্র হারবার্ট ব্লুমার (Herbert Blumer, 1900–1987) এই তত্ত্বকে সংজ্ঞায়িত ও প্রসারিত করেন। এই তত্ত্ব মানব সমাজকে ব্যাখ্যা করে একটি অর্থনির্ভর মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে, যেখানে মানুষ প্রতীক ও ভাষার মাধ্যমে অর্থ সৃষ্টি ও বিনিময় করে।
মূল বিষয়গুলো হলো—
১। সমাজ মানবিক মিথস্ক্রিয়ার ফল: সমাজ কোনো যান্ত্রিক গঠন নয়; বরং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমেই সমাজ গঠিত হয়।
২। প্রতীকের ভূমিকা: মানুষ প্রতীক (Symbols) ব্যবহার করে অর্থ তৈরি করে ও অন্যদের সঙ্গে তা ভাগাভাগি করে। প্রতীক হতে পারে ভাষা, অঙ্গভঙ্গি, বস্তু বা এমন কিছু যা সামাজিকভাবে অর্থবহ।
৩। অর্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়া: ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতীকের অর্থ বোঝে এবং নতুন অর্থ সৃষ্টি করে।
৪। ইন্টারপ্রিটেশন বা ব্যাখ্যার গুরুত্ব: মানুষ শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া করে না, বরং সামাজিক আচরণের আগে সে অর্থ ব্যাখ্যা করে, তারপর তার ওপর ভিত্তি করে কাজ করে।
৫। ব্যক্তিত্ব ও আচরণের বিকাশ: ব্যক্তির সামাজিক পরিবেশ ও মিথস্ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা তার ব্যক্তিত্ব গঠন ও আচরণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সংক্ষেপে, প্রতিকী মিথস্ক্রিয়ার তত্ত্ব দেখায় যে সমাজ হলো এক অবিরাম প্রতীকভিত্তিক যোগাযোগ ও অর্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সামাজিক বাস্তবতা গঠিত হয়।

0
Updated: 1 day ago
কোন সমাজ বিজ্ঞানী সামাজিক প্রপঞ্চ ও ঘটনাবলী বিশ্লেষণ আরোহ পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন?
Created: 3 days ago
A
স্পেন্সার
B
ডুর্খীম
C
ফ্রয়েড
D
জিন্সবার্গ
হার্বার্ট স্পেন্সার (Herbert Spencer) সমাজবিজ্ঞানের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, যিনি সমাজকে একটি জীবন্ত সংগঠনের (Social Organism) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মতে, সমাজও জীবের মতোই বিভিন্ন অঙ্গ বা অংশ নিয়ে গঠিত, যা পারস্পরিক নির্ভরশীলভাবে কাজ করে এবং সম্মিলিতভাবে সমাজের স্থিতি বজায় রাখে।
-
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজও জীবের মতো জন্ম, বিকাশ ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
-
স্পেন্সার সমাজ বিশ্লেষণে জৈব উপমা (Organic Analogy) ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন যে, যেমন জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—যেমন পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম—পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজকে টিকিয়ে রাখে।
-
তিনি অভিজ্ঞতাভিত্তিক তথ্য (empirical data) থেকে সমাজের বিকাশ ও গঠন বোঝার চেষ্টা করেন, অর্থাৎ তত্ত্বের পরিবর্তে পর্যবেক্ষণ ও বাস্তব তথ্যকে গুরুত্ব দেন।
-
তার গবেষণায় তিনি আরোহ পদ্ধতি (Inductive Method) ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সামাজিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সমাজের সাধারণ নিয়ম ও নীতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
-
স্পেন্সারের সমাজদৃষ্টিতে উন্নয়ন বা বিবর্তন (Evolution) ছিল একটি কেন্দ্রীয় ধারণা—তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজ সরল অবস্থা থেকে জটিলতার দিকে বিকশিত হয়, ঠিক জীবের বিবর্তনের মতো।
এইভাবে হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজকে একটি জৈবিক ও ক্রমবিকাশমান ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং সমাজবিজ্ঞানে বিবর্তনবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি স্থাপন করেন।

0
Updated: 3 days ago
বাংলাদেশের শহরে দ্রুত বর্ধনশীল খাত কোনটি?
Created: 2 days ago
A
সেবা খাত
B
শিল্পায়ন
C
কৃষি
D
ক্ষুদ্র ব্যবস্থা
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হলো সেবা খাত (Service Sector / Tertiary Sector)। শিল্প ও কৃষির পাশাপাশি এই খাত এখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও নগরজীবনের মানোন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
প্রধান উপাদানগুলো হলো—
-
ব্যাংক ও আর্থিক সেবা: বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা, মাইক্রোক্রেডিট ও ডিজিটাল আর্থিক সেবার সম্প্রসারণ শহরে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে।
-
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা: সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক সেবা খাতের বড় অংশ। এ খাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ হচ্ছে।
-
পরিবহন ও যোগাযোগ: সড়ক, রেল, বিমান ও ডিজিটাল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন শহরের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাড়াচ্ছে।
-
হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিনোদন: নগর জীবনে জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
-
তথ্য প্রযুক্তি (IT): আইটি সার্ভিস, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও আউটসোর্সিং এখন শহুরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই খাত দেশের জিডিপি-তে সর্বাধিক অবদান রাখছে এবং আধুনিক শহরজীবনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

0
Updated: 2 days ago
ডুর্খীম সমাজে কয় ধরনের সংহতির কথা বলেছেন?
Created: 1 day ago
A
৪
B
৩
C
২
D
৫
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম (Émile Durkheim, 1858–1917) সমাজে সামাজিক সংহতির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা উপস্থাপন করেন—যান্ত্রিক সংহতি (Mechanical Solidarity) ও জৈবিক সংহতি (Organic Solidarity)। তাঁর মতে, সমাজে সংহতির ধরন নির্ভর করে সমাজের গঠন, শ্রমের বিভাজন ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
মূল বিষয়গুলো হলো—
১। যান্ত্রিক সংহতি (Mechanical Solidarity):
-
এটি প্রাথমিক বা প্রাচীন সমাজে দেখা যায়, যেখানে মানুষদের মধ্যে সমতা, অভিন্ন বিশ্বাস ও মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকে।
-
সমাজের সদস্যরা একই ধরনের কাজ, জীবনযাপন ও ধর্মীয়-নৈতিক ধারণা অনুসরণ করে।
-
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের চেয়ে সমষ্টিগত চেতনা (Collective Conscience) বেশি শক্তিশালী থাকে।
-
উদাহরণ: প্রাচীন গ্রামীণ সমাজ, উপজাতীয় সমাজ বা শিকারি সমাজ—যেখানে সবাই প্রায় একই কাজ করে ও একইভাবে চিন্তা করে।
২. জৈবিক সংহতি (Organic Solidarity):
-
এটি আধুনিক বা শিল্পসমাজে বিদ্যমান, যেখানে মানুষের মধ্যে শ্রমবিভাজন (Division of Labour) স্পষ্টভাবে গঠিত।
-
সমাজের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা, দক্ষতা ও দায়িত্বে যুক্ত থাকলেও তারা একে অপরের ওপর পারস্পরিক নির্ভরশীল।
-
এখানে সংহতি তৈরি হয় বৈচিত্র্যের মধ্যকার সহযোগিতা ও নির্ভরতার মাধ্যমে।
-
উদাহরণ: শহুরে বা শিল্প সমাজ, যেখানে শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক, প্রকৌশলী—সবাই একে অপরের কাজের ওপর নির্ভরশীল।
সারসংক্ষেপে, ডুর্খেইম দেখিয়েছেন যে যান্ত্রিক সংহতি অভিন্নতা থেকে জন্ম নেয়, আর জৈবিক সংহতি বৈচিত্র্যের মধ্যকার নির্ভরতা থেকে গঠিত হয়—এই দুই রূপই সমাজের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 1 day ago