তুলা গাছকে ‘সূর্যকন্যা’ বলা হয় তার অনন্য বৈশিষ্ট্য, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং সূর্যের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কারণে। এটি এমন একটি উদ্ভিদ যা কৃষি, অর্থনীতি এবং শিল্প—তিন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূর্যের সঙ্গে সম্পর্ক:
তুলা গাছ সূর্যের আলো ও তাপের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। এটি উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক ছাড়া তুলার ফুল ফোটে না এবং আঁশের মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষকরা একে ভালোবেসে ‘সূর্যকন্যা’ বলে ডাকেন।
তুলা গাছের বৈজ্ঞানিক পরিচয়:
তুলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Gossypium herbaceum। এটি মালভেসি (Malvaceae) পরিবারের অন্তর্গত। এর আঁশ মূলত বীজের চারপাশে জন্মায়, যা থেকে সুতা ও কাপড় তৈরি হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
তুলা পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান নগদ ফসল। এটি থেকে তৈরি সুতা, কাপড়, তেল ও পশুখাদ্য বহু শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাকশিল্প তুলার উপর নির্ভরশীল। তাই তুলা গাছ শুধু কৃষিতেই নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখে।
কৃষিগত বৈশিষ্ট্য:
তুলা গাছ সাধারণত ৩-৫ ফুট উঁচু হয়। এটি শুকনো, উষ্ণ, বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। বপনের সময় মে-জুন মাস এবং তুলা তোলা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এর জন্য নিয়মিত সূর্যালোক ও মাঝারি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
প্রতীকী অর্থে সূর্যকন্যা:
তুলা গাছের ফুল ও ফল উজ্জ্বল রঙের হয় এবং এর বৃদ্ধি সূর্যের আলোয় সবচেয়ে ভালো হয়। সূর্যের কিরণে ফুল ফোটে, ফল পাকে, আর তুলা সাদা আঁশে ফুটে ওঠে যেন সূর্যের আলোয় জন্ম নেওয়া এক “কন্যা”। এজন্যই একে কাব্যিকভাবে “সূর্যকন্যা” বলা হয়।
পরিবেশগত গুরুত্ব:
তুলা গাছ মাটির উর্বরতা রক্ষা করে এবং কৃষিজ চক্রে ভারসাম্য রাখে। এর পাতা ও বীজপ্রক্রিয়াজাত অবশিষ্টাংশ পশুখাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তুলা গাছ প্রকৃত অর্থেই “সূর্যকন্যা” — কারণ এটি সূর্যের আলোয় বিকশিত হয়, মানুষের প্রয়োজন মেটায় এবং দেশের অর্থনীতিতে অমূল্য অবদান রাখে। এর প্রতিটি আঁশ সূর্যের আলোর মতোই উজ্জ্বল ও জীবনের জন্য অপরিহার্য।