'আদর্শবাদী,আদর্শ ভিত্তিক এবং ইন্ডীয়গ্রাহ্য' এই ৩টির চক্রাকার আবর্তনে সমাজ পরিবর্তন হয়'-কার উক্তি?
A
সরোকিন
B
টয়েনবি
C
চ্যাপিন
D
প্যারোটো
উত্তরের বিবরণ
পিতিরিম এ. সোরোকিন সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা চক্রবৃত্তীয় সামাজিক পরিবর্তন তত্ত্ব (Cyclic Theory of Social Change) নামে পরিচিত। তাঁর মতে, সমাজে পরিবর্তন সরলরেখায় ঘটে না; বরং এটি একধরনের চক্রাকার প্রক্রিয়া, যেখানে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।
তত্ত্বের মূল বিষয়গুলো হলো—
১। চক্রবৃত্তীয় প্রকৃতি (Cyclic Nature): সমাজ ও সংস্কৃতি কখনও একদিকে অগ্রসর হয়ে স্থায়ী থাকে না। বরং তা এক ধরণের উত্থান-পতনের চক্রে ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ, সামাজিক পরিবর্তন সরলরেখায় (Linear) নয়, বরং চক্রাকারভাবে (Cyclical) ঘটে।
২। সংস্কৃতির তিনটি মানসিক রূপ (Three Types of Cultural Mentality):
-
Ideational (আদর্শবাদী): এই ধরণের সংস্কৃতিতে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রাধান্য পায়। বাস্তবতা এখানে ঈশ্বর, আত্মা ও নৈতিক আদর্শ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
-
Sensate (ইন্দ্রিয়নির্ভর): এই পর্যায়ে সমাজ বস্তুবাদী ও ভোগবাদী হয়ে ওঠে। ইন্দ্রিয়সুখ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুগত উন্নয়ন এখানে মূল মূল্যবোধ হিসেবে দেখা যায়।
-
Idealistic বা Mixed (মিশ্র): এই ধাপে আদর্শবাদী ও ইন্দ্রিয়নির্ভর মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটে। সমাজ একদিকে নৈতিক আদর্শকে ধরে রাখে, অন্যদিকে বাস্তব ও বস্তুগত উন্নয়নেও গুরুত্ব দেয়।
৩। চক্রাকার পরিবর্তনের ধারা (Cyclical Shift): সমাজ ও সংস্কৃতি এই তিন রূপে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়—
Ideational → Idealistic → Sensate → আবার Ideational। এইভাবে এক পর্যায় শেষ হলে অন্যটি শুরু হয়, এবং সমাজ তার মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্গঠন করে।
সুতরাং, সোরোকিনের মতে, সামাজিক পরিবর্তন কখনো স্থায়ী নয়; বরং এটি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারাবাহিক ওঠানামার এক অনন্ত চক্র, যা মানব সভ্যতার বিকাশকে নিরন্তর গতিশীল রাখে।

0
Updated: 1 day ago
ভারতীয় সমাজে কয় ধরনের বর্ণ প্রথা ছিল?
Created: 2 days ago
A
২
B
৩
C
৪
D
৬
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজে বর্ণ প্রথা (Varna System) ছিল সামাজিক সংগঠন ও শ্রেণিবিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা, যা মানুষের পেশা, জন্ম ও সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী বিভক্ত ছিল। এই প্রথা মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এবং সমাজে দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করত।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। ব্রাহ্মণ (Brahmin):
-
সমাজের সর্বোচ্চ শ্রেণি হিসেবে ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করত।
-
এরা পুরোহিত, শিক্ষক, আচার্য ও জ্ঞানচর্চাকারী ছিলেন।
-
সমাজে নৈতিকতা, আচার-বিচার ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রচারে ভূমিকা রাখত।
২। ক্ষত্রিয় (Kshatriya):
-
সমাজের শাসন, প্রশাসন ও যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব এদের ওপর ন্যস্ত ছিল।
-
রাজা, সেনাপতি, সৈনিক ও যোদ্ধা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
-
এরা সমাজে নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা রক্ষা করত।
৩। বৈশ্য (Vaishya):
-
এরা সমাজের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করত।
-
কৃষি, বাণিজ্য, পশুপালন ও কারুশিল্প এদের প্রধান পেশা ছিল।
-
বৈশ্য শ্রেণি সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতি ও উৎপাদন ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষা করত।
৪। শূদ্র (Shudra):
-
সমাজের শ্রমনির্ভর শ্রেণি হিসেবে শ্রম ও সেবামূলক কাজ করত।
-
কৃষি, নির্মাণ, কারিগরি কাজ ও গৃহপরিচর্যা ছিল তাদের মূল পেশা।
-
সামাজিক মর্যাদায় এদের অবস্থান ছিল নিচু, এবং প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হতো।
অতএব, প্রাচীন ভারতের বর্ণ প্রথা সমাজে দায়িত্বের বিভাজন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করলেও পরবর্তীকালে এটি সামাজিক বৈষম্য ও অসাম্যের প্রতীকে পরিণত হয়, যা সমাজে স্থবিরতা ও বিভাজন সৃষ্টি করে।

0
Updated: 2 days ago
নিচের কোনটি বিচ্যুত আচরণ?
Created: 2 days ago
A
কাউকে আঘাত করা
B
চুরি করা
C
চুল ধরে টানা
D
সালাম না দেয়া
সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে নির্দিষ্ট আচরণ প্রত্যাশা করা হয়, যা সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন কেউ সমাজ কর্তৃক প্রত্যাশিত আচরণ প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়, তখন সেটি “বিচ্যুতি (Deviation)” বলে পরিচিত। অপরদিকে, যে কাজ আইন ভঙ্গ করে সমাজে ক্ষতি বা অপরাধ সৃষ্টি করে, সেটি “অপরাধ (Crime)” হিসেবে গণ্য হয়।
প্রধান পার্থক্যগুলো হলো—
-
বিচ্যুতি: সমাজের প্রচলিত রীতি, মূল্যবোধ ও আদর্শ লঙ্ঘন করলে তাকে বিচ্যুত আচরণ বলা হয়। এটি সবসময় আইনভঙ্গ নয়, তবে সমাজে এটি অগ্রহণযোগ্য বা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়।
-
উদাহরণ: কাউকে সালাম না দেওয়া, বয়োজ্যেষ্ঠের প্রতি সম্মান না দেখানো, অশোভন ভাষায় কথা বলা— এসবই সামাজিক বিচ্যুতি।
-
-
অপরাধ: যখন কোনো কাজ আইনবিরুদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য, তখন তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এটি সমাজে সরাসরি ক্ষতি সৃষ্টি করে।
-
উদাহরণ: কাউকে আঘাত করা, চুরি করা, বা চুল ধরে টানা— এগুলো অপরাধমূলক আচরণ, কারণ এগুলো আইন লঙ্ঘন করে।
-
অতএব, সালাম দেওয়া সমাজের আদর্শ আচরণের অংশ, আর সালাম না দেওয়া বা সামাজিক ভদ্রতা লঙ্ঘন করা বিচ্যুত আচরণ, কিন্তু তা অপরাধ নয়। অপরাধ সবসময় আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য, তবে বিচ্যুতি কেবল সামাজিকভাবে নিন্দনীয়।

0
Updated: 2 days ago
'নোকমা' কে নির্বাচিত হয়?
Created: 2 days ago
A
বড় মেয়ে
B
মেঝ মেয়ে
C
ছোট মেয়ে
D
সেঝ মেয়ে
গারো সমাজ বাংলাদেশের একটি স্বতন্ত্র উপজাতীয় সমাজব্যবস্থা, যা তার মাতৃতান্ত্রিক (Matriarchal) প্রথার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই সমাজে নারীর অবস্থান সম্মানজনক ও কেন্দ্রীয়, এবং পরিবারের সম্পত্তি ও দায়িত্ব মূলত নারীর মাধ্যমে উত্তরাধিকারে স্থানান্তরিত হয়।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা:
-
গারো সমাজে পরিবার ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার মায়ের বংশানুক্রমে নির্ধারিত হয়।
-
এখানে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সম্মানজনক।
২। উত্তরাধিকার প্রথা:
-
মাতা মৃত্যুবরণ করলে তার ছোট মেয়ে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
-
এই ছোট মেয়েকেই “নকনা” (Nokna) বলা হয়।
৩। নকনার ভূমিকা:
-
নকনা পরিবারের সমস্ত সম্পদ ও সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে।
-
পরিবারের ভরণপোষণ, সম্পদের ব্যবহার ও পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়।
-
নকনার মাধ্যমে পরিবারে ঐক্য ও সামাজিক স্থিতি বজায় থাকে।
৪। সামাজিক তাৎপর্য:
-
গারো সমাজের এই মাতৃতান্ত্রিক প্রথা নারীর স্বাধীনতা, নেতৃত্ব ও মর্যাদার প্রতীক।
-
এটি প্রমাণ করে যে গারো সমাজে নারীরা শুধু গৃহকর্ত্রী নয়, বরং পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তম্ভ।
অতএব, গারো সমাজের মাতৃতান্ত্রিক কাঠামো নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যেখানে নকনা পরিবারের উত্তরাধিকার, দায়িত্ব ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 2 days ago