'সমাজে মৌল কাঠামোর পরিবর্তন হলে উপরি কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে'-কে বলেছেন?
A
ওয়েভার
B
সরোকিন
C
মার্ক্র
D
স্পেন্সার
উত্তরের বিবরণ
কার্ল মার্কস সমাজব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে সমাজের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর মতে, সমাজের সব প্রতিষ্ঠান, ধারণা ও মূল্যবোধ মূলত অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্যই তিনি সমাজকাঠামোকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করেছেন।
এই দুটি কাঠামো হলো—
১। মৌল কাঠামো (Base): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি, যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা, উৎপাদন সম্পর্ক, সম্পদের বণ্টন ও শ্রমের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত। এই কাঠামো নির্ধারণ করে কে উৎপাদন করবে, কারা উৎপাদনের উপকরণের মালিক, এবং শ্রম কীভাবে ব্যবহৃত হবে। মার্কসের মতে, সমাজের বাস্তব রূপ ও শক্তির সম্পর্ক এই অর্থনৈতিক কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
২। উপরি কাঠামো (Superstructure): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর নির্মিত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমষ্টি। যেমন—রাষ্ট্র, আইন, শিক্ষা, ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। এগুলো সমাজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রতিফলিত ও রক্ষা করে।
মার্কস বলেন, অর্থনীতিই সমাজের ভিত্তি, তাই যখন মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটে, তখন স্বাভাবিকভাবেই উপরি কাঠামোতেও পরিবর্তন আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সমাজের উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটলে তার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাতেও রূপান্তর ঘটে।
অতএব, মার্কসের এই তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানে এক মৌলিক ধারণা—যে অর্থনৈতিক কাঠামোই সমাজের সব পরিবর্তনের চালিকা শক্তি।

0
Updated: 1 day ago
মার্গানের মতে পৃথিবীর আদিম পরিবার কোনটি?
Created: 2 days ago
A
কনস্যাংগুইন পরিবার
B
পুনালুয়ান পরিবার
C
সিনডিয়াসমিন পরিবার
D
গোষ্ঠী পরিবার
মানব সমাজের পারিবারিক কাঠামো সময়ের সঙ্গে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী লুইস এইচ. মার্গান (Lewis H. Morgan) পরিবার গঠনের একটি ঐতিহাসিক বিবর্তন ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রাথমিক যৌথ পরিবার থেকে আধুনিক একক পরিবারে উন্নয়ন ঘটেছে।
এই বিবর্তনের ধাপগুলো হলো—
১। কনস্যাংগুইন পরিবার (Consanguine Family): এটি মানবজাতির প্রাচীনতম পারিবারিক রূপ। এখানে রক্তসম্পর্কের ভিত্তিতে যৌথ জীবনযাপন হতো এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নির্দিষ্ট ছিল না।
২। পুনালুয়ান পরিবার (Punaluan Family): এখানে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ হয়, তবে দলগত বিবাহ ব্যবস্থা বজায় ছিল।
৩। সিনডাসমিয়ান পরিবার (Syndyasmian Family): এই পর্যায়ে এক পুরুষ ও এক নারীর মধ্যে তুলনামূলক স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যদিও সম্পূর্ণ একবিবাহ তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
৪। পিতৃপ্রধান পরিবার (Patriarchal Family): এখানে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ পিতার হাতে আসে। সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার পুরুষের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
৫। আধুনিক একক পরিবার (Modern Monogamous Family): এটি বর্তমান সমাজে প্রচলিত পারিবারিক রূপ, যেখানে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে স্থায়ী একবিবাহ প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং পারিবারিক জীবনে পারস্পরিক ভালোবাসা, দায়িত্ব ও অধিকার গুরুত্ব পায়।
এই ধারাবাহিক বিকাশ মানব সভ্যতার সামাজিক ও নৈতিক অগ্রগতির প্রতিফলন।

0
Updated: 2 days ago
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধিপায়-কে বলেছেন?
Created: 1 day ago
A
এডাম স্মিথ
B
ম্যালথাস
C
মর্গান
D
ম্যাক্র
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর টমাস রবার্ট মালথাস (Thomas Robert Malthus, 1766–1834) একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা ইতিহাসে “Malthusian Theory of Population” নামে পরিচিত। তাঁর মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবসময় খাদ্য উৎপাদনের হারের তুলনায় অনেক দ্রুত, ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য ঘাটতি ও সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়।
তত্ত্বের মূল বিষয়গুলো হলো—
১। জনসংখ্যা বৃদ্ধি (Population Growth): মালথাসের মতে, মানব জনসংখ্যা জ্যামিতিক বা গুণোত্তর (Geometric / Exponential) হারে বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ—১, ২, ৪, ৮, ১৬ … এইভাবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হতে থাকে।
২। খাদ্য উৎপাদন (Food Supply): অপরদিকে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অঙ্কগণিত (Arithmetic / Linear) হারে, অর্থাৎ—১, ২, ৩, ৪ … এইভাবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
৩। ফলাফল: জনসংখ্যা যখন খাদ্য উৎপাদনের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে, তখন সমাজে দেখা দেয় দারিদ্র্য, অনাহার, রোগব্যাধি ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি। মালথাস একে “Positive Checks” বলে উল্লেখ করেছেন, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। সমাধান বা নিয়ন্ত্রণ: তিনি আরও বলেন, মানুষ যদি স্বেচ্ছায় বিলম্বিত বিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযম (Preventive Checks) পালন করে, তবে এই সংকট প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫। আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা: যদিও পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব মালথাসের আশঙ্কা অনেকাংশে অতিক্রম করেছে, তবুও তাঁর তত্ত্ব উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের জনসংখ্যা-সম্পদ ভারসাম্য বিশ্লেষণে আজও গুরুত্বপূর্ণ।
সারসংক্ষেপে, মালথাস দেখিয়েছিলেন যে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে এবং খাদ্য উৎপাদন অঙ্কগণিত হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে এই অসম বৃদ্ধিই জনসংখ্যা-সংকটের মূল কারণ।

0
Updated: 1 day ago
"আদিম সমাজ ছিল হয় ভুরিভোজ না হয় উপবাস” উক্তিটি কার?
Created: 2 days ago
A
ডুর্খীম
B
স্পেন্সার
C
মর্গান
D
টেইলর
“আদিম সমাজ ছিল হয় ভুরিভোজ না হয় উপবাস” — এই উক্তিটি মূলত ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ মিনু বাসায়নির (Minu Basayni) সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি আদিম সমাজের জীবনযাত্রা ও খাদ্যসংস্কৃতির অনিশ্চয়তাকে বোঝাতে এ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে আদিম সমাজে খাদ্যসংগ্রহ ছিল সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শিকারনির্ভর, ফলে একদিন প্রচুর খাবার মিললেও অন্যদিন তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকত।
তবে যদি অপশন তালিকায় মিনু বাসায়নির নাম না থাকে, তাহলে এডওয়ার্ড বি. টেইলর (Edward B. Tylor)-কে গ্রহণযোগ্য ধরা যায়।
-
কারণ: টেইলর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Primitive Culture (১৮৭১)-এ আদিম সমাজের জীবন, বিশ্বাস, খাদ্যসংগ্রহ ও সংস্কৃতির প্রাথমিক রূপ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
-
তাঁর মতে, আদিম সমাজে মানুষ শিকার ও সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাই তাদের জীবনে অভাব ও প্রাচুর্য—এই দুই চরম অবস্থা বারবার দেখা দিত।
-
এই প্রেক্ষিতে “ভুরিভোজ ও উপবাসের সমাজ” কথাটি আদিম জীবনের বাস্তব চিত্র হিসেবেই প্রতিফলিত হয়।
অতএব, উক্তিটির মূল রচয়িতা মিনু বাসায়নি হলেও, যদি তাঁর নাম বিকল্পে না থাকে, তবে টেইলরই সবচেয়ে উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য উত্তর হিসেবে বিবেচিত হবে।

0
Updated: 2 days ago