মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা বাংলার প্রাচীন সভ্যতা, নগরায়ণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সাক্ষ্য বহন করে। এটি ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে বাংলাদেশের প্রথম নগরকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
মূল তথ্য ও বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো—
১। অবস্থান: মহাস্থানগড় বর্তমানে বগুড়া জেলার মহাস্থান ইউনিয়নে, বগুড়া শহরের প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল, যা প্রাচীনকালে বাণিজ্য ও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল।
২। ঐতিহাসিক সময়কাল: এই নগরকেন্দ্রের অস্তিত্ব খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে ১৫শ শতাব্দী পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এটি মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগ অতিক্রম করে এক ধারাবাহিক নগর সভ্যতার চিত্র তুলে ধরে।
৩। প্রাচীন নগরায়ণ: মহাস্থানগড় ছিল প্রাচীন পুন্ড্রনগর (Pundranagara) নামে পরিচিত রাজধানী, যা তৎকালীন বঙ্গ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। এখানে পাওয়া ব্রাহ্মী লিপি ও অন্যান্য শিলালিপি প্রমাণ করে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দেই এখানে সংগঠিত নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।
৪। স্থাপত্য ও নিদর্শন: প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে দুর্গপ্রাচীর, মন্দির, স্তূপ, রাজপ্রাসাদ, স্নানাগার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও মুদ্রা ও মৃৎপাত্রের নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা এর উচ্চতর নগর পরিকল্পনা ও সামাজিক সংগঠনের প্রমাণ বহন করে।
৫। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: মহাস্থানগড় বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম—এই তিন ধর্মীয় সংস্কৃতির সহাবস্থানের নিদর্শন বহন করে। পাল যুগে এটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
সব মিলিয়ে, মহাস্থানগড় শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও নগরায়ণের সূতিকাগার, যা আজও আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।