সামাজিক স্তরবিন্যাস কত প্রকার?
A
৪
B
৩
C
২
D
৬
উত্তরের বিবরণ
সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্পদের পার্থক্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিভাজনকে বোঝায়। এই বিভাজন সমাজের গঠন ও সামাজিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। ইতিহাসে ও বর্তমান সমাজে এই স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।
প্রধান চার প্রকার সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো—
১। দাস প্রথা: এটি মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম স্তরবিন্যাস ব্যবস্থা। এতে মানুষকে অন্যের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো এবং দাসদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না। তারা মালিকের জন্য বিনা মজুরিতে কাজ করত।
২। এস্টেট প্রথা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রচলিত এই ব্যবস্থায় সমাজকে রাজন্য, ধর্মযাজক ও সাধারণ মানুষ—এই তিন ভাগে ভাগ করা হতো। প্রতিটি শ্রেণির নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য ছিল, যা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতো।
৩। বর্ণ প্রথা: এটি মূলত ভারতীয় সমাজে প্রচলিত ছিল। জন্ম ও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণে ভাগ করা হতো। সামাজিক গতিশীলতা এখানে প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
৪। শ্রেণী বা মর্যাদা গ্রুপ: আধুনিক সমাজে এই ধরনের স্তরবিন্যাস দেখা যায়। এখানে জন্ম নয়, বরং আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, পেশা ও সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়।
এইভাবে সমাজের বিভিন্ন প্রকার স্তরবিন্যাস সমাজের গঠন, সামাজিক বৈষম্য ও ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 1 day ago
শাস্তি বা পুরষ্কারের মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রনের কথা কে বলেছেন?
Created: 3 days ago
A
হেইজ
B
লুমাল
C
বার্নাড
D
ক্রসবি
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো শাস্তি ও পুরস্কারের মাধ্যমে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। এই ধারণাটি সমাজবিজ্ঞানের ও মনোবিজ্ঞানের উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সমাজবিজ্ঞানে এটি বিশেষভাবে এমিল ডুর্খেইম এবং কার্যকরীবাদী (Functionalist) দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পর্কিত, আর মনোবিজ্ঞানে এটি আচরণবাদী (Behaviorist) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
-
ডুর্খেইম বিশ্বাস করতেন যে সমাজের স্থিতি বজায় রাখতে সামাজিক নিয়ম ও আইন অপরিহার্য। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে শাস্তি সামাজিক শৃঙ্খলা ও যৌথ বিবেককে (collective conscience) শক্তিশালী করে, কারণ এটি সমাজের সদস্যদের গ্রহণযোগ্য আচরণের সীমা বুঝতে সাহায্য করে।
-
কার্যকরীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, শাস্তি ও পুরস্কার সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সামাজিক প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে উৎসাহিত করে, ফলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা পায়।
-
আচরণবাদী মনোবিজ্ঞান, বিশেষত বি.এফ. স্কিনার-এর মতে, মানব আচরণ অপারেন্ট কন্ডিশনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়—অর্থাৎ, সঠিক আচরণে পুরস্কার দেওয়া হয় এবং ভুল আচরণে শাস্তি, যা ধীরে ধীরে আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
-
তবে যদি বিকল্পে ডুর্খেইমের নাম না থাকে, তাহলে ক্রসবিকে যুক্ত করা যায়, কারণ কিছু সূত্রে তিনি punishment-reward বা অনুশাসন ও প্রণোদনার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
-
তবুও সমাজবিজ্ঞানে সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই ধারণাটি Durkheim বা Functionalist চিন্তাবিদদের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত।
এইভাবে দেখা যায়, শাস্তি ও পুরস্কার কেবল ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক শৃঙ্খলা ও ঐক্য রক্ষারও একটি কার্যকর উপায়।

0
Updated: 3 days ago
Created: 2 days ago
A
৫
B
৪
C
৩
D
৬
সমাজবিজ্ঞানে সমাজ গবেষণার প্রধান মডেল (Major Models of Social Research) তিনটি মূল শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই মডেলগুলো সমাজের প্রকৃতি, কাঠামো ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বোঝার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।
প্রধান মডেলগুলো হলো—
-
১. তুলনামূলক বা পর্যবেক্ষণমূলক মডেল (Comparative / Observational Model):
-
এই মডেলে সমাজকে পর্যবেক্ষণ ও তুলনা করে তার গঠন, কার্যক্রম ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়।
-
গবেষক বিভিন্ন সমাজ, সংস্কৃতি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য ও মিল শনাক্ত করে সাধারণ নীতি নির্ধারণের চেষ্টা করেন।
-
উদাহরণ: বিভিন্ন সমাজে পরিবার কাঠামো, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় আচরণ তুলনা করা।
-
-
২. পরীক্ষামূলক বা এক্সপেরিমেন্টাল মডেল (Experimental Model):
-
এখানে গবেষক কোনো নির্দিষ্ট কারণ-প্রভাব সম্পর্ক (Cause-Effect Relationship) পরীক্ষা করেন।
-
নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি বা শর্ত তৈরি করে মানব বা সামাজিক আচরণের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
-
উদাহরণ: কোনো শিক্ষামূলক কর্মসূচির প্রভাবে শিক্ষার্থীর ফলাফলের উন্নতি পর্যালোচনা করা।
-
-
৩. তাত্ত্বিক বা ধারণাগত মডেল (Theoretical / Conceptual Model):
-
এই মডেল সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, ধারণা ও নীতির ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে সমাজকে বোঝার চেষ্টা করে।
-
গবেষণার মাধ্যমে তত্ত্বের বাস্তব প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যাখ্যাশক্তি যাচাই করা হয়।
-
উদাহরণ: মার্ক্সের শ্রেণীসংঘাত তত্ত্ব, ডুর্খেইমের সামাজিক সংহতি তত্ত্ব ইত্যাদি।
-
এছাড়াও কিছু সমাজবিজ্ঞানী ক্রিয়াবাদী (Functionalist Model), দ্বান্দ্বিক (Dialectical Model) ও কাঠামোবাদী (Structuralist Model) মডেলের কথাও উল্লেখ করেছেন। তবে পরীক্ষামূলক, তুলনামূলক ও তাত্ত্বিক মডেল—এই তিনটি প্রধান ও স্বীকৃত মডেল হিসেবে অধিকাংশ গবেষক স্বীকার করেন।

0
Updated: 2 days ago
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কে নির্মান করেন?
Created: 3 days ago
A
গোপাল
B
ধর্মপাল
C
লক্ষণ সেন
D
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য
অষ্টম শতকে পাল রাজবংশের শাসনামলে বঙ্গদেশে রাজনৈতিক স্থিতি ও সাংস্কৃতিক বিকাশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। এই সময়ের দুই মহান শাসক ধর্মপাল ও তার পুত্র দেবপাল উপমহাদেশে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা উত্তর ভারত, বিহার ও বঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
-
ধর্মপাল (৭৭০–৮১০ খ্রিস্টাব্দ) পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক ছিলেন। তিনি রাজধানী স্থাপন করেন পাটলিপুত্রে (বর্তমান পাটনা) এবং নালন্দা মহাবিহার পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন।
-
তার শাসনামলে পাল রাজ্য উত্তর ভারতে গৌরবময় অবস্থান অর্জন করে; তিনি কান্নৌজ দখল করে নিজেকে “উত্তর ভারতের সম্রাট” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
-
দেবপাল (৮১০–৮৫০ খ্রিস্টাব্দ) ধর্মপালের পুত্র ও উত্তরসূরি হিসেবে পাল সাম্রাজ্যের সীমানা আরও সম্প্রসারিত করেন। তার শাসনকালে সাম্রাজ্য বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম এবং উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
-
পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন; বিশেষত তারা মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
-
তাদের প্রতিষ্ঠিত সোমপুর মহাবিহার (বর্তমান পাহাড়পুর, বাংলাদেশ) উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বিহার হিসেবে খ্যাতি লাভ করে এবং বর্তমানে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
এইভাবে ধর্মপাল ও দেবপালের যুগে পাল সাম্রাজ্য শুধু রাজনৈতিক শক্তিতেই নয়, বরং শিক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও স্বর্ণযুগে উপনীত হয়।

0
Updated: 3 days ago