বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম মুসলিম দেশ কোনটি?

A

মিসর

B

ইরান

C

ইরাক

D

তুরস্ক

উত্তরের বিবরণ

img

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অর্জিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বীকৃতি পেতে কিছুটা সময় লেগেছিল। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো একে একে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ইরাক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সৃষ্টি করে।

১. স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট:
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। তখন বিশ্বরাজনীতি ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাবে বিভক্ত ছিল—একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান ব্লক, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা। পাকিস্তান যেহেতু মুসলিম বিশ্বের একটি প্রধান দেশ ছিল, তাই অনেক ইসলামিক দেশ প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। কিন্তু ইরাক বাংলাদেশের ন্যায্য স্বাধীনতার আন্দোলনকে সমর্থন করে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

২. ইরাকের স্বীকৃতির তারিখ ও তাৎপর্য:
১৯৭২ সালের শুরুতে ইরাক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য প্রথম কূটনৈতিক স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইরাক প্রমাণ করে যে, মানবিক মূল্যবোধ ও জনগণের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করে।

৩. ইরাকের অবস্থান ও কূটনৈতিক সাহসিকতা:
ইরাক সে সময় আরব লীগের সদস্য এবং মুসলিম বিশ্বের একটি প্রভাবশালী দেশ ছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পরও ইরাক বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ভূমিকা নেয়। তারা মনে করেছিল, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে তাদের জনগণের অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আন্দোলনে সফল হয়েছে—তাই এই স্বীকৃতি ন্যায়বিচারের প্রতিফলন।

৪. বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্য:

  • এই স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে।

  • অন্য মুসলিম দেশ যেমন মিশর, তিউনিসিয়া, ও আলজেরিয়াও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনুপ্রাণিত হয়।

  • এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যের সূচনা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।

  • ইরাকের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ন্যায্যতা ও বৈধতা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে।

৫. ঐতিহাসিক প্রভাব:
ইরাকের এই পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি ছিল এক ধরনের নৈতিক সমর্থন বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। এর মাধ্যমে বিশ্ব বুঝেছিল যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল গণমানুষের মুক্তির আন্দোলন, কোনো বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহ নয়।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ইরাক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাদের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরিচিতিকে বিশ্বমঞ্চে দৃঢ় করে তোলে। ইরাকের এই সাহসী ও মানবিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।

Unfavorite

0

Updated: 1 day ago

Related MCQ

‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে আলোকপাত করা হয়েছে?

Created: 3 weeks ago

A

১১ নং

B

১৭ নং

C

১৮ নং

D

২১ নং

Unfavorite

0

Updated: 3 weeks ago

বাংলাদেশে কয়টি উপজাতীয় প্রতিষ্ঠান আছে? 

Created: 2 months ago

A

৮ টি 

B

৫ টি 

C

৪ টি 

D

৩ টি

Unfavorite

0

Updated: 2 months ago

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা'র প্রথম কত চরণ নেওয়া হয়?

Created: 3 weeks ago

A

৮ 

B

১০

C

১২

D

১৪ 

Unfavorite

0

Updated: 3 weeks ago

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD