এমিল ডুর্খীম সমাজে কয় ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেছেন?
A
৩
B
৪
C
৫
D
২
উত্তরের বিবরণ
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম আত্মহত্যাকে একটি সামাজিক ঘটনা হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, আত্মহত্যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মানসিক কারণের ফল নয়, বরং এটি সমাজের গঠন, সংহতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাঁর মতে, সামাজিক সম্পর্কের ধরন ও সমাজে ব্যক্তির অবস্থান অনুসারে আত্মহত্যা চার প্রকার হতে পারে।
এই চার ধরনের আত্মহত্যা হলো—
১। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা (Egoistic Suicide): যখন ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়, তখন একাকিত্ব ও উদ্দেশ্যহীনতা থেকে আত্মহত্যা ঘটে।
২। পরার্থমূলক আত্মহত্যা (Altruistic Suicide): এটি ঘটে যখন ব্যক্তি সমাজ বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে, যেমন দেশপ্রেম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আত্মবলি দেওয়া।
৩। নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা (Anomic Suicide): সমাজে যখন আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে— যেমন অর্থনৈতিক মন্দা বা সামাজিক বিশৃঙ্খলা— তখন ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে আত্মহত্যা ঘটতে পারে।
৪। নিয়তিবাদী আত্মহত্যা (Fatalistic Suicide): অতিরিক্ত সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বা দমনমূলক পরিবেশে যখন ব্যক্তির স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে সীমিত হয়ে যায়, তখন হতাশা থেকে আত্মহত্যা সংঘটিত হয়।
ডুর্খেইমের এই বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞানে আত্মহত্যার সামাজিক কারণ বুঝতে একটি মৌলিক তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রদান করেছে।

0
Updated: 2 days ago
সামাজিক স্তরবিন্যাস কত প্রকার?
Created: 1 day ago
A
৪
B
৩
C
২
D
৬
সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্পদের পার্থক্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিভাজনকে বোঝায়। এই বিভাজন সমাজের গঠন ও সামাজিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। ইতিহাসে ও বর্তমান সমাজে এই স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।
প্রধান চার প্রকার সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো—
১। দাস প্রথা: এটি মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম স্তরবিন্যাস ব্যবস্থা। এতে মানুষকে অন্যের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো এবং দাসদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না। তারা মালিকের জন্য বিনা মজুরিতে কাজ করত।
২। এস্টেট প্রথা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রচলিত এই ব্যবস্থায় সমাজকে রাজন্য, ধর্মযাজক ও সাধারণ মানুষ—এই তিন ভাগে ভাগ করা হতো। প্রতিটি শ্রেণির নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য ছিল, যা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতো।
৩। বর্ণ প্রথা: এটি মূলত ভারতীয় সমাজে প্রচলিত ছিল। জন্ম ও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণে ভাগ করা হতো। সামাজিক গতিশীলতা এখানে প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
৪। শ্রেণী বা মর্যাদা গ্রুপ: আধুনিক সমাজে এই ধরনের স্তরবিন্যাস দেখা যায়। এখানে জন্ম নয়, বরং আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, পেশা ও সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়।
এইভাবে সমাজের বিভিন্ন প্রকার স্তরবিন্যাস সমাজের গঠন, সামাজিক বৈষম্য ও ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 1 day ago
সমাজ পরিবর্তনে দৈহিক শক্তির চেয়ে বৃদ্ধিবৃত্তির উপর কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
Created: 3 days ago
A
অগাষ্ট কোৎ
B
স্পেন্সার
C
বেহার্ডজ
D
ডারউইন
অগাস্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত, যিনি সামাজিক পরিবর্তনকে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ধারাবাহিক ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তার মতে, সমাজের অগ্রগতি কোনো দৈহিক শক্তির কারণে নয়, বরং মানুষের চিন্তা, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশের মাধ্যমে ঘটে। তিনি এই পরিবর্তনের ধারা ব্যাখ্যা করতে “ত্রয়স্তর সূত্র” (Law of Three Stages) প্রবর্তন করেন।
-
প্রথম স্তর: ধর্মগত (Theological Stage) — এখানে মানুষ প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করত। দেবতা ও আত্মার প্রভাবই ছিল মূল ব্যাখ্যা।
-
দ্বিতীয় স্তর: অধিবিদ্যা (Metaphysical Stage) — এই স্তরে মানুষ ঘটনাবলিকে বিমূর্ত ধারণা ও দর্শনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে শুরু করে। এটি ধর্ম থেকে যুক্তির দিকে উত্তরণের ধাপ।
-
তৃতীয় স্তর: দৃষ্টবাদ বা বৈজ্ঞানিক স্তর (Positive Stage) — এটি সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে মানুষ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও যুক্তির মাধ্যমে বাস্তব জগতের ব্যাখ্যা দেয়। এখানে বুদ্ধিবৃত্তি, বাস্তবতা ও প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান প্রধান হয়ে ওঠে।
অগাস্ট কোঁৎ মনে করতেন, দৃষ্টবাদ যুগই প্রকৃত বুদ্ধিবৃত্তিক যুগ, যেখানে মানবজাতি ধর্ম ও দর্শনের সীমা অতিক্রম করে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে সমাজ ও প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়। এইভাবে, তার ত্রয়স্তর সূত্র মানব সভ্যতার মানসিক ও সামাজিক বিকাশের একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করে।

0
Updated: 3 days ago
'যে মানুষ সমাজে বসবাস করে না, সে হয় পশু না হয় দেবতা'- উক্তিটি কে করেছেন?
Created: 2 days ago
A
প্লেটো
B
এরিস্টটল
C
সক্রেটিস
D
ভিকো
এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন যে মানুষ প্রকৃতিগতভাবে একটি সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রাণী (Social/Political Animal)। তাঁর মতে, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো সমাজে বসবাস করা, কারণ মানুষ একা থেকে নিজের পূর্ণতা অর্জন করতে পারে না। সমাজই মানুষের অস্তিত্ব, বিকাশ ও নৈতিক জীবনের ভিত্তি।
প্রধান ধারণাগুলো হলো—
-
সামাজিক স্বভাব: মানুষ জন্মগতভাবে সমাজে বাস করতে চায়। পরিবার, রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই তার জীবন অর্থপূর্ণ হয়।
-
সমাজের প্রয়োজনীয়তা: মানুষ একা টিকে থাকতে পারে না; খাদ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, ও সহযোগিতার জন্য সে সমাজের ওপর নির্ভরশীল।
-
সমাজবহির্ভূত মানুষ: এরিস্টটলের মতে, যে ব্যক্তি সমাজের বাইরে বাস করে বা সমাজের প্রয়োজন বোঝে না, সে হয় “পশু”— কারণ সে মানবিক বোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধহীন।
-
মানুষের পূর্ণতা সমাজে: সমাজ মানুষের নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করে। সমাজ ছাড়া মানুষ তার প্রকৃত রূপে বিকশিত হতে পারে না।
-
রাষ্ট্রের গুরুত্ব: এরিস্টটল আরও বলেন, মানুষ রাষ্ট্র বা সমাজে বাস করেই সুশৃঙ্খল ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করতে পারে; তাই সমাজ হলো মানুষের স্বাভাবিক ও অপরিহার্য অবস্থা।

0
Updated: 2 days ago