সাম্প্রতিক বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ কী?
A
শিক্ষার অভাব
B
বেকারত্ব
C
তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা
D
পিতামাতার বিবাহ বিচ্ছেদ
উত্তরের বিবরণ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কারণ এর পেছনে ভূমিকা রাখলেও, সবচেয়ে কার্যকর ও দ্রুত প্রভাবশালী কারণ হলো তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, যা কিশোরদের মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক আচরণে বড় প্রভাব ফেলছে।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা:
-
স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন কিশোরদের জন্য সহজলভ্য ও সুলভ।
-
অনিয়ন্ত্রিতভাবে সহিংস গেম, অশালীন ভিডিও, অপরাধমূলক কনটেন্ট ও নৈতিকহীন তথ্য কিশোরদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
-
সামাজিক মাধ্যমে গ্রুপ কালচার, অনলাইন চ্যালেঞ্জ ও ভার্চুয়াল প্রভাব তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে উৎসাহিত করছে।
২। পারিবারিক ভাঙন:
-
সাম্প্রতিক সময়ে পিতা-মাতার বিবাহবিচ্ছেদ ও পারিবারিক অস্থিরতা বেড়েছে, যা কিশোরদের মানসিক নিরাপত্তা নষ্ট করছে।
-
পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় অনেক কিশোর মানসিক চাপ ও একাকিত্বের ফলে বিপথে যাচ্ছে।
৩। শিক্ষা ও বেকারত্ব:
-
শিক্ষার অভাব বা বেকারত্ব বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও, সাম্প্রতিক কালের কিশোর অপরাধ বৃদ্ধিতে এটি সরাসরি প্রধান কারণ নয়।
-
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা ও সাইবার সচেতনতার অভাব কিশোরদের অপরাধ প্রবণতায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
৪। সামাজিক প্রভাব:
-
জনপ্রিয় সংস্কৃতি, অপরাধভিত্তিক নাটক বা ভিডিও কনটেন্ট এবং অনলাইন খ্যাতির লোভ অনেক কিশোরকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে।
অতএব, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো তথ্য প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণহীন ও অবারিত ব্যবহার, যা পারিবারিক তদারকি ও সামাজিক সচেতনতার অভাবে কিশোর সমাজে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা সৃষ্টি করছে।

0
Updated: 2 days ago
'সমাজে মৌল কাঠামোর পরিবর্তন হলে উপরি কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে'-কে বলেছেন?
Created: 1 day ago
A
ওয়েভার
B
সরোকিন
C
মার্ক্র
D
স্পেন্সার
কার্ল মার্কস সমাজব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে সমাজের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর মতে, সমাজের সব প্রতিষ্ঠান, ধারণা ও মূল্যবোধ মূলত অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্যই তিনি সমাজকাঠামোকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করেছেন।
এই দুটি কাঠামো হলো—
১। মৌল কাঠামো (Base): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি, যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা, উৎপাদন সম্পর্ক, সম্পদের বণ্টন ও শ্রমের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত। এই কাঠামো নির্ধারণ করে কে উৎপাদন করবে, কারা উৎপাদনের উপকরণের মালিক, এবং শ্রম কীভাবে ব্যবহৃত হবে। মার্কসের মতে, সমাজের বাস্তব রূপ ও শক্তির সম্পর্ক এই অর্থনৈতিক কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
২। উপরি কাঠামো (Superstructure): এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর নির্মিত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমষ্টি। যেমন—রাষ্ট্র, আইন, শিক্ষা, ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। এগুলো সমাজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রতিফলিত ও রক্ষা করে।
মার্কস বলেন, অর্থনীতিই সমাজের ভিত্তি, তাই যখন মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটে, তখন স্বাভাবিকভাবেই উপরি কাঠামোতেও পরিবর্তন আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সমাজের উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটলে তার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাতেও রূপান্তর ঘটে।
অতএব, মার্কসের এই তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানে এক মৌলিক ধারণা—যে অর্থনৈতিক কাঠামোই সমাজের সব পরিবর্তনের চালিকা শক্তি।

0
Updated: 1 day ago
ভারতে মুসলিম জাগরনের অগ্রদূত কে ছিলেন?
Created: 1 day ago
A
স্যার সৈয়দ আহমদ
B
স্যার সলিমুল্লাহ
C
মাওলানা আবদুল কালাম আজাদ
D
নওয়াব আবদুল গনি
ভারতে মুসলিম সমাজের আধুনিক জাগরণের পথিকৃৎ ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান (Sir Syed Ahmad Khan, 1817–1898)। তিনি মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার বিস্তার ঘটিয়ে একটি নতুন সমাজচেতনার সূচনা করেন। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে শিক্ষাগত ও সামাজিক পুনর্জাগরণের সূচনা ঘটে।
মূল তথ্যগুলো হলো—
১। আলীগড় আন্দোলনের সূচনা: স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৭৫ সালে আলীগড় আন্দোলন (Aligarh Movement) শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করা এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা: তাঁর উদ্যোগে ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মোহাম্মদান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ (Mohammedan Anglo-Oriental College), যা পরবর্তীতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (Aligarh Muslim University) নামে বিকশিত হয়।
৩। আধুনিক শিক্ষা ও যুক্তিবাদ: তিনি মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যাতে মুসলিম সমাজ আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
৪। সামাজিক প্রভাব: আলীগড় আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কার ও আত্মচেতনার বিকাশ ঘটায় এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংগঠন গঠনে (যেমন মুসলিম লীগ) প্রভাব ফেলে।
৫। ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই আন্দোলনের ফলে মুসলমান সমাজে আধুনিকীকরণ, জাতীয় চেতনা ও আত্মনির্ভরতা-এর ধারণা শক্তিশালী হয়, যা পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করে।
সুতরাং, স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও তাঁর আলীগড় আন্দোলনই ছিল ভারতে মুসলিম জাগরণের মূল চালিকা শক্তি, যা মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষা ও চিন্তার ধারায় যুক্ত করে নতুন যুগের সূচনা করেছিল।

0
Updated: 1 day ago
'শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি'-কে বলেছেন?
Created: 2 days ago
A
মার্ক্স
B
ওয়েভার
C
মর্গান
D
মার্টন
“শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি” — এই উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে কার্ল মার্ক্স (Karl Marx)-এর শ্রেণী তত্ত্বের (Class Theory) মূল ভিত্তিকে প্রকাশ করে। মার্ক্স সমাজকে অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করেন এবং বলেন যে, মানুষের সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয় তার উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা দ্বারা।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। শ্রেণীভিত্তিক সমাজ:
-
মার্ক্স সমাজকে শ্রেণীভিত্তিক হিসেবে দেখেছেন, যেখানে শ্রেণী নির্ধারিত হয় অর্থনৈতিক সম্পদের মালিকানা ও উৎপাদনের উপকরণে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে।
২। বুর্জোয়া শ্রেণী (Bourgeoisie):
-
এরা হলো উৎপাদনের উপকরণের মালিক, যেমন—কারখানা, জমি, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি।
-
এই শ্রেণী শ্রমিকদের শ্রম কিনে মুনাফা অর্জন করে।
৩। প্রলেতারিয়েট শ্রেণী (Proletariat):
-
এরা হলো শ্রমজীবী শ্রেণী, যাদের নিজের কোনো সম্পদ বা উৎপাদনের উপকরণ নেই।
-
তারা জীবিকার জন্য তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করে এবং মজুরি পায়।
৪। শ্রেণী দ্বন্দ্ব (Class Conflict):
-
এই দুই শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্ব সমাজের পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
-
বুর্জোয়া শ্রেণী সম্পদ ও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, আর প্রলেতারিয়েট শ্রেণী মুক্তি ও সমতা চায়।
৫। চূড়ান্ত লক্ষ্য:
-
মার্ক্সের মতে, শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে পুঁজিবাদ ভেঙে শ্রেণীহীন সমাজ (Classless Society) প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে উৎপাদনের উপকরণ হবে সমষ্টিগত মালিকানায়।
অতএব, মার্ক্সের মতে সমাজে শ্রেণী বিভাজনের মূল কারণ হলো সম্পত্তি ও উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা, এবং সমাজের ইতিহাস আসলে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।

0
Updated: 2 days ago