ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে বাংলার গ্রামীণ সমাজে জমি ও সম্পত্তির মালিকানা ছিল বহুমাত্রিক, যা মূলত পারিবারিক, যৌথ ও রাজকীয় মালিকানা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করত। এই মালিকানা ব্যবস্থা সামাজিক প্রথা, উত্তরাধিকার এবং রাজস্ব কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। পারিবারিক মালিকানা (Family / Individual Ownership):
-
জমি ও গৃহসম্পত্তি সাধারণত পরিবারের বড় সদস্য বা পিতৃপুরুষের নিয়ন্ত্রণে থাকত।
-
কৃষক পরিবার নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করত এবং উৎপাদিত ফসল ও সম্পত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখত।
-
এটি ছিল উত্তরাধিকারভিত্তিক, অর্থাৎ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মালিকানা হস্তান্তর হতো।
২। যৌথমালিকানা বা সামাজিক মালিকানা (Communal / Joint Ownership):
-
কিছু জমি বা সম্পদ ছিল গ্রাম বা সম্প্রদায়ের যৌথ মালিকানায়, যা সবাই মিলে ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করত।
-
উদাহরণস্বরূপ: চারণভূমি, বনভূমি, নদী, পুকুর ও পানি সংরক্ষণ স্থান—এসব ছিল গ্রামের সাধারণ সম্পদ।
-
এর ব্যবস্থাপনা ছিল সম্মিলিত এবং সমাজের সদস্যদের পারস্পরিক সমঝোতার ওপর নির্ভরশীল।
৩। রাজকীয় মালিকানা (Royal Ownership):
-
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে জমির চূড়ান্ত মালিক ছিলেন রাজা বা শাসকগোষ্ঠী।
-
রাজা প্রজাদের কাছ থেকে রাজস্ব বা খাজনা আদায় করতেন, যা রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম উৎস ছিল।
-
এই ব্যবস্থায় কৃষকরা জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন না; তারা কেবল রাজস্ব প্রদানকারী চাষি বা প্রজা হিসেবে বিবেচিত হতো।
৪। অপশনের বিশ্লেষণ:
-
প্রশ্নে প্রদত্ত “গ” (পারিবারিক মালিকানা) ও “ঘ” (যৌথমালিকানা বা রাজকীয় মালিকানা) — উভয় ব্যবস্থাই বিদ্যমান ছিল।
-
তবে ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, “ঘ” অর্থাৎ রাজকীয় মালিকানা ব্যবস্থা ছিল অধিক প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্য।
অতএব, ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে বাংলার গ্রামীণ সমাজে জমির মালিকানা ব্যবস্থা ছিল উত্তরাধিকারভিত্তিক ও রাজকীয় নিয়ন্ত্রণাধীন, যেখানে কৃষকরা জমিতে কাজ করলেও প্রকৃত মালিক ছিল রাজা বা শাসকগোষ্ঠী।