'শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি'-কে বলেছেন?
A
মার্ক্স
B
ওয়েভার
C
মর্গান
D
মার্টন
উত্তরের বিবরণ
“শ্রেণীর ভিত্তি হচ্ছে সম্পত্তি” — এই উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে কার্ল মার্ক্স (Karl Marx)-এর শ্রেণী তত্ত্বের (Class Theory) মূল ভিত্তিকে প্রকাশ করে। মার্ক্স সমাজকে অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করেন এবং বলেন যে, মানুষের সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয় তার উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা দ্বারা।
মূল বিষয়গুলো হলো:
১। শ্রেণীভিত্তিক সমাজ:
-
মার্ক্স সমাজকে শ্রেণীভিত্তিক হিসেবে দেখেছেন, যেখানে শ্রেণী নির্ধারিত হয় অর্থনৈতিক সম্পদের মালিকানা ও উৎপাদনের উপকরণে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে।
২। বুর্জোয়া শ্রেণী (Bourgeoisie):
-
এরা হলো উৎপাদনের উপকরণের মালিক, যেমন—কারখানা, জমি, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি।
-
এই শ্রেণী শ্রমিকদের শ্রম কিনে মুনাফা অর্জন করে।
৩। প্রলেতারিয়েট শ্রেণী (Proletariat):
-
এরা হলো শ্রমজীবী শ্রেণী, যাদের নিজের কোনো সম্পদ বা উৎপাদনের উপকরণ নেই।
-
তারা জীবিকার জন্য তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করে এবং মজুরি পায়।
৪। শ্রেণী দ্বন্দ্ব (Class Conflict):
-
এই দুই শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্ব সমাজের পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
-
বুর্জোয়া শ্রেণী সম্পদ ও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, আর প্রলেতারিয়েট শ্রেণী মুক্তি ও সমতা চায়।
৫। চূড়ান্ত লক্ষ্য:
-
মার্ক্সের মতে, শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে পুঁজিবাদ ভেঙে শ্রেণীহীন সমাজ (Classless Society) প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে উৎপাদনের উপকরণ হবে সমষ্টিগত মালিকানায়।
অতএব, মার্ক্সের মতে সমাজে শ্রেণী বিভাজনের মূল কারণ হলো সম্পত্তি ও উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা, এবং সমাজের ইতিহাস আসলে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।

0
Updated: 1 day ago
কোন সমাজে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে?
Created: 1 day ago
A
পশুপালন সমাজ
B
উদ্যান সমাজ
C
কৃষি সমাজ
D
আদিম সমাজ
মানব সমাজে স্থায়ী বসতির সূচনা মানব সভ্যতার বিকাশে এক ঐতিহাসিক মোড় পরিবর্তনের ঘটনা। কৃষির উদ্ভবের মাধ্যমে মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে এক স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, যা সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে।
মূল বিষয়গুলো হলো—
১। কৃষি সমাজে স্থায়ী বসতির সূচনা: স্থায়ী বসবাস শুরু হয় কৃষি সমাজে (Agrarian/Agricultural Society), কারণ কৃষির জন্য জমি ও পানির নিয়মিত ব্যবহার প্রয়োজন ছিল। ফলে মানুষ জমির কাছাকাছি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে।
২। প্রাথমিক স্থায়ী বসতি: স্থায়ী বসতির শুরু হয় নব্যপাথর যুগে (Neolithic Age), যখন মানুষ প্রথম কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু করে।
৩। উদাহরণ: প্রাচীন স্থায়ী বসতির গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জেরিকো (Jericho), কাতাল হুয়িউক (Çatalhöyük) এবং হালসা (Halsa)—যেখানে নিয়মিত কৃষিকাজ, পশুপালন ও সামাজিক সংগঠনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৪। পশুপালন যুগের বৈশিষ্ট্য: পশুপালন যুগে মানুষ পশুসম্পদ রক্ষার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেত; তখনো স্থায়ী বসবাস গড়ে ওঠেনি। তবে এই সময়েই ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা জন্ম নিতে শুরু করে।
৫। কৃষি যুগের পরিবর্তন: কৃষি চাষাবাদ শুরু হলে জমি ও ফসলের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কারণে মানুষ এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এর ফলে গ্রাম, সম্প্রদায় ও প্রাথমিক সামাজিক কাঠামোর উদ্ভব ঘটে।
সারসংক্ষেপে, স্থায়ী বসতির সূচনা কৃষি বিপ্লবের (Agricultural Revolution) ফল, যা মানব সমাজকে যাযাবর জীবন থেকে সংগঠিত সমাজে রূপান্তরিত করে এবং সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে।

0
Updated: 1 day ago
সমাজে পরিবারের প্রধান কাজ কী?
Created: 1 day ago
A
অর্থনৈতিক উৎপাদন
B
গৃহস্থালী ব্যবস্থাপনা
C
শিশুর লালন-পালন ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা
D
শিক্ষাদান
পরিবার সমাজের মৌলিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে সমাজ টিকে থাকে, নতুন প্রজন্ম গড়ে ওঠে এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। পরিবারের কাজ শুধু সদস্যদের একত্রে রাখাই নয়, বরং সামাজিক ও মানসিক বিকাশেও এটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
পরিবারের প্রধান কাজসমূহ হলো—
১। সন্তান জন্মদান ও লালনপালন: পরিবার নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয় এবং শিশুদের লালনপালনের মাধ্যমে সমাজে নতুন সদস্য যুক্ত করে। এর মাধ্যমে মানবজাতির ধারাবাহিকতা ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
২। সংস্কার ও সামাজিকীকরণ (Socialization): পরিবারই প্রথম সামাজিক বিদ্যালয়, যেখানে শিশু ভাষা, আচরণ, মূল্যবোধ ও সামাজিক নিয়মনীতি শেখে। এর মাধ্যমেই তার মধ্যে সামাজিক দক্ষতা, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
৩। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা (Protection & Security): পরিবার সদস্যদের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের যত্ন ও সহায়তা নিশ্চিত করে।
৪। মানসিক সমর্থন ও ভালোবাসা: পরিবার সদস্যদের মধ্যে আবেগীয় বন্ধন, ভালোবাসা ও সহানুভূতি তৈরি করে, যা মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৫। অর্থনৈতিক সহায়তা: পরিবারের মাধ্যমে সদস্যরা একে অপরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে, শ্রম ও সম্পদ ভাগাভাগি করে জীবনযাত্রা পরিচালনা করে।
সারসংক্ষেপে, পরিবার সমাজের ভিত্তি, যা জন্ম, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও ভালোবাসার কেন্দ্র হিসেবে মানব জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

0
Updated: 1 day ago
কোন সমাজ বিজ্ঞানী সামাজিক প্রপঞ্চ ও ঘটনাবলী বিশ্লেষণ আরোহ পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন?
Created: 3 days ago
A
স্পেন্সার
B
ডুর্খীম
C
ফ্রয়েড
D
জিন্সবার্গ
হার্বার্ট স্পেন্সার (Herbert Spencer) সমাজবিজ্ঞানের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, যিনি সমাজকে একটি জীবন্ত সংগঠনের (Social Organism) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মতে, সমাজও জীবের মতোই বিভিন্ন অঙ্গ বা অংশ নিয়ে গঠিত, যা পারস্পরিক নির্ভরশীলভাবে কাজ করে এবং সম্মিলিতভাবে সমাজের স্থিতি বজায় রাখে।
-
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজও জীবের মতো জন্ম, বিকাশ ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
-
স্পেন্সার সমাজ বিশ্লেষণে জৈব উপমা (Organic Analogy) ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন যে, যেমন জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—যেমন পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম—পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজকে টিকিয়ে রাখে।
-
তিনি অভিজ্ঞতাভিত্তিক তথ্য (empirical data) থেকে সমাজের বিকাশ ও গঠন বোঝার চেষ্টা করেন, অর্থাৎ তত্ত্বের পরিবর্তে পর্যবেক্ষণ ও বাস্তব তথ্যকে গুরুত্ব দেন।
-
তার গবেষণায় তিনি আরোহ পদ্ধতি (Inductive Method) ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সামাজিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সমাজের সাধারণ নিয়ম ও নীতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
-
স্পেন্সারের সমাজদৃষ্টিতে উন্নয়ন বা বিবর্তন (Evolution) ছিল একটি কেন্দ্রীয় ধারণা—তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজ সরল অবস্থা থেকে জটিলতার দিকে বিকশিত হয়, ঠিক জীবের বিবর্তনের মতো।
এইভাবে হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজকে একটি জৈবিক ও ক্রমবিকাশমান ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং সমাজবিজ্ঞানে বিবর্তনবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি স্থাপন করেন।

0
Updated: 3 days ago