সাঁওতাল উপজাতি ঐতিহাসিকভাবে কোন পেশার সাথে জড়িত?
A
মৎস্য শিকার
B
কৃষি ও শ্রম
C
কুটির শিল্প ও বাণিজ্য
D
শিক্ষা
উত্তরের বিবরণ
সাঁওতাল উপজাতি (Santals) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী গোষ্ঠী, যারা ঐতিহাসিকভাবে কৃষিনির্ভর ও বনজীবিকাভিত্তিক সমাজব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাদের জীবনযাপন মূলত ভূমি, প্রকৃতি ও পারিবারিক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
-
প্রধান পেশা: সাঁওতালদের মূল পেশা ছিল কৃষিকাজ। তারা নিজেরা জমি চাষ করত এবং পরিবারের সদস্যরাই কৃষিশ্রমে অংশগ্রহণ করত।
-
ফসল উৎপাদন: তারা প্রধানত ধান, মাষকলাই, আখ, তিল, ভুট্টা ও বিভিন্ন সবজি চাষ করত। কৃষির পাশাপাশি ফলমূল সংগ্রহ, শিকার ও বনজ পণ্যের ওপরও তাদের নির্ভরতা ছিল।
-
পারিবারিক শ্রমব্যবস্থা: সাঁওতাল সমাজে কৃষিকাজ হতো পরিবারভিত্তিক সমবায়ী শ্রমে, অর্থাৎ পরিবারের সব সদস্য একত্রে মাঠে কাজ করত।
-
জমির প্রতি সম্পর্ক: তাদের জমির সঙ্গে ছিল আবেগপূর্ণ ও সামাজিক সম্পর্ক, কারণ ভূমি শুধু জীবিকার উৎস নয়, বরং তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
-
অবস্থান: বাংলাদেশে তারা মূলত রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও নওগাঁ অঞ্চলে বসবাস করে, যেখানে কৃষিই তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
অতএব, সাঁওতাল উপজাতির সমাজ ছিল কৃষিনির্ভর, পারিবারিক শ্রমনির্ভর ও প্রকৃতিনির্ভর জীবনব্যবস্থা, যা তাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐক্যের মূলে নিহিত।

0
Updated: 2 days ago
ভৌগলিকভাবে সকল নরগোষ্ঠীকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
Created: 1 day ago
A
৮
B
৭
C
৯
D
৬
আধুনিক ক্লাসিকাল অ্যানথ্রোপোলজি বা Modern Ethnology / Human Geography অনুযায়ী বিশ্বের মানুষকে ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক ভিত্তিতে প্রধানত কয়েকটি বৃহৎ নৃগোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়। গবেষক ও গ্রন্থভেদে এ শ্রেণিবিভাগে পার্থক্য থাকলেও সাধারণভাবে ৬টি প্রধান নৃগোষ্ঠী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত।
এই ছয়টি ভৌগোলিক ভিত্তিক নৃগোষ্ঠী হলো—
১। ককেশীয় (Caucasoid / European): ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার জনগোষ্ঠী এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এদের ত্বক সাধারণত উজ্জ্বল, নাক সরু এবং চুল তরঙ্গাকৃতির।
২। মঙ্গলোয়েড (Mongoloid / East Asian): পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণ এই শ্রেণিতে পড়ে। এদের চোখ সরু, মুখ সমতল এবং ত্বক হলদে আভাযুক্ত।
৩। নিগ্রোয়েড (Negroid / African): সাব-সাহারান আফ্রিকার জনগণ এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এদের ত্বক কালো, চুল কোঁকড়ানো এবং ঠোঁট পুরু হয়।
৪। অস্ট্রেলয়েড (Australoid): অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি ও মেলানেশিয়ার অধিবাসীরা এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের ত্বক গাঢ় বাদামী, নাক চওড়া এবং চুল কোঁকড়ানো।
৫। আমেরিকান আদিবাসী (American Indian / Native American): উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীরা এই শ্রেণির। এদের গাত্রবর্ণ তামাটে, মুখ লম্বাটে এবং চুল সোজা।
৬। প্যাসিফিক দ্বীপবাসী (Pacific Islander / Polynesian & Micronesian): ওশেনিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপাঞ্চলের অধিবাসীরা এই গোষ্ঠীতে পড়ে। এদের শারীরিক গঠন শক্তিশালী এবং গাত্রবর্ণ মাঝারি গাঢ়।
তবে উল্লেখযোগ্য যে, কিছু নৃতত্ত্ববিদ এই শ্রেণিবিভাগকে ৫ ভাগে বা ৮ ভাগে ভাগ করেছেন। এটি মূলত গবেষকের বিশ্লেষণ ও তথ্যভিত্তিক পার্থক্যের কারণে হয়ে থাকে। তাই পরীক্ষাভেদে সঠিক উত্তর নির্ভর করে পিএসসি বা প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত বিভাজনের ওপর।

0
Updated: 1 day ago
মাক্স ওয়েভার কর্তৃত্বকে কয়ভাগে ভাগ করেছেন?
Created: 2 days ago
A
৪
B
৩
C
৫
D
২
ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) সমাজে কর্তৃত্বের উৎস ও ধরন বিশ্লেষণ করে এটিকে তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে, কর্তৃত্বের বৈধতা নির্ভর করে মানুষ কেন ও কীভাবে শাসকের আদেশ মেনে নেয় তার ওপর। প্রতিটি কর্তৃত্বের ধরন সমাজে ভিন্ন সামাজিক কাঠামো ও নেতৃত্বব্যবস্থা তৈরি করে।
তিনটি প্রধান কর্তৃত্ব হলো—
-
চিহ্নিত বা ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব (Traditional Authority):
-
উৎস: প্রাচীন প্রথা, ঐতিহ্য ও বংশগত উত্তরাধিকার।
-
বৈশিষ্ট্য: মানুষ এই কর্তৃত্ব মেনে নেয় কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত ও প্রচলিত।
-
উদাহরণ: রাজা, উপজাতি প্রধান, বা গ্রামীণ নেতা।
-
-
চারিত্রিক বা বৈধ-আইনগত কর্তৃত্ব (Legal-Rational Authority):
-
উৎস: আইন, বিধি ও আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন।
-
বৈশিষ্ট্য: এই কর্তৃত্ব যুক্তি ও আইননির্ভর; ব্যক্তি নয়, বরং পদ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য থাকে।
-
উদাহরণ: আধুনিক রাষ্ট্র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিচারব্যবস্থা বা সরকারি প্রতিষ্ঠান।
-
-
ক্যারিশমাটিক বা ব্যক্তিত্বভিত্তিক কর্তৃত্ব (Charismatic Authority):
-
উৎস: নেতার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, আদর্শ, সাহস বা আধ্যাত্মিক শক্তি।
-
বৈশিষ্ট্য: মানুষ নেতার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও অনুপ্রেরণার কারণে তার নির্দেশ অনুসরণ করে।
-
উদাহরণ: ধর্মীয় নেতা, বিপ্লবী নেতা বা সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ব্যতিক্রমী ব্যক্তি।
-
ওয়েবারের এই বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞানে নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে মৌলিক ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়।

0
Updated: 2 days ago
'আদর্শবাদী,আদর্শ ভিত্তিক এবং ইন্ডীয়গ্রাহ্য' এই ৩টির চক্রাকার আবর্তনে সমাজ পরিবর্তন হয়'-কার উক্তি?
Created: 1 day ago
A
সরোকিন
B
টয়েনবি
C
চ্যাপিন
D
প্যারোটো
পিতিরিম এ. সোরোকিন সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা চক্রবৃত্তীয় সামাজিক পরিবর্তন তত্ত্ব (Cyclic Theory of Social Change) নামে পরিচিত। তাঁর মতে, সমাজে পরিবর্তন সরলরেখায় ঘটে না; বরং এটি একধরনের চক্রাকার প্রক্রিয়া, যেখানে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।
তত্ত্বের মূল বিষয়গুলো হলো—
১। চক্রবৃত্তীয় প্রকৃতি (Cyclic Nature): সমাজ ও সংস্কৃতি কখনও একদিকে অগ্রসর হয়ে স্থায়ী থাকে না। বরং তা এক ধরণের উত্থান-পতনের চক্রে ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ, সামাজিক পরিবর্তন সরলরেখায় (Linear) নয়, বরং চক্রাকারভাবে (Cyclical) ঘটে।
২। সংস্কৃতির তিনটি মানসিক রূপ (Three Types of Cultural Mentality):
-
Ideational (আদর্শবাদী): এই ধরণের সংস্কৃতিতে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রাধান্য পায়। বাস্তবতা এখানে ঈশ্বর, আত্মা ও নৈতিক আদর্শ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
-
Sensate (ইন্দ্রিয়নির্ভর): এই পর্যায়ে সমাজ বস্তুবাদী ও ভোগবাদী হয়ে ওঠে। ইন্দ্রিয়সুখ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুগত উন্নয়ন এখানে মূল মূল্যবোধ হিসেবে দেখা যায়।
-
Idealistic বা Mixed (মিশ্র): এই ধাপে আদর্শবাদী ও ইন্দ্রিয়নির্ভর মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটে। সমাজ একদিকে নৈতিক আদর্শকে ধরে রাখে, অন্যদিকে বাস্তব ও বস্তুগত উন্নয়নেও গুরুত্ব দেয়।
৩। চক্রাকার পরিবর্তনের ধারা (Cyclical Shift): সমাজ ও সংস্কৃতি এই তিন রূপে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়—
Ideational → Idealistic → Sensate → আবার Ideational। এইভাবে এক পর্যায় শেষ হলে অন্যটি শুরু হয়, এবং সমাজ তার মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্গঠন করে।
সুতরাং, সোরোকিনের মতে, সামাজিক পরিবর্তন কখনো স্থায়ী নয়; বরং এটি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারাবাহিক ওঠানামার এক অনন্ত চক্র, যা মানব সভ্যতার বিকাশকে নিরন্তর গতিশীল রাখে।

0
Updated: 1 day ago