নির্ভরতার তত্ত্বে অনুমিত ধারনা কোনটি?
A
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো উন্নত রাষ্ট্রের উপর নিরভরশীল
B
রাষ্ট্রের উন্নয়ন আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল
C
রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নীতির উপর নির্ভরশীল
D
ব্যক্তি, সমাজ, ও রাষ্ট্র পরস্পর নির্ভরশীল
উত্তরের বিবরণ
নির্ভরতা তত্ত্ব (Dependency Theory) হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাজ-অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা অর্থনৈতিক অনুন্নয়নকে বোঝার একটি বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এই তত্ত্বের মূল ধারণা হলো—বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এমনভাবে গঠিত, যা উন্নত দেশগুলিকে লাভবান করে এবং অনুন্নত দেশগুলিকে নির্ভরশীল অবস্থায় আবদ্ধ রাখে।
এই তত্ত্বটি প্রথম প্রস্তাব করেন আর্জেন্টিনার অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক রাউল প্রেবিশ ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে। পরবর্তীতে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে এই তত্ত্বটি লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।
নির্ভরতা তত্ত্বের মূল ধারণাগুলো হলো:
১) বিশ্ব অর্থনীতিতে কেন্দ্র ও প্রান্তের বিভাজন: বিশ্ব অর্থনীতি দুটি ভাগে বিভক্ত — ধনী কেন্দ্র (Core) এবং দরিদ্র প্রান্ত (Periphery)। কেন্দ্রের দেশগুলো প্রযুক্তি, শিল্প এবং মূলধন নিয়ন্ত্রণ করে, আর প্রান্তের দেশগুলো কাঁচামাল ও সস্তা শ্রম সরবরাহ করে।
২) অসাম্য বিনিময়: অনুন্নত দেশগুলো বিশ্ববাজারে সস্তা কাঁচামাল ও শ্রম বিক্রি করে, কিন্তু উন্নত দেশগুলো সেই উপকরণ ব্যবহার করে উচ্চমূল্যের প্রস্তুত পণ্য তৈরি করে আবার অনুন্নত দেশগুলোকেই বিক্রি করে।
৩) অর্থনৈতিক শোষণ ও পুঁজি হ্রাস: এই প্রক্রিয়ায় অনুন্নত দেশগুলোর মূলধন ও উৎপাদনশীল ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়, যা তাদের স্থায়ীভাবে নির্ভরশীল অবস্থায় রাখে।
৪) উন্নয়নের সীমাবদ্ধতা: নির্ভরতা তত্ত্ব অনুযায়ী, এই বৈশ্বিক কাঠামোর মধ্যে প্রকৃত উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব, কারণ প্রান্তের দেশগুলো সবসময় কেন্দ্রের অর্থনৈতিক স্বার্থের অধীন থাকে।
বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি:
-
ফার্নান্দো হেনরিক কার্ডোসো (ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি, ১৯৯৫–২০০৩) যুক্তি দেন যে, নির্ভরতার মধ্যেও কিছু মাত্রার উন্নয়ন সম্ভব, যদি দেশগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও শিল্প উন্নয়নে মনোযোগ দেয়।
-
অন্যদিকে, আন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাঙ্ক, একজন জার্মান-আমেরিকান অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ, মত দেন যে এই নির্ভরতা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো অ-পুঁজিবাদী (সমাজতান্ত্রিক) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
অতএব, নির্ভরতা তত্ত্ব বিশ্ব অর্থনীতির বৈষম্য ও অনুন্নয়নের কারণ ব্যাখ্যা করে দেখায় যে, বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া মূলত একপাক্ষিক, যেখানে উন্নত দেশগুলোর সমৃদ্ধি অনুন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে।

0
Updated: 18 hours ago
বিভারিজ রিপোর্ট অনুসারে পঞ্চদৈত্যগুলো হলো-
Created: 18 hours ago
A
অজ্ঞতা, অদক্ষতা, অসচেতনতা, অবহেলা, অসমতা
B
রোগ, দুর্ভিক্ষ, অভাব, প্রতিযোগিতা, অলসতা
C
অভাব, রোগ, অদক্ষতা,নিরুৎসাহ, অলসতা
D
অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা, অলসতা
অভাবযুক্ত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম বিভারিজ ‘পঞ্চদৈত্য (Five Giants)’ নামে পরিচিত পাঁচটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা অক্টোপাসের মতো সমাজকে জড়িয়ে রেখেছিল। তিনি মনে করতেন, এই পাঁচটি দৈত্যই মানবসমাজের অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় এবং সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিভারিজ রিপোর্ট, যা ১৯৪২ সালে প্রকাশিত একটি ব্রিটিশ সরকারি প্রতিবেদন, যুক্তরাজ্যে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare State) প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে। এই প্রতিবেদনে সমাজকল্যাণ, অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
বিভারিজের নির্ধারিত “পঞ্চদৈত্য” ছিল—
১) অভাব (Want): দারিদ্র্য ও আর্থিক অনটন দূরীকরণের আহ্বান।
২) রোগ (Disease): সবার জন্য কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রস্তাব।
৩) অজ্ঞতা (Ignorance): শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে জনগণকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করা।
৪) মলিনতা (Squalor): বসবাসযোগ্য পরিবেশ ও উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করা।
৫) অলসতা (Idleness): কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস করা।
বিভারিজ এই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে প্রস্তাব দেন একটি “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত” (From Cradle to Grave) একীভূত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Social Security System) প্রতিষ্ঠার, যাতে প্রত্যেক নাগরিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পেতে পারে।
এই রিপোর্ট পরবর্তীতে ব্রিটিশ সমাজে কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে এবং সমাজকর্ম ও সামাজিক নীতিনির্ধারণে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

0
Updated: 18 hours ago
Rapport' শব্দটি সমাজকর্মে ব্যবহৃত হয় কী বোঝাতে-
Created: 18 hours ago
A
ব্যক্তিগত মর্যাদা
B
প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব
C
অর্থগত সম্পর্ক
D
পেশাগত সম্পর্ক
সমাজকর্মে ‘Rapport’ বলতে বোঝানো হয় সমাজকর্মী এবং সাহায্যপ্রার্থীর (ক্লায়েন্ট) মধ্যে গড়ে ওঠা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গঠিত ঘনিষ্ঠ কিন্তু পেশাগত সম্পর্ক। এটি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ কার্যকর সহায়তা প্রদান এবং সমস্যা সমাধানের ভিত্তি এই সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।
এই সম্পর্কের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট নিজের সমস্যা, অনুভূতি ও উদ্বেগ সম্পর্কে খোলামেলা ও নিরাপদভাবে কথা বলতে পারেন। অন্যদিকে, সমাজকর্মী ক্লায়েন্টের পরিস্থিতি গভীরভাবে বোঝার সুযোগ পান এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সহায়তা পরিকল্পনা করতে পারেন।
‘Rapport’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
১) পারস্পরিক বিশ্বাস (Mutual Trust): ক্লায়েন্ট সমাজকর্মীর প্রতি আস্থা রাখেন যে তিনি তার সমস্যা গোপন রাখবেন ও সদর্থকভাবে সাহায্য করবেন।
২) শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি (Respect and Empathy): সমাজকর্মী ক্লায়েন্টের অনুভূতি, মতামত ও অভিজ্ঞতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
৩) বোঝাপড়া ও গ্রহণযোগ্যতা (Understanding and Acceptance): সমাজকর্মী ক্লায়েন্টকে বিচার না করে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানকে বুঝতে চেষ্টা করেন।
৪) খোলামেলা যোগাযোগ (Open Communication): ক্লায়েন্ট ও সমাজকর্মীর মধ্যে আন্তরিক ও অবাধ সংলাপ স্থাপিত হয়।
৫) সহযোগিতার মনোভাব (Cooperation): উভয়েই সমস্যার সমাধানে একসাথে কাজ করেন, যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফলপ্রসূ হয়।

0
Updated: 18 hours ago
মানব উন্নয়ন সূচক কোন্ তিনটি বিষয়কে নির্দেশ করে?
Created: 18 hours ago
A
শিক্ষা, আয় ও জীবন প্রত্যাশা
B
স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও শিক্ষা
C
শিক্ষা, আয় ও প্রযুক্তি
D
স্বাস্থ্য, পরিবেশ, ও আয়
মানব উন্নয়ন সূচক (HDI) হলো একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, যার মাধ্যমে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে না, বরং মানুষের জীবনমান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মানবকল্যাণের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এই সূচকটি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) প্রণয়ন করে।
HDI মূলত তিনটি মৌলিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গঠিত—
১) দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন: এটি পরিমাপ করা হয় জন্মের সময় প্রত্যাশিত গড় আয়ু (Life Expectancy at Birth) দ্বারা।
২) জ্ঞান বা শিক্ষা স্তর: এটি নির্ধারণ করা হয় গড় শিক্ষাবর্ষ (Mean Years of Schooling) এবং প্রত্যাশিত শিক্ষাবর্ষ (Expected Years of Schooling) — এই দুই সূচকের সমন্বয়ে।
৩) শালীন জীবনযাত্রার মান: এটি নির্ণয় করা হয় প্রতি ব্যক্তির মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (GNI per capita) দিয়ে, যা ক্রয়ক্ষমতা সমতা (PPP) অনুযায়ী গণনা করা হয়।
এই তিনটি সূচকের গড় নির্ণয় করে একটি দেশের মানব উন্নয়ন সূচক (HDI) নির্ধারণ করা হয়। সূচকটি ০ থেকে ১-এর মধ্যে মান পায়— যেখানে ১-এর কাছাকাছি মান নির্দেশ করে উচ্চ মানব উন্নয়ন এবং ০-এর কাছাকাছি মান নির্দেশ করে নিম্ন মানব উন্নয়ন।
অতএব, মানব উন্নয়নের প্রকৃত লক্ষ্য হলো মানুষের সক্ষমতা, সুযোগ ও জীবনমান বৃদ্ধি করা, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়।

0
Updated: 18 hours ago