"পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন/ মানুষ তব ঋণী পৃথিবীর কাছে" উদ্ধৃতিটি 'বলাকা 'কাব্যের কোন কবিতার অংশ?
A
সুরঞ্জনা
B
সুদর্শনা
C
সুচেতনা
D
সবিতা
উত্তরের বিবরণ
এই চরণদুটি জীবনানন্দ দাশের ‘সুচেতনা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি পৃথিবীর প্রতি মানুষের চিরন্তন ঋণ ও মানবসভ্যতার সংকটময় অবস্থাকে গভীর দার্শনিক ভাবনায় প্রকাশ করেছেন। মানুষ যতই প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হোক না কেন, পৃথিবীর প্রতি তার নির্ভরতা ও ঋণ অস্বীকার করা যায় না।
-
কবি বলেছেন, পৃথিবী এখন গভীর অসুখে আক্রান্ত, যা মানুষের লোভ, স্বার্থপরতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফল।
-
মানুষের ক্রমবর্ধমান অসচেতনতা ও অবক্ষয় পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করেছে, যার পরিণতিতে পৃথিবী আজ ক্লান্ত ও আহত।
-
তবুও কবি মনে করেন, মানুষ পৃথিবীর কাছেই চিরঋণী, কারণ পৃথিবীই তাকে বাঁচার শক্তি, আশ্রয় ও সম্পদ প্রদান করে।
-
এই চরণে একদিকে পৃথিবীর অসুস্থতার প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে মানুষের প্রতি পৃথিবীর উদার দানশীলতার স্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে।
-
কবি মানুষের কাছে এক নৈতিক আহ্বান জানিয়েছেন— যেন মানুষ তার দায়বদ্ধতা বোঝে এবং পৃথিবীর সুস্থতা রক্ষায় সচেতন হয়।

0
Updated: 19 hours ago
জীবনানন্দ দাশকে 'নির্জনতার কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন-
Created: 1 day ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
C
বিষ্ণু দে
D
বুদ্ধদেব বসু
জীবনানন্দ দাশ বাংলা আধুনিক কবিতার এক অনন্য স্রষ্টা, যিনি নিজের নিঃসঙ্গ জীবনযাপন, গভীর মনন ও প্রকৃতিপ্রেমের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর কবিতায় নিস্তব্ধতা, সময়, মৃত্যু ও সৌন্দর্যের এক মায়াময় মেলবন্ধন পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি আলোচনার কেন্দ্র থেকে দূরে থেকেও বাংলা কাব্যভুবনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন।
-
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতার কবি’ বলে অভিহিত করেন।
-
জীবনানন্দ ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধা, নীরব ও আত্মমগ্ন মানুষ, যিনি জনজীবনের কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।
-
তিনি স্বেচ্ছায় নিজের ব্যক্তিজীবন আড়াল করে রেখেছিলেন এবং নিজের সম্পর্কে প্রচলিত বিভ্রান্তিগুলোকেও গুরুত্ব দেননি।
-
এই স্বভাবগত একান্ততা ও নিঃসঙ্গতার কারণেই তাঁকে বুদ্ধদেব বসু ‘নির্জনতার কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তাঁর কবিতায় রয়েছে চিত্ররূপময়তা ও দৃশ্যমান কাব্যিকতা, যা বাংলা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
-
তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, সময়, মৃত্যু, নারী, একাকিত্ব ও স্মৃতির বোধ গভীর প্রতীকী অর্থে উপস্থিত।
-
জীবনানন্দ নিজের ভেতরের জগৎকে প্রকাশ করেছেন অন্তর্মুখী কাব্যভাষায়, যা তাঁকে তিরিশের কবিদের মধ্যে অনন্য করেছে।
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
জন্ম: ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, বরিশাল।
-
আদি নিবাস: বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রাম।
-
পিতা: সত্যানন্দ দাশ – শিক্ষক, সমাজসেবক এবং ব্রহ্মবাদী পত্রিকার সম্পাদক।
-
মাতা: কুসুমকুমারী দাশ – প্রখ্যাত কবি (“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে…” কবিতার রচয়িতা)।
-
তিনি রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কবিতা আন্দোলনের অন্যতম কবি, যেখানে আধুনিক বোধ ও বাস্তবতা প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
-
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতায় আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েটস-এর ‘The Falling of the Leaves’ কবিতার সঙ্গে ভাবগত মিল পাওয়া যায়।
-
‘মহাপৃথিবী’ কাব্যের ‘হায় চিল’ কবিতা ইয়েটসের ‘He Reproves the Curlew’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
-
‘বনলতা সেন’ কবিতায় অ্যাডগার অ্যালান পো-এর ‘To Helen’ কবিতার প্রভাব বিদ্যমান।
-
তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়।
-
‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ষাটের দশকের বাঙালির জাতিসত্তার আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-এ বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করে।
-
‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য তিনি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করেন।
-
মৃত্যু: ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর, কলকাতায়।
জীবনানন্দ দাশের উপাধি / অভিধা:
-
ধূসরতার কবি – তাঁর কবিতায় বিষণ্ণতা, সময়ের ধূসরতা ও অনিশ্চয়তার প্রকাশ আছে বলে।
-
তিমির হননের কবি – তাঁর কাব্যে অন্ধকার ভেদ করে আলো ও জ্ঞানের অনুসন্ধান প্রতিফলিত হয়েছে।
-
রূপসী বাংলার কবি – বাংলার প্রকৃতি, নদী, ক্ষেত, পাখি ও মাটির গন্ধে ভরপুর তাঁর কাব্যজগৎ।
-
নির্জনতার কবি – একান্ত আত্মমগ্ন, নীরব ও চিন্তাশীল জীবনযাপনের প্রতিফলন তাঁর কবিতায় স্পষ্ট।
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন এমন এক কবি, যিনি নিজের নিঃসঙ্গতার ভেতর থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এক নতুন কাব্যভাষা—যা আজও বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নান্দনিক ও গভীর কণ্ঠগুলোর একটি।

0
Updated: 1 day ago
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
Created: 1 day ago
A
১৯২৭ সালে
B
১৯৩৯ সালে
C
১৯২৯ সালে
D
১৯৪৭ সালে
‘ঝরা পালক’ জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যেখানে তাঁর কাব্যজগতের সূচনা ঘটে এক বিশেষ ভাবরীতি ও ভাষাশৈলীর মাধ্যমে। এই গ্রন্থেই তাঁর কবি সত্তার প্রথম পূর্ণ প্রকাশ দেখা যায়। কবিতাগুলিতে গ্রামবাংলার প্রকৃতি, নিসর্গ, একাকিত্ব এবং আত্মচেতনা মিলেমিশে এক অনন্য কাব্যিক জগৎ তৈরি করেছে।
-
‘ঝরা পালক’ জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়।
-
এতে মোট ৩৫টি কবিতা সংকলিত হয়েছে, যা কবির শুরুর দিকের চিন্তা, বেদনা ও আত্মমগ্নতার পরিচয় বহন করে।
-
ভূমিকায় কবি লিখেছিলেন: “ঝরা পালকের কতকগুলি কবিতা প্রবাসী, বঙ্গবাণী, কল্লোল, কালি-কলম, প্রগতি, বিজলি প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিলো। বাকিগুলি নতুন।”
-
এই কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দ দাশের কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনি আছে এক নতুন ভাষারীতি, স্বকীয় বাকপ্রতিমা ও অনুভবের গভীরতা।
-
কবির কবিতায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি, নদী, পাখি, গাছপালা ও নিসর্গচিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
-
তাঁর ভাষায় একধরনের বিষণ্ণতা, আত্মঅন্বেষণ ও নান্দনিকতা প্রকাশ পায়, যা পরবর্তীতে তাঁকে আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃত করে তোলে।
-
‘ঝরা পালক’-এর কবিতাগুলি মূলত আধুনিকতার সূচনা বিন্দু, যেখানে রোমান্টিকতা ও বাস্তববোধের মেলবন্ধন ঘটেছে।
জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, যিনি প্রকৃতি, মানুষ ও সময়ের গভীর সম্পর্ককে অনন্য কাব্যভাষায় প্রকাশ করেছেন।
-
প্রধান কাব্যগ্রন্থ: ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা।
-
উপন্যাস: মাল্যবান, সুতীর্থ।
-
প্রবন্ধগ্রন্থ: কবিতার কথা।
-
তাঁর কবিতায় প্রকৃতির অন্তরাত্মা, সময়ের বোধ, নিঃসঙ্গতা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
-
জীবনানন্দ দাশের রচনাশৈলী বাংলা কবিতায় নতুন প্রতীক, ছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে, যা বাংলা আধুনিক কবিতার নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত।

0
Updated: 1 day ago
‘রূপসী বাংলার কবি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ হয়েছেন-
Created: 1 week ago
A
জসীম উদ্দীন
B
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
C
জীবনানন্দ দাশ
D
কাজী নজরুল ইসলাম
‘রূপসী বাংলার কবি’ জীবনানন্দ দাশ
-
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ তাঁর কাব্যে চিত্ররূপময়ভাবে ফুটে উঠেছে।
-
বিশেষত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থে আবহমান বাংলার চিত্ররূপ ও সূক্ষ্ম সৌন্দর্য প্রকাশের কারণে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ নামে খ্যাত।
-
প্রকৃতির পাশাপাশি জীবনানন্দের কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বিপন্ন মানবতা, আধুনিক নগরজীবনের অবক্ষয়, হতাশা, নিঃসঙ্গতা এবং সংশয়বোধ।
জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহ
-
ধূসর পাণ্ডুলিপি
-
বনলতা সেন
-
মহাপৃথিবী
-
সাতটি তারার তিমির
-
রূপসী বাংলা
-
বেলা অবেলা কালবেলা

0
Updated: 1 week ago