কোন্ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে?
A
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
B
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
C
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
D
উত্তরের বিবরণ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অস্থায়ীভাবে নির্দলীয় সরকারের হাতে অর্পণ করা হতো, যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এটি কার্যকর ছিল মূলত ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত।
• পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯১) অনুষ্ঠিত হয় একটি দলীয় সরকারের অধীনে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তখনও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটি ছিল সাধারণভাবে নির্বাচিত সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নির্বাচন।
• ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬) অত্যন্ত সীমিত অংশগ্রহণ ও বিতর্কিত নির্বাচনের উদাহরণ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তখনও কার্যকর ছিল না; ফলে বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করে, এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
• সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (জুন ১৯৯৬) ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন, যা সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর পর কার্যকর হয়। বিএনপি সরকারের পদত্যাগের পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
• অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০১)-ও অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিজয়ী হয়, যদিও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে।
• তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করলেও, পরবর্তীতে বিতর্ক, সাংবিধানিক জটিলতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাতিল করা হয়।
• এই ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত, যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

0
Updated: 23 hours ago