বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে কোন্ কোন্ রাষ্ট্রের সাথে বিরোধ ছিল?
A
ভারত ও শ্রীলঙ্কা
B
মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা
C
ভারত ও মিয়ানমার
D
ভারত ও থাইল্যান্ড
উত্তরের বিবরণ
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের সঙ্গে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যু ছিল। এই বিরোধগুলোর মূল বিষয় ছিল বেজলাইন (Baseline) নির্ধারণ, মহীসোপান (Continental Shelf) ও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (EEZ)— অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশে এবং তার ওপরের সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার নির্ধারণ। বর্তমানে উভয় বিরোধই আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে।
-
বিরোধের সূত্রপাত:
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে এবং বেজলাইন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (EEZ) দাবি করে। এই ঘোষণার পর থেকেই মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে মতপার্থক্য দেখা দেয়। -
মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ:
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধের বিষয় ছিল মূলত সীমান্তরেখা নির্ধারণ ও মহীসোপানের অংশীদারি।
বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর এই বিরোধ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনাল (ITLOS)-এ উপস্থাপন করে।
আদালত ২০১২ সালের ১৪ মার্চ রায় প্রদান করে, যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ দাবি স্বীকৃত হয়। এই রায়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অধিকার ও সীমানা নির্ধারণ স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। -
ভারতের সঙ্গে বিরোধ:
মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ ভারতের সাথেও স্থায়ী সালিশি আদালত (PCA), হেগে মামলা দায়ের করে।
২০১৪ সালের ৭ জুলাই আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়, যেখানে বাংলাদেশ ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার ওপর অধিকার লাভ করে।
এই রায়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ এবং জ্বালানি অনুসন্ধানের পথ উন্মুক্ত হয়। -
বাংলাদেশের এই দুটি রায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনের শাসন ও শান্তিপূর্ণ বিরোধ নিষ্পত্তির উদাহরণ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
-
সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন জ্বালানি, মৎস্যসম্পদ, ও সামুদ্রিক বাণিজ্যে আরও কার্যকরভাবে অংশ নিতে পারছে।
-
এই সফল নিষ্পত্তি বাংলাদেশের ভূখণ্ডীয় অখণ্ডতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উভয়ই নিশ্চিত করেছে।

0
Updated: 23 hours ago