সংবিধান পরিবর্তনশীল হতে হবে, অন্যথায় এটি মৃতপ্রায় দলিল- কে বলেছেন?
A
J.S. Mills
B
এরিস্টটল
C
ইবনে খালদুন
D
থমাস জেফারসন
উত্তরের বিবরণ
থমাস জেফারসন সরাসরি “সংবিধানকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে; অন্যথায় এটি মৃত অক্ষরে পরিণত হবে” — এই উক্তিটি বলেননি, তবে তিনি সংবিধানের পরিবর্তনযোগ্যতা ও প্রজন্মভিত্তিক নবীকরণের ধারণা তুলে ধরেছিলেন। ১৭৮৯ সালে জেমস ম্যাডিসনকে লেখা এক চিঠিতে জেফারসন যুক্তি দেন যে প্রতিটি প্রজন্মের নিজেদের আইন ও সংবিধান তৈরির অধিকার থাকা উচিত, কারণ আইন ও সংবিধান জীবিতদের জন্য, মৃতদের জন্য নয়।
-
জেফারসনের মতে, “পৃথিবী সর্বদা জীবিত প্রজন্মের।”
-
তিনি মনে করতেন, এক প্রজন্মের কোনো অধিকার নেই পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের আইন বা ঋণের দ্বারা আবদ্ধ করে রাখার।
-
তিনি একটি প্রজন্মের গড় আয়ুষ্কাল ১৯ বছর ধরে হিসাব করে বলেন, প্রতিটি সংবিধান ও আইন ১৯ বছর পর স্বাভাবিকভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া উচিত।
-
তার যুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো আইন বা সংবিধান তার চেয়ে বেশি সময় কার্যকর থাকে, তবে তা “অধিকারের ভিত্তিতে নয়, বরং জোরপূর্বক বলবৎ করা” হিসেবে গণ্য হবে।
-
এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একটি দার্শনিক প্রস্তাবনা, কোনো আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দাবি নয়; তবে এটি পরবর্তীতে “জীবন্ত সংবিধান” (Living Constitution) তত্ত্বের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে।
-
“মৃত অক্ষর (Dead Letter)” ধারণাটি জেফারসন ব্যবহার না করলেও তার চিন্তাধারা এই ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। “মৃত অক্ষর” বলতে বোঝায় এমন আইন বা সাংবিধানিক ধারা যা কাগজে বিদ্যমান থাকলেও বাস্তবে আর কার্যকর বা প্রাসঙ্গিক নয়।
-
সংবিধানকে নমনীয় রাখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তীতে আমেরিকান প্রশাসনে দীর্ঘ বিতর্কের জন্ম দেয়—যেখানে একপক্ষে থাকে “জীবন্ত সংবিধান” তত্ত্ব (যা সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তনের পক্ষে) এবং অন্যপক্ষে থাকে “মূলবাদ” (Originalism) (যা সংবিধানকে তার মূল ব্যাখ্যা অনুযায়ী অপরিবর্তনীয় রাখতে চায়)।
-
একই ধারণা দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill)-ও প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন: “The Constitution must be flexible; otherwise it becomes a dead letter.”
-
অর্থাৎ, সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য হতে হবে; না হলে তা কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং কার্যকারিতা হারাবে।
-
-
জেফারসন ও মিল উভয়েই বিশ্বাস করতেন যে আইন ও সংবিধানের কার্যকারিতা নির্ভর করে তার সময়োপযোগিতা ও পরিবর্তনের ক্ষমতার ওপর, কারণ সমাজ ও মানুষের মূল্যবোধ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

0
Updated: 23 hours ago
বাংলাদেশের সংবিধানের কততম অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার বিষয়ে বর্ননা করা হয়েছে?
Created: 1 day ago
A
২য় অধ্যায়
B
৩য় অধ্যায়
C
৫ম অধ্যায়
D
৭ম অধ্যায়
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ও নাগরিক জীবনের বিভিন্ন দিককে নির্দিষ্ট অধ্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায় রাষ্ট্রের কাঠামো, নাগরিক অধিকার এবং প্রশাসনিক কার্যাবলির মৌলিক ভিত্তি নির্ধারণ করে।
-
৩য় অধ্যায়: এখানে মৌলিক অধিকার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতা, সমতা, মতপ্রকাশের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকারসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংরক্ষণের বিধান দেওয়া হয়েছে। এটি নাগরিক জীবনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
-
৫ম অধ্যায়: এই অধ্যায়ে আইনসভা (Legislature) সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে জাতীয় সংসদের গঠন, সদস্যদের যোগ্যতা, অধিকার, কার্যাবলি ও সংসদ পরিচালনার নিয়মাবলি নির্ধারিত হয়েছে। এই অধ্যায় দেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক কাঠামো নির্ধারণ করে।
-
৭ম অধ্যায়: এখানে নির্বাচন (Election) বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের গঠন, ক্ষমতা, দায়িত্ব ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো দেশে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
-
২য় অধ্যায়: এই অধ্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি (Fundamental Principles of State Policy) বর্ণনা করা হয়েছে। এতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ—এই চারটি মূলনীতি রাষ্ট্রের আদর্শ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবকল্যাণের নীতি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব অধ্যায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ও কার্যকর কাঠামো নির্ধারণ করেছে।

0
Updated: 1 day ago
কোন্ দেশের সংবিধান সবচেয়ে সহজে পরিবর্তন করা যায়?
Created: 1 day ago
A
যুক্তরাজ্য
B
যুক্তরাষ্ট্র
C
বাংলাদেশ
D
নেপাল
সংবিধানকে সাধারণত দুই ধরনের হিসেবে ভাগ করা হয়—কঠোর (Rigid) ও নমনীয় (Flexible)। এই বিভাজনের মূল ভিত্তি হলো সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রক্রিয়া কতটা সহজ বা কঠিন। কোনো রাষ্ট্রে সংবিধান পরিবর্তন যদি জটিল আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হয়, তবে সেটি কঠোর; আর যদি সাধারণ আইন প্রণয়নের মতো সহজ হয়, তবে সেটি নমনীয়।
-
কঠোর সংবিধান (Rigid Constitution):
-
পরিবর্তন করা কঠিন এবং এর জন্য বিশেষ সংবিধান সংশোধনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
-
সাধারণত জনগণ বা প্রাদেশিক আইনসভাগুলোর অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
-
উদাহরণ: যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, যা অত্যন্ত কঠোর।
-
যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান সংশোধনের জন্য কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট এবং রাজ্যগুলোর তিন-চতুর্থাংশ অনুমোদন অপরিহার্য।
-
এই কঠোরতা সংবিধানের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে, কিন্তু পরিবর্তনের গতি মন্থর করে।
-
-
নমনীয় সংবিধান (Flexible Constitution):
-
সাধারণ আইন প্রণয়নের মতোই সহজে সংশোধনযোগ্য।
-
কোনো বিশেষ পদ্ধতি বা গণভোটের প্রয়োজন হয় না।
-
উদাহরণ: যুক্তরাজ্যের সংবিধান, যা মূলত অলিখিত উৎসের ওপর ভিত্তি করে গঠিত এবং তাই নমনীয় প্রকৃতির।
-
যুক্তরাজ্যে সংসদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংবিধানের বিধান পরিবর্তন করা সম্ভব।
-
এর ফলে সংবিধান সময়, সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
-
-
বাংলাদেশের সংবিধান:
-
এটি আংশিকভাবে কঠোর ও আংশিকভাবে নমনীয়।
-
সংবিধানের কোনো ধারা সংশোধনের জন্য সংসদের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।
-
এতে কিছু অংশ সহজে পরিবর্তন করা যায়, আবার কিছু অংশ কঠোর পদ্ধতিতে সংশোধন করতে হয়।
-
এই কাঠামো সংবিধানকে স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে পরিবর্তনের সুযোগও দেয়।
-
-
নেপালের সংবিধান:
-
এটি লিখিত এবং তুলনামূলকভাবে কঠোর প্রকৃতির।
-
সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংসদের বিশেষ প্রক্রিয়া ও উচ্চমাত্রার সমর্থন প্রয়োজন।
-
এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সহজ হলেও দ্রুত সংস্কার করা তুলনামূলক কঠিন।
-

0
Updated: 1 day ago