কোন দার্শনিক দর্শনকে 'জ্ঞানবিষয়ক বিজ্ঞান ও তার সমালোচনা' হিসেবে অভিহিত করেন?
A
ইমানুয়েল কান্ট
B
হার্বাট স্পেন্সার
C
প্লেটো
D
হেগেল
উত্তরের বিবরণ
দর্শনের প্রামাণ্য সংজ্ঞাসমূহ মানবচিন্তার ইতিহাসে বিভিন্ন দার্শনিক তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে দর্শনের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও পরিসর ব্যাখ্যা করেছেন। নিচে তাঁদের উক্তিগুলো বিশ্লেষণসহ উপস্থাপন করা হলো—
-
প্লেটো বলেন, “নিত্যের এবং বস্তুর স্বরূপের জ্ঞান লাভ করাই দর্শনের লক্ষ্য।”
অর্থাৎ দর্শনের মাধ্যমে মানুষ চিরন্তন সত্য ও বাস্তবতার মূল রূপ অনুধাবন করতে চায়। -
দার্শনিক পেরী-র মতে, “দর্শন আকস্মিক কিছু নয়, অলৌকিক কিছু নয়, বরং অনিবার্য ও স্বাভাবিক।”
এখানে দর্শনকে মানবজীবনের একটি স্বাভাবিক চিন্তাগত প্রক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। -
পলসন বলেন, “দর্শন সমস্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমষ্টি।”
এই সংজ্ঞা দর্শনের জ্ঞানবিজ্ঞানমূলক দিককে তুলে ধরে, যেখানে দর্শনকে বিজ্ঞানসমূহের সমন্বিত রূপ হিসেবে দেখা হয়েছে। -
হার্বার্ট স্পেনসার বলেন, “দর্শন সাধারণ সত্যের সর্বোচ্চ ধাপের জ্ঞান।”
তাঁর মতে, দর্শন এমন এক জ্ঞান যা সব সাধারণ সত্যকে একত্রিত করে সর্বজনীন সত্যে রূপান্তরিত করে। -
ইমানুয়েল কান্ট বলেন, “দর্শন হলো জ্ঞান সম্পর্কীয় বিজ্ঞান এবং তার সমালোচনা।”
কান্টের মতে, দর্শন মূলত জ্ঞানের প্রকৃতি, সীমা ও বৈধতা সম্পর্কে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ। -
ফিক্টে বলেন, “দর্শন হলো জ্ঞান-বিজ্ঞান।”
তিনি দর্শনকে এমন এক বিজ্ঞান হিসেবে দেখেছেন, যা জ্ঞানের ভিত্তি ও কাঠামো বিশ্লেষণ করে। -
বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন, “দর্শন হলো ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী একটি অনধিকৃত প্রদেশ (No Man’s Land)।”
তাঁর মতে, দর্শন এমন এক ক্ষেত্র যা ধর্মের বিশ্বাসনির্ভরতা ও বিজ্ঞানের প্রমাণনির্ভরতার মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে সত্যের সন্ধান করে।
অতএব, এই সংজ্ঞাগুলোর সারমর্ম হলো— দর্শন জ্ঞানের মূল প্রকৃতি, সত্য ও বাস্তবতার অনুসন্ধান; এটি মানবচেতনার যুক্তিনির্ভর ও সমালোচনামূলক অনুসন্ধানের এক অনিবার্য প্রকাশ।

0
Updated: 23 hours ago
কোন দার্শনিককে সর্বেশ্বরবাদী বলা যায়?
Created: 6 hours ago
A
রেনে ডেকার্ট
B
লাইবনিজ
C
স্পিনোজা
D
ডেভিড হিউম
বারুচ স্পিনোজা ছিলেন একজন সর্বেশ্বরবাদী দার্শনিক, যার মতে ঈশ্বর ও মহাবিশ্ব এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ, ঈশ্বরই সবকিছু এবং সবকিছুই ঈশ্বর। তিনি মনে করতেন, ঈশ্বর ও প্রকৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই—উভয়ই একই সত্তার দুই দিক। তাই স্পিনোজার দর্শনে ঈশ্বর মানেই প্রকৃতি, আর প্রকৃতিই ঈশ্বরের প্রকাশ।

0
Updated: 6 hours ago
বোধশক্তির আকারের বিষয়ে কথা বলেন-
Created: 23 hours ago
A
ডেভিড হিউম
B
রেনে ডেকার্ট
C
ইমানুয়েল কান্ট
D
হেগেল
ইমানুয়েল কান্ট, যিনি আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, তাঁর জ্ঞানতাত্ত্বিক বিচারবাদে (Critical Philosophy) “বোধশক্তির আকার (Categories of Understanding)” বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।
কান্টের মতে, জ্ঞানের উৎস দুটি— ইন্দ্রিয়ানুভূতি (Sensation) এবং বুদ্ধি বা বোধশক্তি (Understanding)। ইন্দ্রিয়ানুভূতি আমাদেরকে বাইরের জগতের উপাদান সরবরাহ করে, আর বোধশক্তি সেই উপাদানগুলোকে ধারণা ও কাঠামোর মাধ্যমে সংগঠিত করে জ্ঞানে রূপান্তরিত করে।
এই বোধশক্তির কাজ পরিচালিত হয় কিছু অন্তর্নিহিত বা পূর্বনির্ধারিত ধারণাগত কাঠামো, যেগুলোকে কান্ট “বোধশক্তির আকার” বা “Categories” বলেছেন। এগুলোর মাধ্যমেই মানুষ অভিজ্ঞতাকে গঠন ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
কান্ট এই আকারগুলোকে বারোটি ভাগে বিন্যস্ত করেছেন, যেমন—
-
পরিমাণ (Quantity): একতা, বহুত্ব, সামগ্রিকতা
-
গুণ (Quality): বাস্তবতা, নৈর্ব্যক্তিকতা, সীমা
-
সম্পর্ক (Relation): অন্তর্নিহিততা ও নির্ভরতা, কারণ ও ফল, পারস্পরিকতা
-
রীতি (Modality): সম্ভাবনা, অস্তিত্ব, অপরিহার্যতা
অতএব, কান্টের মতে জ্ঞান কেবল অভিজ্ঞতার ফল নয়, বরং বোধশক্তির এই অন্তর্নিহিত আকারগুলোর মাধ্যমেই অভিজ্ঞতা জ্ঞানে রূপান্তরিত হয়। তাঁর এই বিশ্লেষণই আধুনিক দর্শনে “জ্ঞানের গঠনমূলক বিচারবাদ” নামে পরিচিত।

0
Updated: 23 hours ago
ভারতীয় দর্শনে কে পরিনামবাদী হিসেবে পরিচিত?
Created: 23 hours ago
A
শংকর
B
রামানুজ
C
নাগার্জুন
D
নিমবার্ক
পরিণামবাদ (Pariṇāmavāda) মতে, কারণ প্রকৃতপক্ষে কার্যে পরিণত হয়, অর্থাৎ কার্য হলো কারণেরই রূপান্তর বা পরিবর্তিত অবস্থা। উদাহরণস্বরূপ, দুধ দধিতে পরিণত হয়— এখানে দুধই দধির কারণ, এবং দধি হলো দুধের পরিণত রূপ। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কার্য ও কারণের মধ্যে বাস্তব পরিবর্তন ঘটে, ফলে কার্যকে কারণেরই পরিণাম বলা হয়।
অন্যদিকে, বিবর্তবাদ (Vivartavāda) মতে, কারণ কার্যে পরিণত হয় না, বরং কার্য কেবল কারণের একটি প্রতিভাস বা প্রকাশমাত্র। অর্থাৎ এখানে কোনো বাস্তব পরিবর্তন ঘটে না, শুধু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে কারণ কার্যরূপে প্রকাশ পায়।
রামানুজের দর্শন অনুসারে, সৃষ্টির পূর্বে সমগ্র জগৎ ব্রহ্মের মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় বিরাজমান ছিল। সৃষ্টির মাধ্যমে সেই অব্যক্ত জগৎ ব্যক্ত বা প্রকাশিত হয়। তাই এই দৃশ্যমান জগৎই হলো কার্য, এবং এর মূল বা উৎস ব্রহ্মই কারণ। এভাবে রামানুজের তত্ত্ব পরিণামবাদী ধারণার অন্তর্গত, কারণ তাঁর মতে ব্রহ্ম থেকেই জগতের বাস্তব রূপান্তর সংঘটিত হয়েছে।

0
Updated: 23 hours ago