কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- i) শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার উপস্থিতি; ii) নাগরিক স্বাধীনতার অভাব; iii) আইনের শাসন যথাযথ প্রয়োগের অভাব। কোনটি সঠিক?
A
i
B
i ও ii
C
ii ও iii
D
i, ii ও iii
উত্তরের বিবরণ
কর্তৃত্ববাদী শাসন (Authoritarian Regime) হলো এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত করা হয়। এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় শাসক বা শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে, এবং সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে না।
-
শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতা:
-
এই ব্যবস্থায় ক্ষমতা একটি ব্যক্তি, দল বা সামরিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে।
-
শাসক বা সরকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিস্পর্ধী ক্ষমতা ব্যবহার করে, যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর দ্বারা সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়।
-
বিরোধী দল বা মতপ্রকাশের ক্ষেত্র সীমিত বা নিষিদ্ধ থাকে।
-
-
নাগরিক স্বাধীনতার অভাব:
-
জনগণের মতপ্রকাশ, সংগঠন গঠন, সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার সীমিত থাকে।
-
সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়।
-
নাগরিকদের উপর নজরদারি ও ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যাতে তারা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত না হয়।
-
-
আইনের শাসনের দুর্বলতা:
-
কর্তৃত্ববাদী শাসনে আইনের শাসন কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয় না।
-
আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রায়ই শাসকের স্বার্থে পরিচালিত হয়, জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে।
-
প্রশাসন ও আদালত অনেক সময় শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
-
এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় সাধারণত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও তা হয় জনগণের স্বাধীনতার বিনিময়ে।
-
দীর্ঘমেয়াদে এটি সমাজে অসন্তোষ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটায়।
-
কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিপরীতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

0
Updated: 23 hours ago
'Everything for the state, nothing against the state and nothing outside the state' কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থার মূলমন্ত্র?
Created: 1 day ago
A
কর্তৃত্ববাদী
B
ফ্যাসিবাদী
C
সমাজতান্ত্রিক
D
গণতান্ত্রিক
“Everything for the state, nothing against the state and nothing outside the state” — এই উক্তিটি ফ্যাসিবাদী নেতা বেনিতো মুসোলিনি-এর, যা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচিত। এই দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল রাষ্ট্রকে সর্বশক্তিমান সত্তা হিসেবে দেখা, যেখানে ব্যক্তি, সংগঠন বা কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের বাইরে স্বাধীনভাবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না। রাষ্ট্রের ইচ্ছাই সর্বোচ্চ আইন, এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো চিন্তা, মতবাদ বা কার্যকলাপকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মনে করা হয়। এই নীতির মাধ্যমেই মুসোলিনি ইতালিতে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, যা মূলত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার রূপ নেয়।
• কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য: এতে নাগরিক স্বাধীনতা সীমিত থাকে, শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। রাজনৈতিক বিরোধিতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয় এবং রাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ মানদণ্ড হিসেবে স্থাপন করা হয়।
• রাষ্ট্রের কেন্দ্রীকরণ: কর্তৃত্ববাদে রাষ্ট্রকে একটি সর্বময় শক্তি হিসেবে দেখা হয়, যা সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
• সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রকে মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে দেখে, যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য। এখানে রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব নয় বরং সমতা ও ন্যায়বিচারের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
• গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি: গণতন্ত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি বিদ্যমান। তাই মুসোলিনীর উক্তিটি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার সাথে সরাসরি বিরোধপূর্ণ, কারণ গণতন্ত্র রাষ্ট্রকে নয়, বরং জনগণকে সর্বশক্তিমান বলে গণ্য করে।
• রাজনৈতিক প্রভাব: মুসোলিনীর এই মতবাদ ২০ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপে ফ্যাসিবাদ ও একনায়কতন্ত্র বিস্তারে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক ও নৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।

0
Updated: 1 day ago
' যেখানে আইনের শাসন নেই সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারেনা'- কার মূল্যায়ন?
Created: 23 hours ago
A
জেন লক
B
হ্যারল্ড জে লাস্কি
C
এ ভি ডাইসি
D
কার্ল মার্ক্স
“যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না” (In the absence of law, there is no freedom) — এই উক্তিটি জন লক (John Locke)-এর, যিনি আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম প্রধান চিন্তাবিদ। তাঁর মতে, প্রকৃত স্বাধীনতা কখনোই আইনবিহীন অবস্থায় অর্জন করা যায় না। বরং আইনই স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষাকবচ, যা ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সুশৃঙ্খল সহাবস্থান নিশ্চিত করে। আইন মানুষকে সীমাবদ্ধ করে না, বরং তাকে অন্যের অনাচার থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজের অধিকার ভোগের সুযোগ সৃষ্টি করে।
• গ্রন্থ ও তত্ত্ব: জন লক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “Two Treatises on Civil Government”-এ এই ধারণাটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, আইন মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় না; বরং তা এমন এক কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে সবাই সমানভাবে তাদের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।
• আইনের উদ্দেশ্য: লকের মতে, আইনের উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা, দমন করা নয়। আইন সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে এবং ব্যক্তির অধিকার রক্ষার জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক সীমারেখা তৈরি করে।
• স্বাধীনতার প্রকৃতি: তিনি স্বাধীনতাকে নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। অর্থাৎ, মানুষের স্বাধীনতা এমনভাবে সীমাবদ্ধ থাকবে যাতে তা অন্যের স্বাধীনতা লঙ্ঘন না করে।
• আইনবিহীন অবস্থার সমস্যা: যেখানে কোনো আইন নেই, সেখানে কোনো ব্যক্তি তার অধিকার রক্ষা করতে পারে না, কারণ সেখানে ন্যায়বিচারের কোনো মানদণ্ড থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বলকে দমন করতে পারে, ফলে প্রকৃত স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
• লকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব: তাঁর এই ধারণা পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও আইনের শাসন (Rule of Law)-এর ভিত্তি স্থাপন করে, যেখানে স্বাধীনতা ও আইন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়।

0
Updated: 23 hours ago