দাসদের এরিস্টটল কি বলে অবহিত করেছেন?
A
প্রানীবাচক সম্পত্তি
B
সহায়ক সদস্য
C
প্রয়োজনীয় সদস্য
D
নিকৃষ্ট প্রাণী
উত্তরের বিবরণ
এরিস্টটল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Politics”-এ দাসত্বের প্রয়োজনীয়তা ও বৈধতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রের উৎপত্তি পরিবার থেকে, আর পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো টিকিয়ে রাখতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি (Household Economy) অপরিহার্য। এই গার্হস্থ্য অর্থনীতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং এর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য কিছু উপকরণ বা যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
-
এরিস্টটলের মতে, যেমন প্রতিটি শিল্পকলার জন্য উপযুক্ত উপকরণ ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, তেমনি গার্হস্থ্য অর্থনীতির কার্যকর পরিচালনার জন্যও নির্দিষ্ট কিছু উপকরণের প্রয়োজন রয়েছে।
-
তিনি এই উপকরণগুলোকে যন্ত্র সদৃশ (Instrumental) বলে অভিহিত করেন, কারণ এগুলো গৃহস্থের কাজ সম্পাদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
এরিস্টটল গার্হস্থ্য অর্থনীতির উপকরণকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন—
-
অজৈব যন্ত্রপাতি (Inanimate Tools): যেমন খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধন-সম্পদ, গৃহস্থালি সামগ্রী ইত্যাদি।
-
জৈব যন্ত্রপাতি (Animate Tools): যেমন গৃহপালিত পশু ও দাস (Slave)।
-
-
তিনি দাসকে প্রভুর জীবন্ত সম্পদ (Living possession) এবং কর্মসম্পাদনের যন্ত্র (Instrument of action) হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “A slave is a living possession of his master and an instrument of action।”
-
এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন, কিছু মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই দাসত্বের জন্য উপযুক্ত, কারণ তারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নির্ভরশীল ও শারীরিকভাবে শ্রমনির্ভর।
-
তাঁর মতে, দাসত্ব সমাজের একটি প্রাকৃতিক প্রতিষ্ঠান, যা প্রভু ও দাস উভয়েরই কল্যাণ বয়ে আনে—প্রভুর জন্য শ্রমের সুবিধা এবং দাসের জন্য জীবিকা ও সুরক্ষা।
-
এই ধারণা অনুযায়ী, দাসত্ব গার্হস্থ্য অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ, যা পরিবারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে।
-
যদিও আধুনিক মানবাধিকার ধারণার দৃষ্টিতে এটি অগ্রহণযোগ্য, তবুও এরিস্টটলের সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁর এই বিশ্লেষণ ছিল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সংগঠনের দার্শনিক ব্যাখ্যা।

0
Updated: 1 day ago
স্বর্ণময় মধ্যপন্থার (Golden Mean) সাথে কোন্ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম জড়িত?
Created: 23 hours ago
A
এরিস্টটল
B
প্লেটো
C
হবস
D
লক
এরিস্টটল (Aristotle) তাঁর নৈতিক দর্শনে “Golden Mean” বা “স্বর্ণময় মধ্যপন্থা” ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা মানুষের নৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সুষম আচরণ ও পরিমিত জীবনধারার দিকনির্দেশনা দেয়। তাঁর মতে, নৈতিকতার মূল হলো অতিরিক্ততা ও অভাবের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা, কারণ উভয় চরম অবস্থাই অশুভ এবং অনৈতিক।
-
মধ্যপন্থার মূল ভাবনা:
-
নৈতিকতার প্রতিটি গুণের একটি সুষম মাত্রা রয়েছে, যা অতিরিক্ততা (Excess) ও অভাবের (Deficiency) মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে।
-
এই মধ্যম অবস্থাই হলো নৈতিক গুণের আদর্শ রূপ, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণে সহায়ক।
-
এরিস্টটলের মতে, “গুণ (Virtue) হলো সঠিক মাত্রায় আচরণ করার ক্ষমতা।”
-
-
উদাহরণসমূহ:
-
সাহস (Courage):
-
অতিরিক্ত সাহস = উদ্ধততা বা অবিবেচক ঝুঁকি নেওয়া।
-
সাহসের অভাব = ভীতুতা বা কর্মহীনতা।
-
মধ্যপন্থা = বাস্তবসম্মত ও নৈতিক সাহস, যা বিবেচনার সঙ্গে ঝুঁকি গ্রহণ করে।
-
-
উদারতা (Generosity):
-
অতিরিক্ত = অপচয়ী বা ব্যয়বহুল মনোভাব।
-
অভাব = কৃপণতা বা স্বার্থপরতা।
-
মধ্যপন্থা = ন্যায্য, পরিমিত ও উদ্দেশ্যনিষ্ঠ দান।
-
-
-
প্রয়োগ ও তাৎপর্য:
-
এরিস্টটলের “Golden Mean” কেবল ব্যক্তিগত আচরণের ক্ষেত্রেই নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনা ও নৈতিক রাজনীতিতেও প্রযোজ্য।
-
এটি মানুষকে অতিরিক্ত আবেগ, ভোগ বা উদাসীনতা থেকে দূরে থেকে যুক্তিবাদী ও নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে।
-
এই ধারণা নৈতিক গুণাবলীর সঠিক পরিমিতি খুঁজে পাওয়ার এক দার্শনিক দিকনির্দেশনা, যা নীতি ও চরিত্র বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে।
-
-
অন্য দার্শনিকদের তুলনায়:
-
প্লেটো (Plato): আদর্শ রাষ্ট্র, দার্শনিক শাসক ও ন্যায়বিচারের বিমূর্ত ধারণার ওপর জোর দেন।
-
হবস (Thomas Hobbes): মানব প্রকৃতিকে স্বার্থপর মনে করে “সামাজিক চুক্তি”র মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন।
-
লক (John Locke): প্রাকৃতিক অধিকার (Natural Rights), স্বাধীনতা ও জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
-
এরিস্টটলের স্বর্ণময় মধ্যপন্থা তাই মানবজীবনে সংযম, যুক্তিবোধ ও নৈতিক ভারসাম্যের এক কালজয়ী দার্শনিক দৃষ্টান্ত।

0
Updated: 23 hours ago
'আইন হলো যুক্তির প্রকাশ'- এটি কার উক্তি?
Created: 8 hours ago
A
সক্রেটিস
B
প্লেটো
C
এরিস্টটল
D
ম্যাকিয়াভেলি
আইনকে কেবল নিয়ম বা বিধি নয়, বরং মানবীয় যুক্তি ও ন্যায়ের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। এটি সমাজে ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। এর মাধ্যমে মানুষ তাদের নৈতিক দায়িত্ব ও সামাজিক আচরণের সীমানা নির্ধারণ করে। আইন যুক্তির মাধ্যমেই ন্যায়কে রক্ষা করে এবং সমাজে ভারসাম্য বজায় রাখে।
-
সক্রেটিস ছিলেন নৈতিকতা ও দর্শনের প্রবক্তা, তবে তিনি “আইন হলো যুক্তির প্রকাশ” এ ধারণাটি দেননি।
-
প্লেটো রাষ্ট্র ও নৈতিক দর্শন নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কিন্তু আইনকে যুক্তির সমান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেননি।
-
এরিস্টটল আইনকে যুক্তিনির্ভর নৈতিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, সমাজে শৃঙ্খলা ও ন্যায় রক্ষায় আইন অপরিহার্য এবং এটি যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
-
ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু তিনি আইনকে যুক্তির প্রকাশ হিসেবে দেখেননি।
-
আইন সমাজে ন্যায়, শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করে; এটি কেবল বাধ্যতামূলক নিয়ম নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক যুক্তির মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে।

0
Updated: 8 hours ago
এরিস্টটল বিকৃত প্রকৃতির সরকার বলেছেন কোনটিকে?
Created: 1 day ago
A
রাজতন্ত্রকে
B
অভিজাত তন্ত্রকে
C
মধ্যতন্ত্রকে
D
গণতন্ত্রকে
এরিস্টটল তাঁর রাজনৈতিক দর্শনে সরকার ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন— স্বাভাবিক বা সঠিক সরকার (Correct forms) এবং বিকৃত বা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার (Deviant forms)। তিনি মনে করতেন, একটি সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ, কিন্তু যখন সরকার ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে পরিচালিত হয়, তখন সেটি বিকৃত রূপ ধারণ করে।
-
রাজতন্ত্র (Monarchy): এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসক জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। এটি সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত, যদি শাসক ন্যায়পরায়ণ হন।
-
অভিজাততন্ত্র (Aristocracy): গুণী, শিক্ষিত ও নৈতিক ব্যক্তিদের শাসনব্যবস্থা যারা সমাজের কল্যাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
-
মধ্যতন্ত্র বা সাংবিধানিক সরকার (Polity): জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা, যার লক্ষ্য সামগ্রিক মঙ্গল প্রতিষ্ঠা করা।
এর বিপরীতে এরিস্টটল যেসব সরকারকে বিকৃত বা দুর্নীতিগ্রস্ত রূপ বলেছেন, সেগুলো জনগণের কল্যাণ নয় বরং ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।
-
স্বৈরাচার (Tyranny): রাজতন্ত্রের বিকৃত রূপ, যেখানে শাসক জনগণের বদলে নিজের স্বার্থে ক্ষমতা ব্যবহার করেন।
-
ধনিকতন্ত্র (Oligarchy): অভিজাততন্ত্রের বিকৃত রূপ, যেখানে ধনী শ্রেণি কেবল নিজেদের স্বার্থে শাসন করে।
-
গণতন্ত্র (Democracy): এরিস্টটলের সংজ্ঞায় এটি মধ্যতন্ত্রের বিকৃত রূপ; যখন জনগণের শাসন দলীয় বা শ্রেণিগত স্বার্থে পরিণত হয় এবং সাধারণ কল্যাণ উপেক্ষিত থাকে, তখন তা অনিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রে রূপ নেয়।
-
এরিস্টটলের মতে, আদর্শ সরকার সেইটি, যেখানে আইন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, ব্যক্তি নয়।
-
তিনি বিশ্বাস করতেন, সরকারের সাফল্য নির্ভর করে নৈতিকতা, মধ্যপন্থা ও আইনের শাসনের উপর।
-
তাঁর রাজনৈতিক চিন্তায় দেখা যায়, চরম ধনবৈষম্য বা দরিদ্রতার বৃদ্ধি রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা শাসনব্যবস্থাকে বিকৃত রূপে পরিণত করে।
-
এরিস্টটল তাই একটি মধ্যপন্থী সরকারব্যবস্থার (Polity) পক্ষে ছিলেন, যেখানে গণতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে জনগণের প্রকৃত মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়।

0
Updated: 1 day ago