১৯৬৯ সালের গণ অভুত্থানের কারণ- i) পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বৈষম্য; ii) ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের ঐক্যবদ্ধতা; iii) ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলন;
A
i)
B
i ও ii
C
ii ও iii
D
i, ii ও iii
উত্তরের বিবরণ
১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান ছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি মূলত পাকিস্তান সরকারের স্বৈরাচারী নীতি, রাজনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বৈপরীত্য ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ। ছাত্র সমাজ, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই আন্দোলন দ্রুত একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়, যার লক্ষ্য ছিল অন্যায় শাসনের অবসান ঘটানো এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা।
• অর্থনৈতিক বৈষম্য: পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী অর্থনীতি ও প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিল। পূর্ব পাকিস্তান রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হলেও উন্নয়ন বাজেটে ন্যায্য অংশ পেত না। শিল্প, অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চল ছিল চরমভাবে বঞ্চিত।
• রাজনৈতিক বৈষম্য: কেন্দ্রীয় সরকার সব সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সুবিধামতো গ্রহণ করত, ফলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত হতেন। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সুযোগ প্রায় বিলুপ্ত ছিল।
• ছয় দফা আন্দোলনের প্রভাব: শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঘোষিত ছয় দফা দাবি (১৯৬৬) পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের স্পষ্ট রূপরেখা দেয়। এই দাবিগুলো জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে তোলে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী চেতনা দৃঢ় করে।
• ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন: ১৯৬৯ সালে ছাত্রসমাজ ছয় দফার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে, যা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক অধিকার সংশোধনের আহ্বান জানায়। এটি তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ায় এবং গণ আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত করে।
• আন্দোলনের ফলাফল: গণ অভ্যুত্থানের চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন, যা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বাধীনতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
• ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করে যে, তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কাঠামো ও নেতৃত্বই প্রকৃত মুক্তির পথ তৈরি করতে পারে।

0
Updated: 1 day ago