সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবক্তা হচ্ছেন-


A

রুশো, লক, হবস


B

রুশো, প্লেটো, মার্কস


C

হবস, লক, মার্কস


D

মার্কস, হবস, লক


উত্তরের বিবরণ

img

রাষ্ট্রদার্শনিকদের মতে সামাজিক চুক্তি হলো রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি কাল্পনিক মতবাদ, যার ভিত্তিতে বলা হয়—রাষ্ট্র কোনো ঐশী শক্তির সৃষ্টি নয়, বরং মানুষের পারস্পরিক চুক্তির ফলেই রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। প্রাচীন কালে মানুষ কোনো রাষ্ট্রের অধীন ছিল না; তারা তথাকথিত প্রকৃতির রাজ্যে স্বাধীনভাবে বসবাস করত। সময়ের বিবর্তনে সেই প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র গঠন করে।

  • প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের মধ্যে কোনো আইনি বা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল না।

  • সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব রাষ্ট্রের জনগণ-ভিত্তিক উৎপত্তিকে তুলে ধরে।

  • এ তত্ত্বের প্রবক্তা প্রধানত তিনজন দার্শনিক: থমাস হবস, জন লক ও জ্যাঁ জ্যাক রুশো

  • প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও মানুষের স্বাধীনতার ধারণা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

হবসের সামাজিক চুক্তি:
হবস মনে করেন প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর, ভীত, হিংস্র ও অনিরাপদ ছিল। সে কারণে মানুষের জীবন ছিল “নোংরা, পশুবৎ, স্বার্থবাদী ও ক্ষণস্থায়ী।”

  • এ অবস্থায় মানুষ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য নিজেদের স্বাধীনতা ত্যাগ করে একটি একনায়ক শাসকের অধীন হয়।

  • হবসের মতে, এটি ছিল একপাক্ষিক চুক্তি, যেখানে জনগণ তাদের অধিকার শাসকের হাতে সমর্পণ করে।

  • চুক্তির পর মানুষ চুক্তিভঙ্গের অধিকার হারায়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুযোগ থাকে না।

  • হবসের তত্ত্ব নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের সমর্থন করে, যেখানে আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শাসকের ক্ষমতা সীমাহীন।

জন লকের সামাজিক চুক্তি:
জন লক বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ ছিল স্বাধীন, শান্তিপ্রিয় ও সহযোগিতাপূর্ণ

  • তবে কিছু সীমাবদ্ধতা ও নিরাপত্তার অভাবে তারা সমষ্টিগতভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে।

  • লকের মতে, সামাজিক চুক্তি দুই ধরনের—সামাজিক চুক্তি (যার মাধ্যমে সমাজ গঠিত হয়) এবং সরকারি চুক্তি (যার মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়)।

  • লকের দৃষ্টিতে সরকার জনগণের অনুমোদনে গঠিত, তাই জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তনের অধিকার থাকে।

  • তার এই চিন্তাধারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

রুশোর সামাজিক চুক্তি:
রুশো বলেন, প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ ছিল নির্দোষ, শান্তিপ্রিয় ও স্বাধীনচেতা

  • সে সময় তাদের মধ্যে স্থায়ী পরিবার বা সামাজিক সম্পর্কের ধারণা ছিল না।

  • মানুষের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিল—নিজেকে রক্ষা করা এবং নিজেকে ভালোবাসা

  • রুশোর মতে, মানুষের টিকে থাকার প্রয়োজনে তারা পারস্পরিক ঐক্যে আবদ্ধ হয়ে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করে।

  • তিনি বলেন, মানুষ বিদ্যমান শক্তিকে একত্রিত করতে পারে, কিন্তু নতুন শক্তি তৈরি করতে পারে না; তাই সমষ্টিগত ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি

  • রুশোর তত্ত্বে জনগণই রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌম, এবং সাধারণ ইচ্ছা (General Will)-এর মাধ্যমেই শাসন পরিচালিত হয়।

Unfavorite

0

Updated: 1 day ago

Related MCQ

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD