বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে কত সালে?
A
১৯৫৩ সালে
B
১৯৫৪ সালে
C
১৯৫৫ সালে
D
১৯৫৬ সালে
উত্তরের বিবরণ
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়, যদিও সেটি ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন। এই স্বীকৃতির পেছনে দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, যা বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
-
ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
-
১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সময়ই প্রথম উর্দু বনাম বাংলা বিতর্কের সূচনা হয়।
-
১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে উর্দু করার প্রস্তাব দিলে, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক তার কড়া বিরোধিতা করেন।
-
১৯৪৮ সালে গণপরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন।
-
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ঘোষণা করেন, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু”; এর পরেই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।
-
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ) বৃহস্পতিবার ছিল। সেদিন ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিল করে।
-
পুলিশের গুলিতে আব্দুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং আহতদের মধ্যে আবুল বরকত পরে শহীদ হন।
-
এই ত্যাগ ও আন্দোলনের ধারাবাহিক ফলেই ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উর্দুর পাশাপাশি বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
-
২১ ফেব্রুয়ারি আজ পৃথিবীর সর্বত্র আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
-
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
-
২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে দিবসটি পালিত হতে শুরু করে।
-
২০০৭ সালের ১৬ মে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহ্বান জানায় এবং ২০০৮ সালকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বর্ষ ঘোষণা করে।
-
২০১০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে পুনরায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাস হয়।
-
ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ রোপণ করে।
-
এই আন্দোলনের স্মৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শহীদ মিনার নির্মিত হয়, যা আজ বাঙালি জাতির গৌরব ও ত্যাগের প্রতীক।

0
Updated: 1 day ago