'হায়! জীবন এতো ছোট ক্যানে? এই ভুবনে'- বিখ্যাত সংলাপটি কোন উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত?
A
কালিন্দী
B
কবি
C
হাঁসুলি বাঁকের উপকথা
D
আরগ্য নিকেতন
উত্তরের বিবরণ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি, যেখানে কবিত্ব, প্রেম, সমাজ ও মানবজীবনের সীমা-অসীমতার সংঘাত একসাথে রূপ পেয়েছে। এই উপন্যাসে লেখক একজন প্রান্তিক মানুষের শিল্পীসত্তা ও তার জীবনের বেদনাকে গভীর মানবিক দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন।
-
‘কবি’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র নিতাইচরণ, এক ডোম সম্প্রদায়ের যুবক, যার অন্তর্নিহিত কবিসত্তাই উপন্যাসের মূল বিষয়।
-
গল্পটি এক নিম্নবর্ণের মানুষ কীভাবে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ও সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চায়, সেই সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
-
নিতাইচরণের জীবনে দুটি নারী আসে—কমলা ও কুন্তলা, যাদের মাধ্যমে প্রেম, আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগের বহুমাত্রিক দিকগুলো ফুটে ওঠে।
-
উপন্যাসে শিল্পী ও সমাজের দ্বন্দ্ব, প্রেম ও দায়িত্ববোধের সংঘাত, এবং মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
-
উপন্যাসের অন্যতম বিখ্যাত সংলাপটি—
“এই খেদ আমার মনে, ভালবেসে মিটলোনা সাধ, কুলালোনা এই জীবনে। হায়! জীবন এত ছোট কেনে? এই ভুবনে।”
—এই সংলাপ নিতাইচরণের আত্মকথন, যেখানে তাঁর অপূর্ণ ভালোবাসা ও জীবনের সীমাবদ্ধতার গভীর বোধ প্রকাশ পেয়েছে। -
তারাশঙ্কর এই উপন্যাসে সমাজের প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠকে কেন্দ্র করে মানবিকতার এক সার্বজনীন রূপ তুলে ধরেছেন।
-
ভাষা ও বর্ণনা কাব্যিক, সংলাপগুলো আবেগপূর্ণ, যা উপন্যাসটিকে বাংলা কথাসাহিত্যে এক ক্লাসিক মর্যাদায় আসীন করেছে।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তথ্য:
-
তিনি ছিলেন একাধারে কথাসাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ।
-
জন্ম: ১৮৯৮ সালে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক জমিদার পরিবারে।
-
তাঁর প্রথম গল্প ‘রসকলি’, যা সেকালের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হয়।
-
তাঁর লেখায় গ্রামীণ সমাজ, প্রান্তিক মানুষের জীবনসংগ্রাম, নৈতিক দ্বন্দ্ব ও মানবিক বোধ গভীরভাবে প্রতিফলিত।
প্রধান উপন্যাসসমূহ:
-
চৈতালি ঘূর্ণি
-
ধাত্রীদেবতা
-
কালিন্দী
-
কবি
-
হাঁসুলি বাঁকের উপকথা
-
গণদেবতা
-
আরগ্য নিকেতন
-
পঞ্চপুণ্ডলী
-
রাধা
ত্রয়ী উপন্যাস:
-
ধাত্রীদেবতা
-
গণদেবতা
-
পঞ্চগ্রাম
প্রসিদ্ধ ছোটগল্প:
-
রসকলি
-
বেদেনী
-
ডাকহরকরা
‘কবি’ উপন্যাসে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন—কবিত্ব কোনো সামাজিক অবস্থানের সীমায় আবদ্ধ নয়, বরং তা মানবমনের অন্তর্গত এক অনন্ত স্রোত, যা জীবন, প্রেম ও মৃত্যুর সীমা অতিক্রম করে মানুষকে অমর করে তোলে।

0
Updated: 16 hours ago
'মহাশ্মশান' কোন ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত?
Created: 6 days ago
A
পলাশীর যুদ্ধ
B
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
C
বক্সারের যুদ্ধ
D
রাজমহলের যুদ্ধ
'মহাশ্মশান' কায়কোবাদ রচিত একটি শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য, যা ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই কাব্যটি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১) কে কেন্দ্র করে রচিত এবং এতে ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে কাব্যিক চিত্রায়ন সমন্বিতভাবে ফুটে উঠেছে।
-
প্রকাশ ও প্রকাশনা মাধ্যম: কাব্যটি ধারাবাহিকভাবে মহম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত 'কোহিনূর' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
-
গঠন: কাব্যটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে ২৯টি সর্গ, দ্বিতীয় খণ্ডে ২৪টি সর্গ, এবং তৃতীয় খণ্ডে ৭টি সর্গ রয়েছে।
মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র:
-
এব্রাহিম কার্দি
-
জোহরা বেগম
-
হিরণ বালা
-
আতা খাঁ
-
লঙ্গ
-
রত্নজি
-
সুজাউদ্দৌলা
-
সেলিনা
-
আহমদ শাহ্ আব্দালী

0
Updated: 6 days ago
বাংলা ভাষায় চলিত রীতির উদ্ভাবক কে?
Created: 1 day ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
প্রমথ চৌধুরী
C
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
D
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, যিনি আধুনিক বাংলা গদ্যের রূপকার হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম, সম্পাদনা ও ভাষাচর্চা বাংলা সাহিত্যের গতিপথে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দেয়।
তাঁকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক বলা হয়। তিনি ‘সবুজপত্র’ পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষার প্রচলন ঘটান, যা পাঠকের কাছে ভাষাকে আরও সহজ, সাবলীল ও প্রাঞ্জল করে তোলে।
প্রমথ চৌধুরী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ:
-
তিনি বাংলা সাহিত্যে একজন বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধিক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত। তাঁর প্রবন্ধে রস, রসিকতা ও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গধর্মী ভাষা বিদ্যমান।
-
তিনি ছোটোগল্প ও সনেট রচনাতেও বিশেষ অবদান রেখেছেন।
-
তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ছিল ‘সবুজপত্র’, যা বাংলা সাহিত্যকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।
-
চলিত রীতিতে তাঁর প্রথম গদ্যরচনা ছিল ‘বীরবলের হালখাতা’, যা বাংলা গদ্যের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি।
-
তাঁর বিখ্যাত উক্তি: “সুশিক্ষিত লোক মানে স্বশিক্ষিত।” এই উক্তি শিক্ষার আত্মপ্রচেষ্টাভিত্তিক ধারণাকে প্রতিফলিত করে।

0
Updated: 1 day ago
'তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?' কোন উপন্যাসে আছে?
Created: 2 weeks ago
A
বঙ্কিমচন্দ্রের 'কপালকুণ্ডলা'
B
রবীন্দ্রনাথের 'গোরা'
C
শরৎচন্দ্রের 'চরিত্রহীন'
D
বিভূতিভূষণের 'আরণ্যক'
‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’ লাইনটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস থেকে নেওয়া। এটি উপন্যাসের চরিত্র ও নৈতিক দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে।
-
উপন্যাসের অংশবিশেষ:
• যাত্রীরা নবকুমার ব্যতীত স্বদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। নবকুমার সমুদ্রতীরে বনবাসে বিসর্জিত হন।
• যে ব্যক্তি পরের উপবাস নিবারণার্থে কাষ্ঠাহরণে যায় না, তাকে উপহাস করা হয়। বনবাসিত ব্যক্তি যতবারই বনবাসে পাঠানো হোক, তার স্বভাব অনুযায়ী সে পুনরায় কাষ্ঠাহরণে যাবে।
• নবকুমার নিজকে উত্তম হিসেবে দাবি করেন, কারণ তিনি অধম বলেই অন্যের সাথে তুলনা করেন না। -
‘কপালকুণ্ডলা’ সম্পর্কিত তথ্য:
• রচয়িতা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; এটি তার দ্বিতীয় সার্থক উপন্যাস।
• প্রকাশিত: ১৮৬৬ সালে।
• কাহিনী কেন্দ্র করে এক অরণ্যের কাপালিক-পালিতা নারী কপালকুণ্ডলা।
• বঙ্কিমের জীবদ্দশাতেই উপন্যাসের আটটি সংস্করণ হয়।
• উল্লেখযোগ্য চরিত্র: কপালকুণ্ডলা, নবকুমার, কাপালিক।
• উপন্যাসের সংলাপ “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ।” বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোম্যান্টিক সংলাপ হিসেবে বিবেচিত। -
অন্য গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসের তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
• ‘গোরা’ (১৯১০) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৃহত্তম রাজনৈতিক উপন্যাস।
-
প্রকাশিত: ১৯০৮ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায়।
-
বিষয়: ধর্মান্দোলন, স্বদেশপ্রেম, নারীমুক্তি।
-
চরিত্র: গোরা, সুচরিতা, কৃষ্ণদয়াল, আনন্দময়ী।
-
কাহিনী: ব্যক্তির সঙ্গে সমাজ, সমাজের সঙ্গে ধর্ম, ধর্মের সঙ্গে সত্যের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়।
• ‘চরিত্রহীন’ (১৯১৭) – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা।
-
বিষয়: প্রথা বহির্ভূত প্রেম ও নারীপুরুষ সম্পর্ক।
-
চরিত্র: চারটি নারী চরিত্র, প্রধান: সাবিত্রী ও কিরণময়ী।
• ‘আরণ্যক’ (১৯৩৯) – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা।
-
ভিত্তি: বনাঞ্চলে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অরণ্যবাসী মানুষের সংস্পর্শ।
-
বিষয়: মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক, দুঃখ-দারিদ্র্য, আশা ও আনন্দ।
-
কাহিনী: ডায়েরিরীতিতে উত্তমপুরুষের জবানিতে রচিত; অরণ্যের সৌন্দর্য, ভয়ালতা, বনবাসী সংস্কার ও আর্য-অনার্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব।
-
উল্লেখযোগ্য চরিত্র: ভানুমতী, বনোয়ারী, দোবরু পান্না, বুদ্ধ সিংহ, খাম্বা।
-

0
Updated: 2 weeks ago