জীবনানন্দ দাশকে 'নির্জনতার কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন-
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
C
বিষ্ণু দে
D
বুদ্ধদেব বসু
উত্তরের বিবরণ
জীবনানন্দ দাশ বাংলা আধুনিক কবিতার এক অনন্য স্রষ্টা, যিনি নিজের নিঃসঙ্গ জীবনযাপন, গভীর মনন ও প্রকৃতিপ্রেমের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর কবিতায় নিস্তব্ধতা, সময়, মৃত্যু ও সৌন্দর্যের এক মায়াময় মেলবন্ধন পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি আলোচনার কেন্দ্র থেকে দূরে থেকেও বাংলা কাব্যভুবনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন।
-
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতার কবি’ বলে অভিহিত করেন।
-
জীবনানন্দ ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধা, নীরব ও আত্মমগ্ন মানুষ, যিনি জনজীবনের কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।
-
তিনি স্বেচ্ছায় নিজের ব্যক্তিজীবন আড়াল করে রেখেছিলেন এবং নিজের সম্পর্কে প্রচলিত বিভ্রান্তিগুলোকেও গুরুত্ব দেননি।
-
এই স্বভাবগত একান্ততা ও নিঃসঙ্গতার কারণেই তাঁকে বুদ্ধদেব বসু ‘নির্জনতার কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তাঁর কবিতায় রয়েছে চিত্ররূপময়তা ও দৃশ্যমান কাব্যিকতা, যা বাংলা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
-
তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, সময়, মৃত্যু, নারী, একাকিত্ব ও স্মৃতির বোধ গভীর প্রতীকী অর্থে উপস্থিত।
-
জীবনানন্দ নিজের ভেতরের জগৎকে প্রকাশ করেছেন অন্তর্মুখী কাব্যভাষায়, যা তাঁকে তিরিশের কবিদের মধ্যে অনন্য করেছে।
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
জন্ম: ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, বরিশাল।
-
আদি নিবাস: বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রাম।
-
পিতা: সত্যানন্দ দাশ – শিক্ষক, সমাজসেবক এবং ব্রহ্মবাদী পত্রিকার সম্পাদক।
-
মাতা: কুসুমকুমারী দাশ – প্রখ্যাত কবি (“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে…” কবিতার রচয়িতা)।
-
তিনি রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কবিতা আন্দোলনের অন্যতম কবি, যেখানে আধুনিক বোধ ও বাস্তবতা প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
-
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতায় আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েটস-এর ‘The Falling of the Leaves’ কবিতার সঙ্গে ভাবগত মিল পাওয়া যায়।
-
‘মহাপৃথিবী’ কাব্যের ‘হায় চিল’ কবিতা ইয়েটসের ‘He Reproves the Curlew’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
-
‘বনলতা সেন’ কবিতায় অ্যাডগার অ্যালান পো-এর ‘To Helen’ কবিতার প্রভাব বিদ্যমান।
-
তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়।
-
‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ষাটের দশকের বাঙালির জাতিসত্তার আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-এ বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করে।
-
‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য তিনি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করেন।
-
মৃত্যু: ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর, কলকাতায়।
জীবনানন্দ দাশের উপাধি / অভিধা:
-
ধূসরতার কবি – তাঁর কবিতায় বিষণ্ণতা, সময়ের ধূসরতা ও অনিশ্চয়তার প্রকাশ আছে বলে।
-
তিমির হননের কবি – তাঁর কাব্যে অন্ধকার ভেদ করে আলো ও জ্ঞানের অনুসন্ধান প্রতিফলিত হয়েছে।
-
রূপসী বাংলার কবি – বাংলার প্রকৃতি, নদী, ক্ষেত, পাখি ও মাটির গন্ধে ভরপুর তাঁর কাব্যজগৎ।
-
নির্জনতার কবি – একান্ত আত্মমগ্ন, নীরব ও চিন্তাশীল জীবনযাপনের প্রতিফলন তাঁর কবিতায় স্পষ্ট।
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন এমন এক কবি, যিনি নিজের নিঃসঙ্গতার ভেতর থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এক নতুন কাব্যভাষা—যা আজও বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নান্দনিক ও গভীর কণ্ঠগুলোর একটি।

0
Updated: 16 hours ago
ধূসরতার কবি বলা হয় কাকে?
Created: 2 days ago
A
বিষ্ণু দে
B
নির্মলেন্দু গুণ
C
জীবনানন্দ দাশ
D
সমর সেন
জীবনানন্দ দাশ বাংলা আধুনিক কবিতার এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, সময়, একাকিত্ব ও অস্তিত্বের গভীর অনুভূতি মিশে আছে। বাংলা কাব্যের ঐতিহ্যে তিনি এমন এক কবি, যিনি রোমান্টিক সৌন্দর্য ও বাস্তব জীবনের বেদনাকে একসূত্রে গেঁথে এক নতুন কাব্যভাষা সৃষ্টি করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
জন্ম: ১৮৯৯ সালে, বরিশালে।
-
তাঁকে বলা হয় “ধূসরতার কবি”, কারণ তাঁর কবিতায় জীবনের নিঃসঙ্গতা ও ম্লান বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে।
-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতাকে বলেছেন “চিত্ররূপময় কবিতা”।
-
তাঁর প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা।
-
এ গ্রন্থের ‘বনলতা সেন’ কবিতা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাগুলির একটি, যা সময় ও ক্লান্ত মানবমনের শান্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
জীবনানন্দ দাশের প্রধান কাব্যগ্রন্থসমূহ:
-
ঝরাপালক (প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ)
-
ধূসর পাণ্ডুলিপি
-
মহাপৃথিবী
-
সাতটি তারার তিমির
-
বেলা অবেলা কালবেলা

0
Updated: 2 days ago
'কবিতার কথা' জীবনানন্দ দাশ রচিত কোন ধরনের সাহিত্যকর্ম?
Created: 1 month ago
A
কাব্যগ্রন্থ
B
উপন্যাস
C
প্রবন্ধগ্রন্থ
D
কবিতা
‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধগ্রন্থ
-
রচয়িতা: জীবনানন্দ দাশ
-
এটি তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ, যা মৃত্যুর পর ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
-
গ্রন্থের বিখ্যাত উক্তি: “সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি।”
-
প্রবন্ধগ্রন্থে জীবনানন্দ দাশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিত ১৫টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে।
জীবনানন্দ দাশের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ
-
ঝরাপালক
-
ধূসর পাণ্ডুলিপি
-
বনলতা সেন
-
মহাপৃথিবী
-
সাতটি তারার তিমির
-
বেলা অবেলা কালবেলা ইত্যাদি
জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস
-
মাল্যবান
-
সতীর্থ
-
কল্যাণী
উৎস: বাংলাপিডিয়া এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা

0
Updated: 1 month ago
ইংরেজি ভাষায় জীবনানন্দ দাশের ওপর গ্রন্থ লিখেছেন কে?
Created: 1 month ago
A
ডব্লিউ বি ইয়েটস
B
ক্লিনটন বি সিলি
C
অরুন্ধতী রায়
D
অমিতাভ ঘোষ
ক্লিনটন বি. সিলি
-
ক্লিনটন বি. সিলি যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বাংলা সাহিত্য অনুবাদক।
-
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালের ২১ জুন। বর্তমানে তিনি শিকাগো ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক।
-
বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ-এর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে তিনি গভীরভাবে গবেষণা করেছেন।
-
জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তার লেখা গুরুত্বপূর্ণ জীবনীগ্রন্থের নাম “A Poet Apart”, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে।
-
এ গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করেন ফারুক মঈনউদ্দীন। অনুবাদ সংস্করণটির নাম “অনন্য জীবনানন্দ”, যা প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে।
উৎস: প্রথম আলো, রিপোর্ট প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৪।

0
Updated: 1 month ago