‘রসকলি’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবনের সূচনা-ধ্বনি, যেখানে তিনি প্রথমবারের মতো গল্পকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই গল্পের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে বাস্তবধর্মী ও মানবিক চেতনার নতুন ধারা সূচনা করেন। গল্পটি লেখকের নিজের ভাষায় তাঁর সাহিত্যজীবনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
-
‘রসকলি’ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প, যা সেকালের খ্যাতনামা সাহিত্যপত্রিকা ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হয়।
-
এটি প্রকাশিত হয় ১৩৩৪ সালের ফাল্গুন মাসে, অর্থাৎ প্রায় দশ বছর আগে (লেখকের নিজের বিবৃতি অনুসারে)।
-
লেখক পরে বলেন:
“রসকলি আমার প্রথম গল্প, ‘রসকলি’ হাতে লইয়াই সাহিত্য-অরণ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম… জীবনের প্রথম রচনা কবিগুরুর হাতেই সমর্পণ করিলাম।”
-
এই উক্তির মাধ্যমে বোঝা যায়, গল্পটির প্রতি তাঁর গভীর মমতা ও শ্রদ্ধা ছিল, কারণ এটি তাঁর সাহিত্যজীবনের প্রথম প্রকাশনা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গকৃত প্রথম রচনা।
-
‘রসকলি’ গল্পে গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষের আবেগ, সামাজিক দ্বন্দ্ব ও মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্মতা ফুটে উঠেছে।
-
গল্পের ভাষা সহজ, কিন্তু বর্ণনায় রয়েছে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও জীবনের বাস্তবতার মেলবন্ধন, যা তাঁর পরবর্তী রচনাশৈলীর পূর্বাভাস দেয়।
-
এই গল্পের মধ্য দিয়েই তারাশঙ্কর মানবজীবনের নানামাত্রিক রূপ—ভালোবাসা, কষ্ট, সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের পথে যাত্রা শুরু করেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপন্যাসসমূহ:
-
চৈতালি ঘূর্ণি
-
ধাত্রীদেবতা
-
কালিন্দী
-
কবি
-
হাঁসুলি বাঁকের উপকথা
-
গণদেবতা
-
আরগ্য নিকেতন
-
পঞ্চপুণ্ডলী
-
রাধা
প্রসিদ্ধ ছোটগল্পসমূহ:
নাটকসমূহ:
-
দ্বীপান্তর
-
পথের ডাক
-
দুই পুরুষ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় মানবজীবনের অন্তর্লীন টানাপোড়েন, সমাজ-বাস্তবতা ও নৈতিক সংকট গভীরভাবে চিত্রিত হয়েছে। ‘রসকলি’ সেই ধারারই সূচনা, যা পরবর্তীতে তাঁকে বাংলা কথাসাহিত্যের এক শীর্ষস্থানীয় লেখকে পরিণত করেছে।