‘বিষবৃক্ষ’ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত এক অনন্য সামাজিক উপন্যাস, যা বাংলা সাহিত্যে বাস্তববাদী চিন্তাধারার এক শক্তিশালী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে, এবং এতে উনিশ শতকের বাঙালি সমাজজীবনের নৈতিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের জটিলতা ও নারী-পুরুষের মানসিক সংঘাত গভীরভাবে চিত্রিত হয়েছে।
-
‘বিষবৃক্ষ’ (১৮৭৩) একটি সামাজিক উপন্যাস, যেখানে সমাজে নারী ও পুরুষের নৈতিক মূল্যবোধ, কামনা-বাসনা ও কর্তব্যবোধের সংঘাত ফুটে উঠেছে।
-
প্রধান বিষয়বস্তু: বিধবা বিবাহ, পুরুষের একাধিক বিবাহ, রূপতৃষ্ণা, নৈতিক দ্বন্দ্ব, নারীর আত্মসম্মান ও অধিকারচেতনা।
-
উপন্যাসে লেখক সমাজে নারীর অবস্থা, বিশেষত বাল্যবিধবা কুন্দনন্দিনীর জীবনসংগ্রাম ও প্রেমকামনার মাধ্যমে তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতাকে প্রকাশ করেছেন।
-
কুন্দনন্দিনীর চরিত্রে একদিকে প্রেম ও মানবিক আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ, অন্যদিকে সমাজের নিষ্ঠুর সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন দেখা যায়।
-
বঙ্কিমচন্দ্র বিশ্বাস করতেন, কুন্দনন্দিনীর কাহিনি পাঠ মানুষকে নৈতিকতার দিকে ফিরিয়ে আনবে, অর্থাৎ প্রেম ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সমাজে সুষমা ফিরবে।
-
উপন্যাসটির চরিত্রায়ণ, সংলাপ, ঘটনার বিন্যাস এবং সামাজিক সমস্যার বাস্তব রূপায়ণ একে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাসের মর্যাদা দিয়েছে।
-
সমাজে নিষিদ্ধ প্রেম ও নারীর আত্মমর্যাদার প্রশ্নে ‘বিষবৃক্ষ’ ছিল এক বিপ্লবাত্মক সৃষ্টি, যা পাঠককে ভাবতে শেখায় এবং সমাজের নৈতিক বোধকে নাড়া দেয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–১৮৯৪):
তিনি ছিলেন বাংলা উপন্যাসের জনক, যিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিক উপন্যাসের ধারা সূচনা করেন। তাঁর উপন্যাসে সমাজ, ধর্ম, ইতিহাস ও মানবমনের গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।
বঙ্কিমচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসসমূহ:
-
দুর্গেশনন্দিনী
-
কপালকুণ্ডলা
-
মৃণালিনী
-
রাজসিংহ
-
সীতারাম
-
দেবী চৌধুরাণী
-
আনন্দমঠ
-
বিষবৃক্ষ
-
রজনী
-
কৃষ্ণকান্তের উইল
‘বিষবৃক্ষ’ শুধু বঙ্কিমচন্দ্রের সৃজনশীলতার এক নিদর্শন নয়, বরং এটি বাংলা সমাজের মানসিক ও নৈতিক রূপান্তরের এক দলিল, যা আধুনিক সমাজচিন্তার সূচনা ঘটায়।