‘মহাশ্মশান’ কাব্যটি কোন যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত?
A
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
B
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ
C
কলকাতার সিপাহী বিদ্রোহ
D
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
উত্তরের বিবরণ
‘মহাশ্মশান’ কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য, যা বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিক মহাকাব্যের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে। এই কাব্যটি রচিত হয়েছে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১) অবলম্বনে, যেখানে মুসলিম শক্তির ঐক্য, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের মহিমা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
-
‘মহাশ্মশান’ কায়কোবাদের সর্বাধিক খ্যাতিপ্রাপ্ত ও বিস্তৃত মহাকাব্যগ্রন্থ, যা ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয়।
-
এটি প্রথম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল মহম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনূর’ পত্রিকায়।
-
কাব্যটি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১) – যা আফগান শাসক আহমদ শাহ আব্দালী ও মারাঠাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল – সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে ভিত্তি করে রচিত।
-
কাব্যের মূল বিষয় হলো যুদ্ধ, ধর্মনিষ্ঠা, বীরত্ব, দেশপ্রেম ও মানবিকতার জয়গান।
-
এটি তিন খণ্ডে বিভক্ত –
-
প্রথম খণ্ডে রয়েছে ২৯টি সর্গ,
-
দ্বিতীয় খণ্ডে ২৪টি সর্গ,
-
তৃতীয় খণ্ডে ৭টি সর্গ।
-
-
কাব্যের প্রধান চরিত্রসমূহ হলেন: এব্রাহিম কার্দি, জোহরা বেগম, হিরণ বালা, আতা খাঁ, লঙ্গ, রত্নজি, সুজাউদ্দৌলা, সেলিনা, এবং আহমদ শাহ আব্দালী।
-
কাব্যে কবি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবিক গুণাবলি ও বীরত্বের মহিমা তুলে ধরেছেন, যা তাঁর সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
-
‘মহাশ্মশান’-এর মাধ্যমে কায়কোবাদ বাংলা মহাকাব্যকে ইসলামী ইতিহাসভিত্তিক নতুন মাত্রা প্রদান করেন।
কায়কোবাদ সম্পর্কিত তথ্য:
-
জন্ম: ১৮৫৭ সালে, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামে।
-
পিতা: শাহামতউল্লাহ আল কোরেশী, যিনি ঢাকার জেলা-জজ আদালতের উকিল ছিলেন।
-
প্রকৃত নাম: মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী; ‘কায়কোবাদ’ তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম।
-
তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে প্রথম যুগের মুসলিম কবি হিসেবে খ্যাত।
-
মাত্র তেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহবিলাপ’ (১৮৭০) প্রকাশিত হয়।
-
তাঁর রচনায় ধর্ম, মানবতা, দেশপ্রেম ও বেদনার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
প্রধান কাব্যগ্রন্থসমূহ:
১. কুসুম-কানন
২. শিব-মন্দির
৩. অমিয়ধারা
৪. শ্মশান-ভস্ম
৫. অশ্রুমালা
৬. মহাশ্মশান
৭. মহরম শরীফ
‘মহাশ্মশান’ কাব্যের মাধ্যমে কায়কোবাদ শুধু ঐতিহাসিক ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেননি, বরং তাঁর কবিতায় ধর্মীয় সহাবস্থান, ন্যায়ের জয় ও মানবিক বোধের অমর বার্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

0
Updated: 1 day ago