বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
A
মেঘনাদবধ কাব্য
B
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
C
বীরাঙ্গনা কাব্য
D
পদ্মাবতী
উত্তরের বিবরণ
‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী সৃষ্টি, যার রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এটি চার সর্গে রচিত একটি মহাকাব্যধর্মী কাব্য, যা রচিত হয় ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং সে বছরই মে মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কাব্যটির উপজীব্য হলো সৌন্দর্যের প্রতিমা তিলোত্তমাকে কেন্দ্র করে সুন্দ ও উপসুন্দের দ্বন্দ্ব। এটি বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যা বাংলা কাব্যের রূপ ও গঠনে এক নতুন যুগের সূচনা করে। যদিও কবি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রয়োগ করেছিলেন তাঁর ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০) নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে, তবুও সম্পূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’-ই প্রথম।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মহাকবি ও নাট্যকার, যিনি আধুনিক কাব্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর জন্ম ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে, কপোতাক্ষ নদের তীরে। তিনি ছিলেন বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ইংরেজি ভাষায় লেখা ‘The Captive Lady’।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মসমূহ:
নাটক:
-
শর্মিষ্ঠা
-
পদ্মাবতী
-
কৃষ্ণকুমারী
কাব্য:
-
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
-
মেঘনাদবধ কাব্য
-
ব্রজাঙ্গনা কাব্য
-
বীরাঙ্গনা কাব্য (পত্রকাব্য)
-
চতুর্দশপদী কবিতাবলী
প্রহসন:
-
একে কি বলে সভ্যতা
-
বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ
-
তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্য, যা রামায়ণের কাহিনিকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্লিখন করে।
-
তিনি বাংলা ভাষায় ইউরোপীয় কাব্যরীতি ও ভাবধারা সংযোজন করেন, যা বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতার নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
-
তাঁর রচনায় বীরত্ব, নায়কোচিত ট্র্যাজেডি, প্রেম, মানবতাবোধ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
-
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যকে ক্লাসিক ধাঁচ থেকে আধুনিকতায় রূপান্তরিত করেন এবং বাংলা কাব্যে এক নবযুগের সূচনা ঘটান।

0
Updated: 15 hours ago