'জীবনে জ্যাঠামি ও সাহিত্যে ন্যাকামি' সহ্য করতে পারতেন না-
A
বঙ্কিমচন্দ্র
B
সৈয়দ মুজতবা আলী
C
প্রমথ চৌধুরী
D
প্রমথনাথ বিশী
উত্তরের বিবরণ
প্রমথ চৌধুরী: বাংলা গদ্যের পথপ্রদর্শক
প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্মরণীয় নাম, যিনি চলিত গদ্যরীতির অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোর জেলার এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যজগতে তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন।
বাংলা গদ্যরীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘বীরবলের হালখাতা’ ১৯০২ সালে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং এ গ্রন্থেই তিনি প্রথমবার চলিত ভাষার ব্যবহার শুরু করেন। এতে বাংলা গদ্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
কাব্যসাহিত্যের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন উদ্ভাবক স্বরূপ। বাংলা কবিতায় প্রথম ইতালীয় সনেট প্রবর্তনের কৃতিত্বও তাঁরই। তিনি ‘সবুজপত্র’ নামক প্রভাবশালী পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন, যা সাহিত্য অঙ্গনে নবচিন্তার ধারক হয়েছিল।
প্রমথ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য উক্তিসমূহ
-
"সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।" — বইপড়া প্রবন্ধ থেকে
-
"ভাষা মানুষের মুখ হতে কলমে আসে; উল্টো পথে চললে মুখে শুধু কালি পড়ে।" — ভাষার কথা প্রবন্ধ থেকে
-
"জীবনে জ্যাঠামি ও সাহিত্যে ন্যাকামি আমি সহ্য করতে পারি না।" — সাহিত্যের খেলা থেকে
-
"কাব্যজগতে যার নাম আনন্দ, তারই নাম বেদনা।" — সাহিত্যের খেলা
-
"সাহিত্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে সকলকে আনন্দ দেওয়া, কিন্তু তা মনোরঞ্জনের মাধ্যম নয়।" — সাহিত্যের খেলা
তাঁর রচনাসমগ্র:
কবিতাগ্রন্থ:
-
সনেট পঞ্চাশৎ
-
পদচারণ
প্রবন্ধগ্রন্থ:
-
তেল নুন লকড়ি
-
বীরবলের হালখাতা
-
নানাকথা
-
আমাদের শিক্ষা
-
রায়তের কথা
-
নানাচর্চা
-
আত্মকথা
-
প্রবন্ধসংগ্রহ ইত্যাদি।
গল্পগ্রন্থ:
-
চার ইয়ারী কথা
-
আহুতি
-
নীল্লোহিত
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর, সাহিত্যের খেলা প্রবন্ধ, বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago
নিচের কোনটি প্রমথ চৌধুরী রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ নয়?
Created: 2 months ago
A
রায়তের কথা
B
বীরবলের হালখাতা
C
তেল-নুন-লকড়ি
D
চার-ইয়ারি কথা।
• প্রমথ চৌধুরী:
-
জন্ম: ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট, যশোর
-
পেশা: প্রাবন্ধিক
-
পিতা: দুর্গাদাস চৌধুরী, জমিদার
-
বৈবাহিক জীবন: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন
-
সাহিত্যিক অবদান:
-
বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক
-
ফরাসি সনেট, ট্রিয়লেট, তের্জারিমা বাংলা সাহিত্যে প্রথম প্রবর্তন
-
ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক
-
১৯১৪ সালে মাসিক সবুজপত্র প্রকাশ এবং তার মাধ্যমে বাংলা চলিত গদ্যরীতি প্রবর্তন
-
ছদ্মনাম ‘বীরবল’ ব্যবহার করে সবুজপত্রে ব্যঙ্গরসাত্মক প্রবন্ধ ও গল্প প্রকাশ; এর থেকে পরবর্তীতে বীরবলী ধারা বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তিত
-
-
প্রধান কাব্যগ্রন্থ:
-
সনেট পঞ্চাশৎ
-
পদচারণ
-
-
উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ:
-
চার-ইয়ারি কথা
-
নীললোহিত ও গল্প সংগ্রহ
-
আহুতি
-
-
উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ:
-
তেল-নুন-লকড়ি
-
বীরবলের হালখাতা
-
নানাকথা
-
নানা চর্চা
-
রায়তের কথা
-
প্রবন্ধ সংগ্রহ (১ম খণ্ড-১৯৫২, ২য় খণ্ড-১৯৫৩)
-
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা ও বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 2 months ago
প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে কোন রীতির প্রবর্তক ছিলেন?
Created: 3 weeks ago
A
যতিচিহ্ন রীতি
B
চলিত রীতি
C
অলঙ্কারিক রীতি
D
প্রকৃত রীতি
প্রমথ চৌধুরী ছিলেন বাংলা গদ্যের চলিত রীতির প্রবর্তক এবং আধুনিক বাংলা গদ্যের এক বিশিষ্ট রূপকার। তাঁর লেখনিতে ভাষা পেয়েছিল নতুন ছন্দ, স্বাভাবিকতা ও প্রাণবন্ত প্রকাশভঙ্গি। তিনি বাংলা সাহিত্যকে সাধুভাষার কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক কথ্যরীতির গদ্যের ধারা প্রতিষ্ঠা করেন।
-
জন্ম: ৭ আগস্ট, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জেলায়।
-
তিনি বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রূপের তুলনামূলক গবেষক ছিলেন এবং চলিত রীতির গুরুত্ব প্রথম উপলব্ধি করেন।
-
বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক হিসেবে তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
-
তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’, এই নামে তিনি ব্যঙ্গ-রসাত্মক রচনা লিখতেন।
-
তিনি ছিলেন ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার (প্রকাশকাল: ১৯১৪ সাল) সম্পাদক, যা রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের সাহিত্যচর্চায় এক নবধারার সূচনা করেছিল।
-
তাঁর গদ্যে ভাষা সহজ, কথ্য ও প্রাঞ্জল — যা পাঠকের মনে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
-
তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, সমালোচক, চিন্তাবিদ ও ভাষাবিশারদ।
-
তাঁর গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য হলো বুদ্ধিদীপ্ত রস, ব্যঙ্গ ও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি।
বাংলা সাহিত্যে অবদান:
-
বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে তিনি “চলিত রীতির পথিকৃৎ” হিসেবে পরিচিত।
-
তাঁর লেখায় দেখা যায় তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ, সূক্ষ্ম রসবোধ ও যুক্তিনিষ্ঠ ভাবনা।
-
‘সবুজপত্র’-এর মাধ্যমে তিনি তরুণ লেখকদের জন্য নতুন সাহিত্যধারার সূচনা করেন, যার ফলে বাংলা গদ্যের আধুনিক রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মৃত্যু: ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ (১৬ ভাদ্র ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), শান্তিনিকেতনে।
প্রমথ চৌধুরীর রচনায় ভাষার স্বাভাবিকতা, যুক্তি, রসবোধ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির যে সমন্বয় দেখা যায়, তা বাংলা গদ্যকে আধুনিক রূপে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই তাঁকেই যথার্থ বলা হয়— বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক।
0
Updated: 3 weeks ago
'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
Created: 6 days ago
A
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
B
প্রমথ চৌধুরী
C
কাজী নজরুল ইসলাম
D
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
উত্তর: খ) প্রমথ চৌধুরী
‘সবুজপত্র’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পত্রিকা, যার সম্পাদনা করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে। বাংলা গদ্যসাহিত্যে নতুন রুচি, আধুনিক মনন ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবধারার সূচনা এই পত্রিকার মাধ্যমেই ঘটে। প্রমথ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই পত্রিকা সাহিত্যজগতে এক নবজাগরণের সূচনা করেছিল।
‘সবুজপত্র’-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর আধুনিক চিন্তাধারা ও নতুন সাহিত্যরীতির প্রবর্তন। প্রমথ চৌধুরী বিশ্বাস করতেন যে সাহিত্যকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই তিনি পুরোনো প্রথাগত রচনাশৈলী থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ভাষারীতি ও রুচির বিকাশ ঘটান। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি চলিত ভাষায় সাহিত্য রচনার ধারা শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের প্রধান ভাষাশৈলী হয়ে ওঠে।
এই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজজীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা। প্রমথ চৌধুরী এতে মননশীল প্রবন্ধ, গল্প, সমালোচনা ও অনুবাদ সাহিত্য প্রকাশ করতেন, যা পাঠকের চিন্তাকে উদ্দীপ্ত করত।
এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রমুখ খ্যাতনামা সাহিত্যিক। ফলে ‘সবুজপত্র’ হয়ে ওঠে নবযুগের সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু।
পত্রিকাটি বাংলা সাহিত্যে যে পরিবর্তন এনেছিল তা কয়েকটি দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
-
এটি চলিত ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা পূর্বে উচ্চাঙ্গ সাহিত্যে ব্যবহৃত হতো না।
-
এতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন চিন্তার মূল্যায়ন করা হয়, যা তৎকালীন সমাজে এক নতুন ধারণা ছিল।
-
প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যে রুচিশীলতা ও ব্যঙ্গরসের সংযোজন করেন, যা পাঠকের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
-
এই পত্রিকার মাধ্যমে আধুনিক প্রবন্ধ ও সমালোচনার ধারা গড়ে ওঠে।
-
এটি নতুন লেখকদের জন্য এক মুক্ত চিন্তার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছিল।
সর্বোপরি, ‘সবুজপত্র’ কেবল একটি সাহিত্যপত্রিকা ছিল না; এটি ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক নবজাগরণের আন্দোলন। প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনা ও দিকনির্দেশনায় পত্রিকাটি বাংলা গদ্যসাহিত্যকে আধুনিক রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাঁর এই অবদান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আজও অম্লান।
0
Updated: 6 days ago