বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ কে রচনা করেন?
A
সুকুমার সেন
B
দীনেশচন্দ্র সেন
C
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
D
অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরের বিবরণ
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য
১৮৯৬ সালে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম ঐতিহাসিক গ্রন্থ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পায়। দীনেশচন্দ্র সেনের দীর্ঘ গবেষণার ফসল এই বইটি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাসকে সুশৃঙ্খলভাবে তুলে ধরে।
তথ্য ও বিশ্লেষণের গুণে এটি এক যুগান্তকারী কাজ হিসেবে সমকালীন বিদ্বজ্জন মহলে, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকেও, বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চর্চায় এই গ্রন্থের মাধ্যমে দীনেশচন্দ্র সেন পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং একাধারে পান্ডিত্যের স্বীকৃতি লাভ করেন।
দীনেশচন্দ্র সেন
দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬–১৯৩৯) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, খ্যাতনামা লোকসাহিত্য বিশারদ ও শিক্ষাবিদ। তাঁর জন্ম হয় ১৮৬৬ সালের ৩ নভেম্বর, মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে মাতুলালয়ে।
১৮৯৬ সাল তাঁর কর্মজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসে; পুথি সংগ্রহ ও পাঠচর্চার মধ্য দিয়ে তাঁর গবেষণার নবদিগন্ত সূচিত হয়। এই সময় তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনিই প্রথম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং টানা বারো বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে ১৯৩২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
গবেষক হিসেবে যেমন তিনি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবেও তাঁর অবস্থান অগ্রগণ্য। সাহিত্যের ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি, লোকসাহিত্য সম্পাদনা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ধারার ওপর তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
পাশাপাশি তিনি লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস ও গল্পও। সব মিলিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ৬০টিরও অধিক। গবেষণা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯২১ সালে তিনি 'রায়বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত হন।
দীনেশচন্দ্র সেনের উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ:
-
History of Bengali Language and Literature
-
বাংলার পুরনারী
-
প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান
-
হিন্দু সমাজ ও বৈষ্ণব ধর্ম
-
বীর কথা ও যুগসাহিত্য
-
রামায়ণী কথা
-
কৃত্তিবাসী রামায়ণ
তাছাড়া তিনি সম্পাদনা করেন বিখ্যাত লোকসাহিত্য সংকলন মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা, যা বাংলার লোকঐতিহ্যের ধারক হিসেবে সমাদৃত।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago
'তুমি মা কল্পতরু, আমরা সব পোষাগরু'- এই কবিতাংশটির রচয়িতা কে?
Created: 1 month ago
A
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
B
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
C
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
D
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত উনিশ শতকের প্রথমার্ধের একজন কবি ছিলেন, যিনি তাঁর কবিতায় হালকা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপকে প্রধান করে তুলেছিলেন। তাঁর লেখায় কল্পনার স্থান তেমন বড় নয়,
এবং তিনি আধুনিকতার প্রভাব অনুভব করলেও সেটিকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি শুধু একজন কবি নন, বরং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
-
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা।
-
১৮৩১ সালে তিনি 'সংবাদ প্রভাকর' নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন।
-
১৮৩৯ সাল থেকে এটি দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়।
-
তিনি আরও কিছু পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, যেমন:
-
সংবাদ রত্নাবলী
-
পাষণ্ডপীড়ণ
-
সংবাদ সাধুরঞ্জন
-
তাঁর কবিতা "নীলকর"-এ তিনি মহারানী ভিক্টোরিয়াকে সম্বোধন করে বলেন:
"তুমি মা কল্পতরু আমরা সব পোষা গরু
শিখিনি শিং বাঁকানো
কেবল খাবো খোল বিচিলি ঘাষ...
আমরা ভুসি পেলেই খুশি হব
ঘুষি খেলে বাঁচব না।"
এই কবিতার মাধ্যমে তিনি সমকালীন সমাজ ও রাজতন্ত্রের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
0
Updated: 1 month ago
'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি' এই চরণদ্বয়ের লেখক _____।
Created: 2 months ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
কুসুমকুমারী দাস
C
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
D
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
• "সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি" — এই পঙ্ক্তিটি মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচিত 'আমার পণ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
• মদনমোহন তর্কালঙ্কার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
-
তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বিল্বগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
-
তাঁর পারিবারিক পদবি ছিল চট্টোপাধ্যায়, তবে তিনি 'তর্কালঙ্কার' উপাধি নামেই বেশি পরিচিত।
-
তিনি শিশুদের জন্য উপযোগী একটি অসাধারণ বই ‘শিশু শিক্ষা’ রচনা করেন, যা তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয় (১৮৪৯ ও ১৮৫৩ সালে)।
-
তাঁরই লেখা বিখ্যাত শিশুপাঠ্য কবিতা “পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল”।
-
তাঁর মৌলিক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি হলো:
-
রসতরঙ্গিণী
-
বাসবদত্তা
-
• 'আমার পণ' কবিতার অংশবিশেষ:
আমার পণ
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর) ও বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 2 months ago
'কবর' নাটক কার রচনা?
Created: 3 months ago
A
শহীদুল্লাহ কায়সার
B
জহির রায়হান
C
মুনীর চৌধুরী
D
সত্যেন সেন
বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিকী নাটক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। এটি মূলত রচিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল পটভূমিতে।
লেখক নিজেই তখন কারাগারে বন্দি। সেই বন্দিদশায়, ১৯৫৩ সালে কারাগারে থাকা রাজবন্দিদের সহায়তায় প্রথম অভিনীত হয় এই নাটকটি। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
কাহিনির সারসংক্ষেপ
Irwin Shaw-এর বিখ্যাত নাটক "Bury The Dead" (১৯৩৬) অবলম্বনে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ‘কবর’ নাটকটি নির্মিত। এতে দেখা যায়, ভাষা আন্দোলনের এক মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহতদের মৃতদেহ শহরের বাইরে গভীর রাতে গোপনে কবরস্থ করতে আনা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেয় এক পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজ এবং তার সহযোগী এক নেতা, যার নাম নাটকে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে মিছিলে নিহত এসব আন্দোলনকারীর মৃতদেহ এতটাই বিকৃত যে, ধর্মীয় প্রথা মেনে দাফন না করে তারা একত্রে মাটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় গোর খোদক এবং এক পাগল, যিনি নিজেকে মুর্দা ফকির হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, এ লাশগুলো শহীদের—তাদের কবর দেওয়া যাবে না। নাটকের এক মোক্ষম মুহূর্তে দেখা যায়, মৃতদেহগুলো জীবন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেয়: “আমরা কবরে যাব না।” এই দৃশ্য দেখে ইন্সপেক্টর ও নেতা দুজনেই আতঙ্কে পালিয়ে যায়।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরী পরিচিতি
মুনীর চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বলিষ্ঠ বক্তা। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, মানিকগঞ্জ শহরে। প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
তাঁর মৌলিক নাটকসমূহ:
-
রক্তাক্ত প্রান্তর
-
চিঠি
-
কবর
-
দণ্ডকারণ্য
অনুবাদ নাটকসমূহ:
-
কেউ কিছু বলতে পারে না
-
রূপার কৌটা
-
মুখরা রমণী বশীকরণ
তথ্যসূত্র:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর
বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 3 months ago