কুক্কুরীপা ছিলেন চর্যাগীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ রচয়িতা, যিনি বাংলা চর্যার ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর পরিচয় ও রচনাবলি সম্পর্কে তথ্যগুলো নিম্নরূপ:
-
কুক্কুরীপা চর্যাগীতির তিনটি গান রচনা করেছেন (২, ২০ ও ৪৮ নম্বর), যার মধ্যে ৪৮ সংখ্যক পুথির লুপ্ত অংশ ছিল।
-
তাঁর চর্যার ভাষা ও শৈলী থেকে ধারণা করা হয় যে তিনি উচ্চবংশীয় বা কুলীন ছিলেন।
-
কুক্কুরীপা সম্ভবত একটি তান্ত্রিক নাম বা ছদ্মনাম; ‘পা’ যুক্ত থাকায় কেউ কেউ এটিকে গুরু প্রতি শ্রদ্ধাসূচক ছদ্মনাম মনে করেন।
-
তারানাথের মতে, তাঁর নামকরণ হয়েছে কারণ সঙ্গে সবসময় একটি কুক্কুরী থাকত।
-
ধারণা করা হয়, তিনি বাংলার উত্তরখণ্ডের অধিবাসী ছিলেন, তবে হিন্দিভাষীরা তাঁকে কপিলাবস্তু বা নেপালের বুদ্ধজন্মস্থান হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
-
সংস্কৃত রচনা ‘মহামায়াসাধন’ এর রচয়িতা হিসেবে তাঁর নাম পাওয়া গেছে; এ থেকে অনুমান করা হয় তিনি মহামায়ার উপাসক ছিলেন।
-
ড. শহীদুল্লাহর মতে, কুক্কুরীপা ৭৪০ থেকে ৮২০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জীবিত ছিলেন এবং ৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ধর্মপালের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন।
রচিত গ্রন্থ:
-
যোগভাবনাপ্রদেশ
-
স্রবপরিচ্ছদ
চর্যার পদসমূহ:
১. দুলি দুহি পীড়া' ধরণ ন জাই। রুখের তেগুলি কুম্ভীরে খাই'।
২. আঙ্গন ঘরপণ সুন ভো বিআতী। কানেট চোরে নিল অধরাতী।
৩. সসুরা নিদ গেল বহুড়ী জাগই'। কানেট চোরে নিল কা গই মাগই।
৪. দিবসহি' বহুড়ী কাউহি' ডর' ভাই'। রাতি ভইলে কামরু জাই।
৫. অইসনী' চর্যা কুকুরীপাত্র গাইল। কোড়ি মাঝে একু হিঅহি' সমাইল।
আধুনিক বাংলায় রূপান্তর:
১. মাদি কচ্ছপ দোহন করে দুগ্ধ-পাত্রে, দুধ ধরানো গেল না। গাছের তেঁতুল কুমিরে খায়।
২. ওগো প্রসূতি, ঘরের কাছে আঙিনা। অর্ধরাতে চোর কানপাশা নিয়ে গেল।
৩. স্বশুর নিদ্রা গেল, বধূ রইল জেগে। কানপাশা চোরে নিলে কার কাছে মাগা যায়?
৪. দিনে বধূ কাকের ভয়ে ভীত হয়। রাত হলে কামরাজ্যে (বা কামরূপ) যায়।
৫. এমন চর্যা কুক্কুরীপা গাইলেন। কোটির মধ্যে একের চিত্তে তা প্রবেশ করল।