আইনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা বিভিন্ন দার্শনিক, আইনবিদ ও চিন্তাবিদের ব্যাখ্যায় ভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তবে প্রত্যেকেই আইনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
-
গ্রিক দার্শনিক এ্যারিস্টটল মনে করেন, “আইন হল পক্ষপাতহীন যুক্তি।” অর্থাৎ আইন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, বরং নিরপেক্ষ যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
-
আইনবিদ জন অস্টিন এর মতে, “সার্বভৌম শক্তির আদেশই আইন।” তাঁর দৃষ্টিতে আইন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা শাসকের নির্দেশ, যা অমান্য করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
-
অধ্যাপক হল্যান্ড আইনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে— “আইন হল মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের এমন কতগুলো সাধারণ নিয়ম যা সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দ্বারা প্রযুক্ত হয়।” অর্থাৎ আইন মানুষের সমাজজীবনের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা দ্বারা প্রয়োগিত নিয়ম।
-
স্যার হেনরি মেইন এর মতে, “আইন হল পরিবর্তনশীল, ক্রমউন্নতিমূলক, ক্রমবর্ধমান ও দীর্ঘকালীন সামাজিক প্রথার গতির ফল।” তাঁর দৃষ্টিতে আইন স্থির নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়ের প্রয়োজনে গড়ে ওঠে ও বিকশিত হয়।
-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন আইনের একটি সার্বজনীন ও উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করেন। তাঁর মতে, “আইন হল সমাজের সে সব সুপ্রতিষ্ঠিত প্রথা ও রীতিনীতি যেগুলো সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিধিতে পরিণত হয়েছে এবং যাদের পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট সমর্থন রয়েছে।” অর্থাৎ আইন কেবল রাষ্ট্রীয় বিধি নয়, বরং সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থিত প্রথা ও রীতিনীতির পরিণতি।