বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কার রচনা?
A
দীনেশচন্দ্র সেনগুপ্ত
B
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
C
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
D
সুকুমার সেন
উত্তরের বিবরণ
‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবিষয়ক প্রথম গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।
-
এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির প্রণেতা হলেন দীনেশচন্দ্র সেন।
‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বইটিতে —
-
বঙ্গভাষা ও বঙ্গলিপির উৎস, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য, মধ্যযুগে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর কার্যকলাপ এবং তাদের সাহিত্যিক প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে সুসংবদ্ধ ও মনোগ্রাহী আলোচনা রয়েছে।
-
ইংরেজ শাসনের পূর্ববর্তী বাংলা সাহিত্য নিয়ে এতটা প্রাঞ্জল ও অনুরাগপূর্ণ ইতিহাস এর আগে কেউ রচনা করেননি।
-
এই গ্রন্থে সাহিত্যের সঙ্গে সমাজের গভীর সংযোগের দিকটি প্রথমবারের মতো বিশ্লেষণাত্মকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।
0
Updated: 3 months ago
নিচের কোন জন যুদ্ধকাব্যের রচয়িতা নন?
Created: 1 month ago
A
দৌলত উজির বাহরাম খাঁ
B
সাবিরিদ খাঁ
C
সৈয়দ সুলতান
D
সৈয়দ নূরুদ্দীন
‘জঙ্গনামা’ মূলত মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্যভিত্তিক একধরনের যুদ্ধকাব্য। এ ধরনের কাব্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি ইতিহাসে সংঘটিত যুদ্ধগুলোর ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা। নিচে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হলো—
-
ফারসি ‘জঙ্গ’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ, আর ‘জঙ্গনামা’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ বা তদ্বিষয়ক গ্রন্থ। অর্থাৎ ‘জঙ্গনামা’ কাব্যে মূলত যুদ্ধ-বিগ্রহকেই কেন্দ্র করে রচনা করা হয়।
-
বিশেষভাবে হযরত মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর স্বজনদের যুদ্ধ এবং এর করুণ পরিণামই এই কাব্যের প্রধান বিষয়।
-
আরবি-ফারসি সাহিত্যের মতোই বাংলায় ‘জঙ্গনামা’ বলতে বিশেষভাবে কারবালার যুদ্ধ ও তার বিষাদময় ঘটনাবলি বোঝানো হয়।
প্রশ্নে উল্লেখিত কবিদের মধ্যে—
১. দৌলত উজির বাহরাম খান – কারবালার কাহিনি অবলম্বনে ‘জঙ্গনাম বা মক্তুল হোসেন’ নামে যুদ্ধকাব্য রচনা করেছেন।
২. সাবিরিদ খাঁ – ‘হানিফা-কয়রাপরী’ নামে জঙ্গনামা ধাঁচের যুদ্ধকাব্য লিখেছেন।
৩. সৈয়দ সুলতান – ‘জয়কুম রাজার লড়াই’ নামে যুদ্ধকাহিনীকাব্য রচনা করেছেন।
অন্যদিকে—
-
সৈয়দ নুরুদ্দিন যুদ্ধকাব্য রচনা করেননি, তিনি মূলত মধ্যযুগীয় ইসলামি ধর্মসাহিত্যের কবি।
-
তাঁর জন্ম চট্টগ্রামের মির্জাপুরে। পূর্বপুরুষ সৈয়দ হাসান ষোলো শতকে গৌড় থেকে চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
নুরুদ্দিনের চারটি কাব্য হলো—
-
দাকায়েকুল হেকায়েক: ইমাম গাজ্জালির একই নামের আরবি গ্রন্থের ভাবানুবাদ। এতে মৃত্যু, আজরাইল, রুহ, গোর-আজাব, ইস্রাফিল, কাফন, সাদকা প্রভৃতি বিষয়ে ২২টি অধ্যায় রয়েছে।
-
রাহাতুল কুলব বা কেয়ামতনামা: কুরআন, হাদিস ও তাফসিরভিত্তিক রচনা।
-
বুরহানুল আরেফিন: সুফিতত্ত্ব ও হিতোপদেশমূলক কাব্য।
-
মুসার সওয়াল: প্রশ্নোত্তরমূলক ক্ষুদ্র কাব্য।
কারবালা-কেন্দ্রিক সাহিত্যকে মর্সিয়া সাহিত্যও বলা হয়।
-
‘মর্সিয়া’ শব্দটি আরবি, এর অর্থ শোক। তাই মর্সিয়া সাহিত্য হলো শোকবিষয়ক রচনা।
-
জঙ্গনামা ও মর্সিয়া সাহিত্য বিষয়বস্তুর দিক থেকে মিল থাকলেও রস ও আঙ্গিকে পার্থক্য বিদ্যমান।
-
এ সাহিত্যধারা প্রথমে আরবে, পরে পারস্যে বিকাশ লাভ করে এবং মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে বাংলায় প্রবেশ করে।
-
বাংলায় এ কাব্যধারা মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
0
Updated: 1 month ago
'লালসালু' উপন্যাসটির লেখক কে?
Created: 3 months ago
A
মুনির চৌধুরী
B
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
C
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
D
শওকত আলী
লালসালু
প্রকাশ ও প্রেক্ষাপট:
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ‘লালসালু’ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে। বাংলা সাহিত্যে এটি একটি মাইলফলক, যেখানে গ্রামবাংলার জীবন, প্রকৃতি ও ধর্মীয় শোষণের বাস্তবতা গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
কাহিনিসূত্রের মূল সুর:
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ, এক ধূর্ত ধর্মব্যবসায়ী। সে নোয়াখালি থেকে গারো পাহাড়ি অঞ্চলের এক গ্রামে এসে নামহীন একটি কবরকে পিরের মাজার বলে দাবি করে এবং ধর্মের নামে সরল মানুষদের ধোঁকা দিয়ে নিজের আধিপত্য কায়েম করে। মজিদের এই ষড়যন্ত্রে ধর্ম হয়ে ওঠে একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
প্রধান চরিত্রসমূহ:
-
মজিদ — ধর্মব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় চরিত্র
-
জমিলা — মজিদের দ্বিতীয়, প্রতিবাদী তরুণী স্ত্রী
-
খালেক ব্যাপারি — প্রভাবশালী গ্রামবাসী
-
রহিমা — মজিদের প্রথম স্ত্রী
-
আমেনা, আক্কাস, তাহেরের বাপ, হাসুনির মা — অন্যান্য গ্রামীণ চরিত্র, যারা উপন্যাসে সমাজচিত্রকে ঘনীভূত করে
দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতেই অপমানিত মজিদ:
যদিও মজিদ ক্ষমতা, অর্থ ও নারীত্ব সব কিছু নিজের করায়ত্ত করতে চায়, কিন্তু জমিলা তাকে লাঞ্ছিত করে তার কর্তৃত্বের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। জমিলাকে লেখক এক বিদ্রোহিণী নারীর প্রতীকে রূপ দিয়েছেন।
উপন্যাসের মূল্যায়ন:
'লালসালু' কেবল ধর্ম নিয়ে নয়, এটি সময়, সমাজ, ক্ষমতা ও প্রতারণার সীমানা পেরিয়ে এক কালোত্তীর্ণ সাহিত্যকীর্তি। লেখকের ভাষায়,
"খোদার এলেমে বুক ভরে না, তলায় পেট শূন্য বলে।" — এই একটি পঙক্তিতেই মজিদের মতো ধর্মব্যবসায়ীদের ভণ্ডামি ফুটে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক অনুবাদ ও স্বীকৃতি:
-
ইংরেজিতে: Tree Without Roots (১৯৬৭)
-
ফরাসিতে: L’Arbre Sans Racines (১৯৬১), অনুবাদক: লেখকের স্ত্রী Anne Marie
✍️ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্: সমাজ-সচেতন কথাশিল্পী
-
জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯২২, ষোলশহর, চট্টগ্রাম
-
ছাত্রজীবনে সম্পাদনা করতেন হাতে লেখা পত্রিকা ভোরের আলো (ফেনি স্কুলে)
-
প্রথম গল্প: হঠাৎ আলোর ঝলকানি, প্রকাশিত হয় ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে
-
পেশাগতভাবে কাজ করেছেন ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় (১৯৪৫-১৯৪৭)
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস:
-
লালসালু (১৯৪৮)
-
চাঁদের অমাবস্যা
-
কাঁদো নদী কাঁদো
-
The Ugly Asian (ইংরেজি)
গল্পগ্রন্থ:
-
নয়নচারা
-
দুই তীর ও অন্যান্য গল্প
নাটক:
-
বহিপীর
-
তরঙ্গভঙ্গ
-
উজান মৃত্যু
এইভাবে ‘লালসালু’ কেবল এক উপন্যাস নয়, বরং ধর্মীয় ভণ্ডামি ও ক্ষমতার লোভে সমাজে কীভাবে সাধারণ মানুষ নিপীড়িত হয়, তার এক শক্তিশালী সাহিত্যিক দলিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এই সৃষ্টি বাংলা কথাসাহিত্যের এক অসাধারণ অর্জন।
0
Updated: 3 months ago
মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর রচনা কোনটি?
Created: 2 months ago
A
এইসব দিন রাত্রি
B
নূরলদীনের সারা জীবন
C
একাত্তরের দিনগুলি
D
সৎ মানুষের খোঁজে
একাত্তরের দিনগুলি
‘একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি স্মৃতিকথা গ্রন্থ, লিখেছেন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমাম। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
জাহানারা ইমাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার পুত্র রুমী ও স্বামীকে হারান। সেই সময় তার জীবন ছিল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভয়-উদ্বেগে ঘেরা, তবু তার মনে ছিল দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার স্বপ্ন। সেই দুঃসহ নয় মাসের দৈনন্দিন ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার কর্মকাণ্ডের বর্ণনা তিনি লিখতেন ছোট চিরকুটে, ছিন্নপত্রে এবং সংকেতভঙ্গিতে।
গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি মর্মস্পর্শী ও শিহরণ জাগানো সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়।
জাহানারা ইমাম
-
জন্ম: ১৯২৯, সুন্দরপুর, মুর্শিদাবাদ জেলা।
-
খ্যাতি: শহীদ জননী নামে পরিচিত।
-
সক্রিয় ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে বাস্তবায়ন এবং ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক।
-
অসুস্থতা ও মৃত্যু: ১৯৮১-এর দিকে মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত, মৃত্যুহয় ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন, আমেরিকার মিশিগান স্টেটের ডেট্রয়েটে।
অন্য গ্রন্থসমূহ:
-
সাতটি তারার ঝিকিমিকি
-
অন্যজীবন
-
বুকের ভিতর আগুন
-
নাটকের অবসান
-
নিঃসঙ্গ পাইন
-
প্রবাসের দিনগুলি
-
ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
-
হুমায়ূন আহমেদ: প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’, বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়।
-
সৈয়দ শামসুল হক: কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারা জীবন’, যা রংপুরের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নুরুলদীনের সামন্তবিরোধী সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে রচিত।
উৎস: বাংলাপিডিয়া, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
0
Updated: 2 months ago