কাজী নজরুল ইসলামের কোন গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত হয়নি?
A
অগ্নিবীণা
B
বিষের বাঁশি
C
ভাঙার গান
D
চন্দ্রবিন্দু
উত্তরের বিবরণ
কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের মধ্যে বেশ কিছু গ্রন্থ ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে কিছু গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করা হলেও শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়নি। নিচে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
-
যুগবাণী: এটি ছিল প্রবন্ধ গ্রন্থ এবং নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধ বই। 'নবযুগ' পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি নিবন্ধ একত্র করে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। ২৩ নভেম্বর ১৯২২ সালে ফৌজদারি বিধির ৯৯এ ধারায় ব্রিটিশ সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে (গেজেট নং ১৬৬৬১পি)। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বইটিকে ভয়ংকর বলে আখ্যা দেওয়া হয়, কারণ এতে উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় ১৯৪৭ সালে।
-
বিষের বাঁশি: এটি একটি কবিতাগ্রন্থ। ২২ অক্টোবর ১৯২৪ সালে (মতান্তরে ২৪ অক্টোবর) গেজেট ঘোষণায় (গেজেট নং ১০৭২পি) বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয় ২৭ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে।
-
ভাঙার গান: আরেকটি কবিতাগ্রন্থ, যা ১১ নভেম্বর ১৯২৪ সালে নিষিদ্ধ করা হয়।
-
প্রলয়শিখা: ১৯৩০ সালের আগস্টে প্রকাশিত এই কবিতাগ্রন্থটি ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩০ সালে নিষিদ্ধ করা হয় (গেজেট নং ১৪০৮৭পি)। এতে থাকা ‘যতীন দাশ’, ‘পূজা অভিনয়’, ‘হবে জয়’, ‘জাগরণ’, ‘নব ভারতের হলদিঘাট’ প্রভৃতি কবিতাকে রাজদ্রোহমূলক আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
-
চন্দ্রবিন্দু: এটি একটি গানের সংকলন বা গীতিগ্রন্থ। ১৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে এটি নিষিদ্ধ হয় (গেজেট নং ১৭৬২৫)।
এছাড়া নজরুলের আরও কিছু গ্রন্থ যেমন অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, ফণিমনসা, সর্বহারা, রুদ্রমঙ্গল বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ থাকলেও শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে অগ্নিবীণা গ্রন্থের কিছু অংশ বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত কবিতা সেন্সরের শিকার হয়েছিল।
বিশেষত ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের রাজনৈতিক কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশের পর ব্রিটিশ সরকার পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করে এবং কবিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ১৯২২ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের মোট ৫টি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়েছিল—যুগবাণী, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা ও চন্দ্রবিন্দু। এর মধ্যে প্রথম নিষিদ্ধ বই ছিল যুগবাণী এবং সর্বশেষ নিষিদ্ধ গ্রন্থ ছিল চন্দ্রবিন্দু।

0
Updated: 15 hours ago
নিচের কোন কাব্য কাজী নজরুল ইসলামের উদারনৈতিক ঐতিহ্যভাবনার ধারক?
Created: 4 days ago
A
বিষের বাঁশী
B
অগ্নি-বীণা
C
সিন্ধু-হিন্দোল
D
চক্রবাক
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যে উদারনৈতিক ঐতিহ্য ও মানবিক মূল্যবোধের চিত্র বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা এবং বিষের বাঁশী-এ।
এই কাব্যগ্রন্থগুলোতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভিন্নতা সহিষ্ণুতা, মানবিক সাম্য এবং উদারনৈতিক চেতনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
নজরুলের কবিতা ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
-
উদারতাবাদ: শব্দটির ইংরেজি Liberalism, লাতিন শব্দ liberalis থেকে উদ্ভূত।
-
উদারনীতিবাদের সাধারণ অর্থ হলো ব্যক্তিস্বাধীনতার নীতি প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
-
প্রকাশকাল ও প্রেক্ষাপট: প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত; প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা।
-
কাব্যের মূল বিষয়বস্তু: সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্রোহ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবিক সাম্য এবং উদারনৈতিক মানবতাবোধ।
-
উল্লেখযোগ্য কবিতা: 'বিদ্রোহী', 'আগমনী'।
-
কাব্যের ১২টি কবিতার মধ্যে: ৭টি ইসলামী ঐতিহ্যভিত্তিক, ৩টি বিশুদ্ধ হিন্দু ঐতিহ্যভিত্তিক, এবং ২টি হিন্দু-মুসলিম মিশ্র ঐতিহ্যভিত্তিক।
-
ইসলামী ঐতিহ্য: খোদার আসন, আরশ ছেদিয়া, বোররাক, জিব্রাইল, হাবিয়া-দোযখ ইত্যাদি।
-
হিন্দু ঐতিহ্য: নটরাজ ধূর্জটি, হােমশিখা, জমদগ্নি, ইন্দ্রানী, কৃষ্ণ-কন্ঠ, ব্যোমকেশ, ইশান, শ্যাম, বিষ্ণু, পরশুরাম, বলরাম, ভৃগু ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার।
অগ্নিবীণা কাব্যের কবিতাগুলো বিষয়ভিত্তিক চার ভাগে বিভক্ত করা যায়:
-
দ্রোহ, বিপ্লব ও আমিত্ব: প্রলয়োল্লাস, বিদ্রোহী, ধূমকেতু
-
সময় ও যুদ্ধ: কামাল পাশা, আনোয়ার, রণভেরী, শাত-ইল-আরব
-
মুসলিম ঐতিহ্য: মোহররম, কোরবানী, খেয়াপারের তরণী
-
হিন্দু ঐতিহ্য: রক্তাম্বরধারিণী মা, আগমনী
বিষের বাঁশী কাব্যগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য:
-
প্রকাশকাল: ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে (আগস্ট, ১৯২৪)
-
প্রথম নিষিদ্ধকৃত কাব্যগ্রন্থ; নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয় ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল।
-
কবিতাগুলো উদারনৈতিক ঐতিহ্য, সামাজিক সচেতনতা, মানবিকতা এবং বিপ্লবী চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
-
উল্লেখযোগ্য কবিতা: বন্দী-বন্দনা, উদ্বোধন, উৎসর্গ, চরকার গান, জাতের বজ্জাতি, বন্দনা-গান, বিদ্রোহীর বাণী, মুক্ত-পিঞ্জর, যুগান্তরের গান, শিকল-পরার গান।
পরিশেষে বলা যায়, 'বিষের বাঁশী' কাব্যগ্রন্থ মূলত সামাজিক দ্রোহ ও বিপ্লবী চেতনার মাধ্যমে উদারনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে 'অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থে নজরুলের উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী চেতনার গভীরতা এবং বিস্তৃত প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
অতিরিক্ত তথ্য:
-
কাজী নজরুল ইসলামের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ:
-
সিন্ধু হিন্দোল: প্রেমের কবিতা ও গান, প্রকাশিত ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে।
-
চক্রবাক: প্রেমের কবিতা ও গান, প্রকাশিত ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে।
-

0
Updated: 4 days ago
কোনটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গ্রন্থ নয়?
Created: 4 days ago
A
ব্যথার দান
B
দোলনচাঁপা
C
সোনার তরী
D
শিউলিমালা
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা সাহিত্যে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে খ্যাত এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে পরিচিত।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া।
-
কাব্যগ্রন্থ:
-
অগ্নিবীণা
-
সাম্যবাদী
-
ঝিঙে ফুল
-
দোলনচাঁপা
-
সিন্ধু হিন্দোল
-
চক্রবাক
-
নতুন চাঁদ
-
মরুভাস্কর
-
-
গল্পগ্রন্থ:
-
ব্যথার দান
-
রিক্তের বেদন
-
শিউলিমালা
-
-
নাটক:
-
ঝিলিমিলি
-
আলেয়া
-
উল্লেখযোগ্য, “সোনার তরী” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ।

0
Updated: 4 days ago
নিচের কোনটি কাজী নজরুল সম্পাদিত পত্রিকা নয়?
Created: 1 day ago
A
লাঙ্গল
B
ধূমকেতু
C
দৈনিক নবযুগ
D
বিজলী
কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্রিকা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য:
-
‘ধূমকেতু’ পত্রিকা: ১৯২২ সালে প্রকাশিত, সম্পাদনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
-
‘লাঙ্গল’ পত্রিকা: ১৯২৫ সালে প্রকাশিত; প্রধান পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
-
‘দৈনিক নবযুগ’: কাজী নজরুল ইসলাম এবং কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত।
কাজী নজরুলের সম্পাদনা নয় এমন পত্রিকা:
-
‘বিজলী’: এই পত্রিকার সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন নলিনীকান্ত সরকার, প্রবোধকুমার সান্যাল প্রমুখ।

0
Updated: 1 day ago