চর্যাপদের ভাষাকে 'আলো-আঁধারি' ভাষা বলেছেন কে?
A
বিজয়চন্দ্র মজুমদার
B
ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী
C
ড. সুকুমার সেন
D
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
উত্তরের বিবরণ
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন নিদর্শন, যা ভাষা ও ছন্দের দিক থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এর ভাষাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যা’ বা ‘সান্ধ্য ভাষা’, যা কোথাও স্পষ্ট, কোথাও অস্পষ্ট। এ কারণে একে ‘আলো-আঁধারি ভাষা’ বলা হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই ভাষা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন: “আলো আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না। যাঁহারা সাধন-ভজন করেন, তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই।” চর্যাপদের পদগুলো প্রাচীন ছন্দে রচিত কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়; তবে আধুনিক ছন্দতত্ত্ব অনুযায়ী এগুলোকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দের অধীনে বিবেচনা করা হয়।
-
১৯২০ সালে বিজয়চন্দ্র মজুমদার প্রথম চর্যাপদের ভাষা নিয়ে আলোচনা করেন।
-
১৯২৬ সালে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চর্যাপদের ভাষা, ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও ছন্দ বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ বাংলা ভাষার সম্পদ। তাঁর গ্রন্থ Origin and Development of Bengali Language এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত। অধিকাংশ ভাষাবিজ্ঞানী এ অভিমত সমর্থন করেন।
-
১৯২৭ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ করেন।
-
ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুকুমার সেন ও ড. শশীভূষণ দাশগুপ্ত চর্যাপদের ভাষা, বিষয়বস্তু ও প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ বাংলা ভাষায় রচিত।
-
১৯৪৬ সালে ড. শশীভূষণ দাশগুপ্ত সহজযান প্রসঙ্গে চর্যাপদের অন্তর্নিহিত তত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
-
বিহারের পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য, বৌদ্ধ সহজযান ও চর্যাগীতিকা নিয়ে ইংরেজি ও হিন্দিতে ব্যাপক গবেষণা করেছেন।
0
Updated: 1 month ago
'চর্যাপদ' কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
Created: 2 months ago
A
১৮০০
B
১৮৫৭
C
১৯০৭
D
১৯০৯
চর্যাপদ
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম কবিতা/গান কাব্যসংকলন হিসেবে পরিচিত।
-
আদি যুগে লেখা এই পদগুলি মূলত রচনা করেছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়াগণ। পদগুলোর বিষয়বস্তুতে বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী সাধনা, ভজন এবং আধ্যাত্মিক তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
-
চর্যাপদকে বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত দলিল বলা হয়।
-
১৯০৭ সালে ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। পরে ১৯১৬ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদ আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়।
পদসংখ্যা ও প্রাপ্তি
-
চর্যাপদের মোট পদসংখ্যা ৫০টি। তবে গবেষক সুকুমার সেন মনে করেন পদসংখ্যা ৫১টি।
-
আবিষ্কৃত হয়েছে সাড়ে ৪৬টি পদ।
-
অনাবিষ্কৃত বা বিলুপ্ত পদ রয়েছে সাড়ে ৩টি।
-
ভুসুকুপা রচিত ২৩নং পদ অসম্পূর্ণ (৬টি স্তবক পাওয়া গেছে, ৪টি হারিয়ে গেছে)।
-
এছাড়া ২৪নং (কাহ্নপা), ২৫নং (তন্ত্রীপা), এবং ৪৮নং (কুক্কুরীপা) পদগুলো পাওয়া যায়নি।
অনুবাদ ও গবেষণা
-
চর্যাপদ তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন কীর্তিচন্দ্র। পরে ১৯৩৮ সালে প্রবোধচন্দ্র বাগচী তিব্বতি অনুবাদ আবিষ্কার করেন।
-
প্রথম ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৯২৭)।
-
চর্যাপদের ভাষা নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন বিজয়চন্দ্র মজুমদার (১৯২০)।
-
ড. শশীভূষণ দাশগুপ্ত ১৯৪৬ সালে সহজযান ও চর্যাপদের অন্তর্নিহিত দর্শন নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।
-
রাহুল সাংকৃত্যায়ন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য, সহজযান ও চর্যাগীতিকা নিয়ে হিন্দি ও ইংরেজিতে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন।
উৎস:
-
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস – মাহবুবুল আলম
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর
0
Updated: 2 months ago
"কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।" - চর্যাপদের এই পঙ্ক্তিটিতে “পাঞ্চ বি ডাল” দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
Created: 1 month ago
A
পঞ্চতত্ত্ব
B
পঞ্চ প্রাণ
C
পঞ্চশর
D
পঞ্চ ইন্দ্রিয়
চর্যাপদের প্রথম পদ —
''কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডালচঞ্চল চীএ পইঠা কাল।'' রচয়িতা লুইপা। আধুনিক বাংলায় এর রূপান্তর:
''কায়া তরুর মত, পাঁচটি তার ডালচঞ্চল চিত্তে কাল প্রবেশ করেছে।।''
-
অন্তর্নিহিত ভাব:
• মানুষকে একটি গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার পাঁচটি শাখা হল পঞ্চ ইন্দ্রিয় (চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ত্বক)।
• এই পাঁচ ইন্দ্রিয় দ্বারা মানুষ দৈনন্দিন বস্তুজগতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।
• চর্যাপদের গূঢ় ভাষায়:-
“তরু” = দেহ
-
“ডাল/শাখা” = ইন্দ্রিয়
-
“পাঞ্চ বি ডাল” = দেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয়
-
-
লুইপা সম্পর্কিত তথ্য:
• প্রবীণ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য ও চর্যাপদের কবি।
• মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর অনুমান: ৭৩০–৮১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জীবিত ছিলেন।
• চর্যাপদে দুটি পদ লিখেছেন (১ ও ২৯ নং পদ)।
0
Updated: 1 month ago
চর্যাপদের তিব্বতি ভাষা অনুবাদ করেন কে?
Created: 1 month ago
A
শান্তিদেব
B
কীর্তিচন্দ্র
C
প্রবোধচন্দ্র
D
ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বা গানের সংকলন, যা বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। ১৯০৭ সালে ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
চর্যাপদের চর্যাগুলো বৌদ্ধ সহজিয়াগণ রচনা করেছেন এবং এতে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কিত চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে। চর্যাপদকে তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেন কীর্তিচন্দ্র। ১৯৩৮ সালে প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যাপদের তিব্বতী ভাষার অনুবাদ আবিষ্কার করেন।
0
Updated: 1 month ago