কাঁচাপাট এমন এক প্রাকৃতিক আঁশ যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি মূলত বস্তা, দড়ি, কার্পেট, আসবাবপত্রের মোড়কসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রশ্নে উল্লেখিত “কাঁচাপাট রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষ দেশ” বলতে বোঝানো হয়েছে যে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কাঁচা পাট রপ্তানি করে। এর সঠিক উত্তর হলো ভারত।
ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঁচাপাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহার অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পাট চাষ হয়। এই অঞ্চলগুলোর আবহাওয়া ও মাটির গঠন পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভারতে পাট উৎপাদনের পর উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানীয় পাটশিল্পে ব্যবহৃত হলেও, অতিরিক্ত কাঁচাপাট বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ভারত প্রধানত চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
বিশ্ববাজারে ভারতের আধিপত্যের অন্যতম কারণ হলো তাদের উন্নত পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এবং রপ্তানি সহায়তামূলক নীতি। ভারত সরকার পাটশিল্পকে বিশেষভাবে প্রণোদনা দেয়, যেমন—রপ্তানির ক্ষেত্রে কর রেয়াত, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ভর্তুকি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচারণা চালানোর জন্য বিশেষ ফান্ড বরাদ্দ। এসব কারণে ভারত নিয়মিতভাবে বিপুল পরিমাণ কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাট উৎপাদনকারী দেশ হলেও বর্তমানে মূলত পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বাধীনতার পর একসময় বাংলাদেশই ছিল কাঁচাপাট রপ্তানিতে শীর্ষে, কিন্তু বর্তমানে দেশটি অভ্যন্তরীণ পাটশিল্পের কাঁচামালের চাহিদা মেটাতে কাঁচাপাট রপ্তানি সীমিত করেছে। এতে ভারত সেই জায়গায় এগিয়ে এসেছে।
চীন ও পাকিস্তান পাট উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও তারা মূলত আমদানি নির্ভর, অর্থাৎ নিজেদের শিল্পের জন্য অন্য দেশ থেকে পাট আমদানি করে। আর মিশর পাট উৎপাদন বা রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে না, বরং এটি বিদেশ থেকে পাটজাত পণ্য আমদানি করে থাকে।
ভারতের কাঁচাপাট রপ্তানির সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ কৃষি অভিজ্ঞতা, কার্যকর রপ্তানি কৌশল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের সক্ষমতা। সেই সঙ্গে দেশটির শিল্পাঞ্চলে পাটজাত পণ্য তৈরির আধুনিক প্রযুক্তি কাঁচাপাটের চাহিদা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, কাঁচাপাট রপ্তানিতে ভারত আজ বৈশ্বিক বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এর মাধ্যমে দেশটি শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই পাচ্ছে না, বরং পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক আঁশ হিসেবে পাটের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও আরও শক্তিশালী করছে।