‘সাজাহান’ নাটক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথম সার্থক ঐতিহাসিক নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯০৯ সালে রচিত এই নাটকে মোগল সম্রাট সাজাহানের জীবনকাহিনীকে কেন্দ্র করে এক গভীর ঐতিহাসিক চেতনার নির্মাণ দেখা যায়।
এটি রচনা করেন কবি, নাট্যকার ও দেশাত্মবোধক গীতির স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যিনি প্রথমবারের মতো সাজাহানকে নাটকের চরিত্র হিসেবে বাংলা সাহিত্যে উপস্থাপন করেন। উল্লেখযোগ্য যে, এই নাটকেই রয়েছে তাঁর অমর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’, যা বাংলা গান ও নাট্যজগতের মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য রচনায়ও ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট অনন্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে—
-
‘গড্ডলিকা’ রাজশেখর বসু রচিত একটি প্রবন্ধসংকলন বা গল্পগ্রন্থ,
-
‘পল্লীসমাজ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত সমাজ-চিত্রমূলক একটি উপন্যাস,
-
এবং ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়: জীবন ও সাহিত্যকীর্তি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই সাহিত্যিক ছিলেন কবি, নাট্যকার এবং গীতিকার। ছাত্রাবস্থায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আর্য্যগাথা’ এবং বিলেতে অবস্থানকালে ‘Lyrics of Ind’ (১৮৮৬) প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানত কবিতা রচনায় মনোযোগী ছিলেন এবং এই সময়ে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছিল ১২টি।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি অসংখ্য গান রচনা করেন। ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ এবং ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ তাঁর রচিত সেইসব গানের মধ্যে অন্যতম, যেগুলো আজও বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে আছে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি ১৯০৫ সালেই কলকাতায় ‘পূর্ণিমা মিলন’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৯১৩ সালের ১৭ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর নাট্যধারা
ঐতিহাসিক নাটকসমূহ:
-
তারাবাঈ
-
প্রতাপ-সিংহ
-
দুর্গাদাস
-
নূরজাহান
-
মেবার পতন
-
সাজাহান
-
চন্দ্রগুপ্ত
-
সিংহলবিজয়
সামাজিক নাটকসমূহ:
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতা, কাব্যময় ভাষা এবং দেশপ্রেমের যে সংমিশ্রণ দেখা যায়, তা বাংলা নাট্যসাহিত্যের ভান্ডারে এক অমূল্য সংযোজন।
তথ্যসূত্র: