'লালসালু' উপন্যাসটির লেখক কে?
A
মুনির চৌধুরী
B
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
C
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
D
শওকত আলী
উত্তরের বিবরণ
লালসালু
প্রকাশ ও প্রেক্ষাপট:
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ‘লালসালু’ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে। বাংলা সাহিত্যে এটি একটি মাইলফলক, যেখানে গ্রামবাংলার জীবন, প্রকৃতি ও ধর্মীয় শোষণের বাস্তবতা গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
কাহিনিসূত্রের মূল সুর:
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ, এক ধূর্ত ধর্মব্যবসায়ী। সে নোয়াখালি থেকে গারো পাহাড়ি অঞ্চলের এক গ্রামে এসে নামহীন একটি কবরকে পিরের মাজার বলে দাবি করে এবং ধর্মের নামে সরল মানুষদের ধোঁকা দিয়ে নিজের আধিপত্য কায়েম করে। মজিদের এই ষড়যন্ত্রে ধর্ম হয়ে ওঠে একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
প্রধান চরিত্রসমূহ:
-
মজিদ — ধর্মব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় চরিত্র
-
জমিলা — মজিদের দ্বিতীয়, প্রতিবাদী তরুণী স্ত্রী
-
খালেক ব্যাপারি — প্রভাবশালী গ্রামবাসী
-
রহিমা — মজিদের প্রথম স্ত্রী
-
আমেনা, আক্কাস, তাহেরের বাপ, হাসুনির মা — অন্যান্য গ্রামীণ চরিত্র, যারা উপন্যাসে সমাজচিত্রকে ঘনীভূত করে
দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতেই অপমানিত মজিদ:
যদিও মজিদ ক্ষমতা, অর্থ ও নারীত্ব সব কিছু নিজের করায়ত্ত করতে চায়, কিন্তু জমিলা তাকে লাঞ্ছিত করে তার কর্তৃত্বের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। জমিলাকে লেখক এক বিদ্রোহিণী নারীর প্রতীকে রূপ দিয়েছেন।
উপন্যাসের মূল্যায়ন:
'লালসালু' কেবল ধর্ম নিয়ে নয়, এটি সময়, সমাজ, ক্ষমতা ও প্রতারণার সীমানা পেরিয়ে এক কালোত্তীর্ণ সাহিত্যকীর্তি। লেখকের ভাষায়,
"খোদার এলেমে বুক ভরে না, তলায় পেট শূন্য বলে।" — এই একটি পঙক্তিতেই মজিদের মতো ধর্মব্যবসায়ীদের ভণ্ডামি ফুটে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক অনুবাদ ও স্বীকৃতি:
-
ইংরেজিতে: Tree Without Roots (১৯৬৭)
-
ফরাসিতে: L’Arbre Sans Racines (১৯৬১), অনুবাদক: লেখকের স্ত্রী Anne Marie
✍️ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্: সমাজ-সচেতন কথাশিল্পী
-
জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯২২, ষোলশহর, চট্টগ্রাম
-
ছাত্রজীবনে সম্পাদনা করতেন হাতে লেখা পত্রিকা ভোরের আলো (ফেনি স্কুলে)
-
প্রথম গল্প: হঠাৎ আলোর ঝলকানি, প্রকাশিত হয় ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে
-
পেশাগতভাবে কাজ করেছেন ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় (১৯৪৫-১৯৪৭)
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস:
-
লালসালু (১৯৪৮)
-
চাঁদের অমাবস্যা
-
কাঁদো নদী কাঁদো
-
The Ugly Asian (ইংরেজি)
গল্পগ্রন্থ:
-
নয়নচারা
-
দুই তীর ও অন্যান্য গল্প
নাটক:
-
বহিপীর
-
তরঙ্গভঙ্গ
-
উজান মৃত্যু
এইভাবে ‘লালসালু’ কেবল এক উপন্যাস নয়, বরং ধর্মীয় ভণ্ডামি ও ক্ষমতার লোভে সমাজে কীভাবে সাধারণ মানুষ নিপীড়িত হয়, তার এক শক্তিশালী সাহিত্যিক দলিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এই সৃষ্টি বাংলা কথাসাহিত্যের এক অসাধারণ অর্জন।
0
Updated: 3 months ago
'আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি'-এর রচয়িতা কে?
Created: 3 months ago
A
সিকান্দার আবু জাফর
B
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
C
ফররুখ আহমদ
D
আহসান হাবীব
“আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কাব্যগ্রন্থ
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর শক্তিশালী কণ্ঠে উচ্চারিত কাব্যগ্রন্থ “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ৩৯টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই গ্রন্থে কবি বাঙালি জাতিসত্তার শিকড় অনুসন্ধান করে সাহসী, সংগ্রামী মানুষের চেতনার এক ঐক্যবদ্ধ প্রতিচিত্র তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক চেতনা ও আত্মপরিচয়ের গভীর অনুসন্ধান এই কাব্যের মূল সুর।
এই গ্রন্থের শিরোনাম কবিতাটির কিছু পংক্তি:
"আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি
তার বুকে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল—"
● আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, যিনি কেবল কবি নন, একইসঙ্গে ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম ছিল আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান।
● তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহ
-
সাত নরীর হার
-
কখনো রং কখনো সুর
-
কমলের চোখ
-
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
-
সহিষ্ণু প্রতীক্ষা
-
প্রেমের কবিতা
-
নির্বাচিত কবিতা
-
আমার সকল কথা
-
মসৃণ কৃষ্ণ গোলাপ ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর) ও বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago
'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়' চরণটি কার রচনা?
Created: 5 months ago
A
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
B
মধুসূদন দত্ত
C
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
D
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়’— এই অমর পঙ্ক্তিটি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দেশাত্মবোধক কাব্য পদ্মিনী উপাখ্যান থেকে নেওয়া। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাথমিক দেশপ্রেমবোধক কবিতা, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের মধ্যে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক। তাঁর জন্ম হয় পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বাকুলিয়া গ্রামে। ছাত্রজীবনেই তাঁর কবিতা ঈশ্বরগুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যিক যাত্রার প্রধান ও প্রথম উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি পদ্মিনী উপাখ্যান, যা ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত হয়।
এই কাব্যটি টডের Annals and Antiquities of Rajasthan গ্রন্থের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে রচিত একটি ঐতিহাসিক রোমান্টিক কবিতা। ইংরেজি কাব্যরীতির প্রভাবে গড়ে ওঠা এই কাব্যে রঙ্গলাল স্বাধীনতার প্রতি তাঁর গভীর আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন:
“স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্বশৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়?”
এই পঙ্ক্তিগুলি পরবর্তীতে বিপ্লবীদের মধ্যে চেতনার সঞ্চার করে।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্য হলো:
-
কর্মদেবী
-
শূরসুন্দরী
-
কাঞ্চী কাবেরী
এছাড়াও, তিনি কালিদাসের ঋতুসংহার ও কুমারসম্ভব-এর বাংলা পদ্যানুবাদ করেন (১৮৭২)। তাঁর নীতিকুসুমাঞ্জলি (১৮৭২) সংস্কৃত নীতিগর্ভ ও তত্ত্বমূলক কবিতার আরেকটি অনুবাদসাহিত্য।
উৎস:
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
-
বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 5 months ago
'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে' গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
Created: 1 month ago
A
সৈয়দ আলী আহসান
B
সুকান্ত ভট্টাচার্য
C
হুমায়ুন আজাদ
D
নির্মলেন্দু গুণ
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে
-
এটি হুমায়ুন আজাদের রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ।
-
গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে।
হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য:
-
জন্ম: ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭, রাড়িখাল, বিক্রমপুর।
-
পেশা: লেখক ও অধ্যাপক।
-
প্রথম কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)।
-
পুরস্কার: বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৬)।
-
মৃত্যু: ১২ আগস্ট ২০০৪।
হুমায়ুন আজাদের কাব্যগ্রন্থসমূহ:
-
অলৌকিক ইস্টিমার
-
জ্বলো চিতাবাঘ
-
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে
-
যতোই গভীরে যাই মধু, যতোই উপরে যাই নীল
-
আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে
-
কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
0
Updated: 1 month ago