'বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত' কার রচনা?
A
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্
B
মুহাম্মদ আবদুল হাই
C
মুনীর চৌধুরী
D
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
উত্তরের বিবরণ
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্: একজন জ্ঞানতাপস ভাষাবিদ ও সাহিত্যসাধক
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫–১৯৬৯) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের এক অসামান্য বাঙালি মনীষী—একাধারে ভাষাবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক এবং বহুভাষা-জ্ঞানসম্পন্ন বিদ্বান।
১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রতিভাধর ব্যক্তি, যিনি পরবর্তীতে 'জ্ঞানতাপস' উপাধিতে সমাদৃত হন। তাঁকে অনেকে 'চলিষ্ণু অভিধান' নামেও আখ্যায়িত করেন, তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের কারণে।
ড. শহীদুল্লাহ্ ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি—এই তিনটি ক্ষেত্রেই তাঁর প্রভাব ছিল অসামান্য। তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং সম্পাদনার কাজেও রেখেছেন অবদান। ‘আল-ইসলাম’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক এবং ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে তিনি তার সাহিত্যিক বিচক্ষণতা প্রমাণ করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মুসলিম বাংলার প্রথম শিশুপত্রিকা ‘আঙুর’, যা ছিল একটি নতুন দিগন্তের সূচনা। পাশাপাশি তিনি সম্পাদনা করেন ‘দি পীস’ (ইংরেজি মাসিক), ‘বঙ্গভূমি’ (বাংলা মাসিক) এবং ‘তকবীর’ (পাক্ষিক) পত্রিকা।
বাংলা ভাষা ও জাতিসত্তা নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল গভীর এবং মানবিক। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর এক বিখ্যাত উক্তি:
“আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।”
এই বক্তব্য তাঁর অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মননচর্চার প্রতিফলন।
তাঁর রচনার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’, যা ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা ভাষার উৎস ও বিকাশ নিয়ে গবেষণালব্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
সিন্দবাদ সওদাগরের গল্প
-
ভাষা ও সাহিত্য
-
বাঙ্গালা ব্যাকরণ
-
দীওয়ান-ই-হাফিজ
-
শিকওয়াহ ও জওয়াব-ই-শিকওয়াহ
-
রুবাইয়াত-ই-উমর খয়্যাম
-
Essays on Islam
-
আমাদের সমস্যা
-
পদ্মাবতী
-
বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খণ্ড)
-
বিদ্যাপতি শতক
-
বাংলা আদব কী তারিখ
-
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
-
কুরআন শরীফ
-
অমরকাব্য
-
সেকালের রূপকথা
তাঁর সম্পাদিত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান এবং ড. মুহম্মদ আবদুল হাই-এর সঙ্গে যৌথভাবে রচিত “Traditional Culture in East Pakistan” (১৯৬১) গ্রন্থ দুটি গবেষণাক্ষেত্রে অনন্য অবদান হিসেবে বিবেচিত।
উৎস: বাংলাপিডিয়া এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।

0
Updated: 2 months ago
কোনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচতি গ্রন্থ?
Created: 2 months ago
A
বিষের বাঁশী
B
বন্দীর বন্দনা
C
সন্দ্বীপের চর
D
রূপসী বাংলা
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘বিষের বাঁশী’ বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী সংযোজন। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে (আগস্ট, ১৯২৪) এই কাব্যগ্রন্থটি কবি নিজ উদ্যোগে প্রকাশ করেন।
প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে—এই কাব্যই নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধকৃত রচনা। দীর্ঘ ২১ বছর পর, ১৯৪৫ সালের ২৭ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
এই কাব্যে নজরুলের কাব্যিক বলিষ্ঠতা, উদ্দাম যৌবনের শক্তি, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক প্রতিচিন্তা ও গীতিময় প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে। ‘বিষের বাঁশী’-র কবিতাগুলোর অন্তর্নিহিত ভাবধারা মূলত উদারনৈতিক চেতনায় গঠিত।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও কবি:
-
‘বন্দীর বন্দনা’ রচনা করেছেন বুদ্ধদেব বসু।
-
‘সন্দ্বীপের চর’ কাব্যগ্রন্থের কবি হলেন বিষ্ণু দে।
-
আর ‘রূপসী বাংলা’ রচনা করেছেন স্বনামধন্য কবি জীবনানন্দ দাশ।
কাজী নজরুল ইসলাম: এক বিদ্রোহী আত্মার নাম
বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ চেতনার এক অগ্রদূত। তাঁর জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, অর্থাৎ ২৪ মে ১৮৯৯ সালে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। শৈশবে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘দুখু মিয়া’ নামে।
বাংলা সাহিত্যে তিনি পরিচিত ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে, যিনি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কলমের মাধ্যমে রুখে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি আধুনিক বাংলা গানের ভুবনে তাঁর অবদান তাঁকে এনে দিয়েছে ‘বুলবুল’ উপাধি।
উৎস: বাংলা ভাষা সাহিত্য জিজ্ঞাসা (সৌমিত্র শেখর) এবং বাংলাপিডিয়া।

0
Updated: 2 months ago
'কাঁঠালপাড়া'য় জন্মগ্রহণ করেন কোন লেখক?
Created: 1 month ago
A
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
B
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
C
কাজী ইমদাদুল হক
D
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
-
তিনি ১৮৩৮ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
-
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক এবং বাংলা নবজাগরণের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
-
তাকে বাংলা উপন্যাসের পিতা বলা হয়।
-
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ললিতা তথা মানস’ ১৮৫৬ সালে প্রকাশিত হয়।
-
প্রথম উপন্যাস ‘রাজমোহনস ওয়াইফ’ ইংরেজিতে লিখিত।
-
বাংলা সাহিত্যের প্রথম সফল উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ১৮৬৫ সালে তিনি রচনা করেন।
-
তার বিখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাস হলো — আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী, এবং সীতারাম।
-
তিনি ১৮৯৪ সালে মারা যান।
তার অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে:
কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারানী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ ইত্যাদি।
তার লেখা প্রবন্ধের কিছু নাম:
লোকরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, বিবিধ সমালোচনা, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন ইত্যাদি।
অন্য কিছু উল্লেখযোগ্য লেখক:
-
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
-
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩) কবি ও রাজনীতিবিদ, ১৯১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্ম।
-
কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালে খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর ও বাংলাপিডিয়া।

0
Updated: 1 month ago
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীনতম মুসলমান কবি-
Created: 3 months ago
A
শাহ মুহম্মদ সগীর
B
সাবিরিদ খান
C
শেখ ফয়জুল্লাহ
D
মুহাম্মদ কবীর
শাহ মুহম্মদ সগীর
-
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম মুসলিম কবি হিসেবে শাহ মুহম্মদ সগীর সুপরিচিত।
-
তিনি পঞ্চদশ শতকের কবি ছিলেন।
-
গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনামলে তিনি সাহিত্যচর্চা করেন।
-
বাংলা সাহিত্যে অনুবাদ কাব্য এবং রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
-
তাঁর শ্রেষ্ঠ অনুবাদ রচনা “ইউসুফ-জোলেখা”।
🔹 ইউসুফ-জোলেখা কাব্য:
-
“ইউসুফ-জোলেখা” একটি রোমান্টিক কাহিনিনির্ভর কাব্য, যা শাহ মুহম্মদ সগীর রচনা করেন।
-
এই কাব্য রচনার সময়কাল হিসেবে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
-
ইউসুফ ও জোলেখার প্রেমকাহিনী বাইবেল ও কোরআনে বর্ণিত। ইরানী কবি ফেরদৌসিও এ বিষয়ে কাব্য রচনা করেছেন।
-
তবে শাহ মুহম্মদ সগীর মূলত কোরআন ও ফেরদৌসির কাব্য থেকেই কাহিনির উপাদান সংগ্রহ করেন; বাইবেলের প্রভাব এখানে অনুপস্থিত।
-
তাঁর রচনাটি বাংলা সাহিত্যে এই বিষয়কে প্রথমবার উপস্থাপন করে এবং পরবর্তী অনেক কবির অনুপ্রেরণার উৎস হয়। যেমন— আব্দুল হাকিম ও শাহ মুহম্মদ গরীবুল্লাহ পরবর্তীতে একই নামে কাব্য রচনা করেন, কিন্তু পথিকৃৎ ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীরই।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর/বাংলাপিডিয়া

0
Updated: 3 months ago