'কবর' নাটক কার রচনা?
A
শহীদুল্লাহ কায়সার
B
জহির রায়হান
C
মুনীর চৌধুরী
D
সত্যেন সেন
উত্তরের বিবরণ
বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিকী নাটক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। এটি মূলত রচিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল পটভূমিতে।
লেখক নিজেই তখন কারাগারে বন্দি। সেই বন্দিদশায়, ১৯৫৩ সালে কারাগারে থাকা রাজবন্দিদের সহায়তায় প্রথম অভিনীত হয় এই নাটকটি। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
কাহিনির সারসংক্ষেপ
Irwin Shaw-এর বিখ্যাত নাটক "Bury The Dead" (১৯৩৬) অবলম্বনে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ‘কবর’ নাটকটি নির্মিত। এতে দেখা যায়, ভাষা আন্দোলনের এক মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহতদের মৃতদেহ শহরের বাইরে গভীর রাতে গোপনে কবরস্থ করতে আনা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেয় এক পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজ এবং তার সহযোগী এক নেতা, যার নাম নাটকে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে মিছিলে নিহত এসব আন্দোলনকারীর মৃতদেহ এতটাই বিকৃত যে, ধর্মীয় প্রথা মেনে দাফন না করে তারা একত্রে মাটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় গোর খোদক এবং এক পাগল, যিনি নিজেকে মুর্দা ফকির হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, এ লাশগুলো শহীদের—তাদের কবর দেওয়া যাবে না। নাটকের এক মোক্ষম মুহূর্তে দেখা যায়, মৃতদেহগুলো জীবন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেয়: “আমরা কবরে যাব না।” এই দৃশ্য দেখে ইন্সপেক্টর ও নেতা দুজনেই আতঙ্কে পালিয়ে যায়।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরী পরিচিতি
মুনীর চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বলিষ্ঠ বক্তা। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, মানিকগঞ্জ শহরে। প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
তাঁর মৌলিক নাটকসমূহ:
-
রক্তাক্ত প্রান্তর
-
চিঠি
-
কবর
-
দণ্ডকারণ্য
অনুবাদ নাটকসমূহ:
-
কেউ কিছু বলতে পারে না
-
রূপার কৌটা
-
মুখরা রমণী বশীকরণ
তথ্যসূত্র:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর
বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 3 months ago
'প্রভাবতী সম্ভাষণ' কার রচনা?
Created: 3 months ago
A
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
C
রামমোহন রায়
D
কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রভাবতী সম্ভাষণ: বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম মৌলিক রচনা
বাংলা গদ্য সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন হলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’। এটি কেবল বাংলা ভাষার প্রথম মৌলিক গদ্য রচনাই নয়, বরং একটি গভীর শোকগাথাও, যা লেখকের মনের আবেগের নিখুঁত প্রতিফলন। প্রিয় বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা প্রভাবতীর অকাল মৃত্যু বিদ্যাসাগরের মনে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল, তারই আবেগঘন বহিঃপ্রকাশ এই রচনাটি।
ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, প্রভাবতীর মৃত্যু বিদ্যাসাগরকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়, এবং সেই বেদনাই তাঁকে এ লেখাটি রচনার প্রেরণা দেয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: বাংলা নবজাগরণের অগ্রপথিক
-
জন্ম: ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে।
-
মৃত্যু: ২৯ জুলাই ১৮৯১, কলকাতায়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
-
তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ (১৮৪৭), যা বাংলা গদ্য রচনায় এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। এই বইতেই তিনি বাংলা ভাষায় প্রথমবারের মতো যতি বা বিরাম চিহ্নের ব্যবহার প্রবর্তন করেন।
-
‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ তাঁর রচিত এমন এক মৌলিক গ্রন্থ, যা বাংলা গদ্যের আদিতে মানবিক আবেগ ও ভাষার সৌকর্যের মেলবন্ধন ঘটায়।
-
তাঁর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ব্রজবিলাস’ এবং ‘রত্নপরীক্ষা’।
তথ্যসূত্র:‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ - ড. সৌমিত্র শেখর, ‘বাংলাপিডিয়া’
0
Updated: 3 months ago
'ইউসুফ-জোলেখা' প্রণয়কাব্য অনুবাদ করেছেন-
Created: 3 months ago
A
দৌলত উজির বাহরাম খান
B
মাগন ঠাকুর
C
আলাওল
D
শাহ্ মুহম্মদ সগীর
ইউসুফ-জোলেখা কাব্য
• ইউসুফ-জোলেখা’ শাহ মুহম্মদ সগীর রচিত কাহিনি কাব্যগ্রন্থ যা রোম্যান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রথম কাব্য।
• গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে এ কাব্যর রচনা হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে।
• বাইবেল ও কোরানে ইউসুফ-জোলেখার কাহিনি বর্ণিত আছে। ইরানের কবি ফেরদৌসিও এই নামে কাব্য রচনা করেছেন। সগীর বাইবেল পড়েন নি। তিনি কোরান ও ফেরদৌসির কাছে থেকেই কাহিনিসূত্র গ্রহণ করে ইউসুফ ও জোলেখার প্রণয়কাহিনি লেখেন।
• পরবর্তীতে মধ্যযুগের আরো অনেক কবি ইউসুফ জুলেখা নাম দিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। যেমন- ইউসুফ জুলেখা নিয়ে কাব্য রচনা করেন আব্দুল হাকিম এবং শাহ মুহম্মদ গরীবুল্লাহ। তবে এই কাব্য শাহ মুহাম্মদ সগীরই প্রথম লেখেন।
------------------------------
• শাহ মুহম্মদ সগীর:
- মধ্যযুগের তথা বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর।
- তিনি পনের শতকের কবি ছিলেন।
- গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে তিনি কাব্য রচনা করেন।
- অনুবাদ সাহিত্য বা রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রথম কবি - শাহ্ মুহম্মদ সগীর।
- শাহ মুহম্মদ সগীরের শ্রেষ্ঠ অনুবাদকর্ম ইউসুফ-জোলেখা। এটি একটি রোমান্টিক প্রনয়োপাখ্যান।
- ইউসুফ-জোলেখা কাব্যগ্রন্থের রচনাকাল অনুসারে এটি রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রথম কাব্য এবং শাহ মুহম্মদ সগীর এই ধারার প্রথম কবি।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর এবং বাংলাপিডিয়িা।
0
Updated: 3 months ago
'আবোল-তাবোল' কার লেখা?
Created: 3 months ago
A
উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী
B
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
C
সুকুমার রায়
D
সত্যজিৎ রায়
'আবোল-তাবোল'-এর রচয়িতা সুকুমার রায়
বাংলা শিশুসাহিত্যের এক অনন্য নাম সুকুমার রায়। তিনি ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ ও প্রযুক্তিনিপুণ ব্যক্তিত্ব। এই বিশিষ্ট রায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার মসুয়া গ্রামে।
সুকুমার রায় শুধু একজন কবিই নন, ছিলেন ব্যঙ্গ-রসিকতার এক নিপুণ কারিগর। তাঁর পুত্র সত্যজিৎ রায় পরবর্তীতে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার হিসেবে অস্কার লাভ করেন।
সাহিত্যকর্মসমূহ:
সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম মূলত কিশোর ও শিশু পাঠকদের জন্য হলেও প্রাপ্তবয়স্করাও তাঁর রচনায় বিমোহিত হন।
কবিতা সংকলন:
-
আবোল-তাবোল (ব্যঙ্গ ও কল্পনাপ্রবণ ছড়ার এক অমর সংকলন)
-
খাই খাই (খাবার নিয়ে মজার ছড়াসমূহ)
গল্প ও সংকলন:
-
হযবরল – এক স্বপ্নময় ও রহস্যঘেরা গল্প
-
পাগলা দাশু – কৌতুক ও ব্যঙ্গ-রসের সংমিশ্রণে ভরপুর একটি গল্প সংকলন
নাট্যকর্ম:
-
চলচিত্তচঞ্চরী – সমাজ ও মনস্তত্ত্বভিত্তিক নাটক
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা:
-
অবাক জলপান
-
লক্ষণের শক্তিশেল
-
হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি
-
ঝালাপালা ও অন্যান্য নাটক
-
বহুরূপী
সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্মে রস, ছন্দ, ব্যঙ্গ ও কল্পনার এক অপরূপ মিশ্রণ রয়েছে যা বাংলা সাহিত্যে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রিয়।
উৎস:
ড. সৌমিত্র শেখর সম্পাদিত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা গ্রন্থ এবং ‘হ-য-ব-র-ল’ গ্রন্থের ভূমিকা।
0
Updated: 3 months ago